এ, টি, এম, ফরহাদ নান্নু ভাঙ্গা ( ফরিদপুর)
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার গঙ্গাধরদী গ্রামে নীরবে ঘটছে এক ইতিবাচক পরিবর্তনের গল্প। এক সময় সংসারের টানাপড়েনে দিন কাটানো নারীরা এখন ঘরে বসেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। দেশী মুরগি পালন করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন তারা।
‘স্টাডি অন রুরাল ফ্যামিলি চিকেন এগ্রো-এন্টারপ্রাইজেস মডেলিং প্রকল্পে’র সহায়তায় বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট বিএলআরএইর পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টার, সাভার, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য গ্রামীণ নারীদের বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে দেশী মুরগি পালনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা।
গঙ্গাধরদী গ্রামে মোট ১২০ জন নারীকে নিয়ে চারটি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ‘গোলাপ গ্রুপ’-এর সভানেত্রী রানু বেগম, সাধারণ সম্পাদক মিনা বেগম এবং সদস্য ফারজানা আরিফা আক্তার, পারভিন আক্তার, রেবেকা ও সুমি বেগম এখন সাফল্যের দৃষ্টান্ত।
খামারীরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ, উঠান বৈঠক এবং মাসিক সঞ্চয়ের পাশাপাশি শিখছেন বিজ্ঞানসম্মতভাবে দেশী মুরগি পালন, সুষম খাদ্য প্রদান, ঘরের আশপাশের অপ্রচলিত খাবার যেমন শাকসবজি, পোকামাকড়, রান্নার উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি ব্যবহার, নিয়মিত টিকা ও ওষুধ প্রয়োগ।
বিএলআরআই প্রতিটি খামারিকে দিয়েছে উন্নত জাতের দেশী মুরগি, মুরগির ঘর, ইনকিউবেটর, ভ্যাকসিন, প্রশিক্ষণ ও ওষুধপত্র। অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙ্গার বহু নারী এখন প্রতি মাসে ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এ ব্যাপারে কথা হয় রানু বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ‘আগে সংসারে টানাটানি ছিল, এখন মুরগির ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করে খরচ মেটাতে পারি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা আর চিকিৎসার খরচও এখন আমার হাতেই।’ মুরগির ডিম ও মাংসের সহজলভ্যতায় পরিবারের পুষ্টির ঘাটতি কমেছে। এখন শিশুরা নিয়মিত টিফিনে ডিম খেতে পারে।
প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন ‘এ প্রকল্পের লক্ষ্য হলো গ্রামীণ নারীদের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে দেশী মুরগি পালনে সক্ষম করে তোলা। রানু বেগমদের সফলতা আমাদের অনুপ্রেরণা।’
এ ছাড়া ভাঙ্গা আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শমীম আহমেদ এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রেজাওয়ানুল ইসলাম মাঠপর্যায়ে খামারিদের নিয়মিত সহায়তা দিচ্ছেন। দেশী মুরগি পালন এখন শুধু একটি পেশা নয়, বরং গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির এক টেকসই মডেল। ভাঙ্গার রানু বেগমদের এ সাফল্য প্রমাণ করে ইচ্ছা, পরিশ্রম ও প্রশিক্ষণ থাকলে নারীরাই বদলে দিতে পারেন গ্রামের অর্থনীতির চিত্র।
ড. শামীম আহমেদ ও রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, সঠিক প্রশিক্ষণ ও যতেœ দেশী মুরগি পালন একটি লাভজনক উদ্যোগ। রানু বেগমের সাফল্য দেখে এলাকার অন্য নারীরাও এ কাজে যুক্ত হচ্ছে। রানু বেগমরা প্রমাণ করছেন ইচ্ছা পরিকল্পনা থাকলে গ্রামীন নারীরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
 


