উপস্থিত সবাই কিছুটা সময়ের জন্য যেন ফিরে গেলেন মোগল আমলে। যারা কিছুটা ইতিহাস জানেন তাদের নিশ্চয়ই শিহরণ খেলে গেছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। সকালের সোনালি আলোয় ঝলমল করছিল লালবাগ কেল্লার আঙিনা। মোগল আমলের স্থাপত্যশৈলীতে ঘেরা প্রাচীন এই দুর্গ যেন এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকল। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে হয়তো এটাই প্রথম। আন্তর্জাতিক সিরিজের ট্রফি উন্মোচিত হলো একটি প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের সামনে-লালবাগ কেল্লায়। স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল থাকবে অনেকদিন।
সকাল ১০টার মধ্যেই কেল্লায় পৌঁছে গিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। জাতীয় দলের অনুশীলন থাকায় তাকে দিনের সূচিতে সামঞ্জস্য রেখে একটু তাড়াতাড়িই আসতে হয়। ম্যাচ জার্সিতে প্রস্তুত মিরাজ অপেক্ষায় ছিলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক শাই হোপের। হোপ আসার পরই শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। উন্মোচন শেষে মিরাজ সোজা চলে যান অনুশীলনে, আর হোপ ফেরেন হোটেলে।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে এই ঐতিহাসিক স্থানে এক অনন্য আয়োজনে মুখোমুখি হলেন বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়করা। পরী বিবির মাজারের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেহেদী হাসান মিরাজ ও শাই হোপ একসাথে উন্মোচন করেন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি। সূর্যের আলোর ঝিলিকে সোনালি ট্রফির দীপ্তি যেন আভা ছড়াচ্ছিল দুই দলের আশা-আকাক্সক্ষায়ও। বিসিবি এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই ব্যতিক্রমী ইভেন্ট শুধু ক্রিকেটপ্রেমীদেরই নয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনুরাগীদেরও মুগ্ধ করেছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বৃহৎ মঞ্চে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট।
ট্রফি উন্মোচনের এই অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে মিরাজ ব্যক্তিগতভাবেও ছিলেন দারুণ উচ্ছ্বসিত। প্রথমবারের মতো লালবাগ কেল্লায় এসেই মুগ্ধ হয়ে পড়েন এর স্থাপত্য ও ইতিহাসে। জানান, ‘এত সুন্দর একটা জায়গা আমি আগে কখনো দেখিনি। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।’
বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বেলা দেড়টায়। সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচ ২১ ও ২৩ অক্টোবর একই ভেনুতে একই সময়েই শুরু হবে।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার শুরু হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এই ম্যাচ দিয়ে দুই বছরের বেশি সময় পর মিরপুরে ফিরছে ওয়ানডে ক্রিকেট। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের পর আর এই মাঠে হয়নি ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচের লড়াই।
এবার এই সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিশোধের মিশনও। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। ফিরতি সিরিজে এবার প্রতিশোধের সুযোগ মিরাজদের। আবার সব মিলিয়ে দুই দলের ১২টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অবস্থান সমানে সমান। দুই দেশই সমান ছয়টি করে সিরিজ জিতেছে। আজ থেকে শুরু হওয়া সিরিজটি দুই দলের জন্যই এগিয়ে যাওয়ার মিশন।
৮০ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে আইসিসির ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে ৯ নম্বরে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে তাদের ঠিক নিচেই বাংলাদেশ। ২০২৭ সালে সাউথ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায় হতে যাওয়া বিশ্বকাপ সরাসরি খেলতে সিরিজটা দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিততে পারলে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার টিকিট পাওয়ার খুব কাছে চলে যাবে ক্যারিবীয়রা।
সাম্প্রতিক সময়ে দল হিসেবে একেবারেই ছন্দে নেই বাংলাদেশ। নিজেদের সবশেষ চার ওয়ানডে সিরিজের সব ক’টিতেই হেরেছে তারা। এমন কী সবশেষ ১২ মাসে খেলা ১৪ ওয়ানডের মাত্র দুইটি ম্যাচে জয় পেয়েছেন মিরাজরা। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ।
গত বছরের নভেম্বর থেকে ১৪ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দু’টিতে জিতেছে টাইগাররা। সর্বশেষ চার সিরিজ বিদেশের মাটিতে হারলেও ২০২৪ সালের মার্চে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা। ওয়ানডে ক্রিকেটে মুখোমুখি লড়াইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ৪৭ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ২১টিতে জিতেছে টাইগাররা। হেরেছে ২৪টিতে। বাকি দুই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে হতাশাজনক ফলাফল সত্ত্বেও বাংলাদেশ দলে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সৌম্য সরকারকে। আফগান সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েছেন নাইম শেখ এবং পেসার নাহিদ রানা।



