ফের নির্মিত হচ্ছে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহের তীর ঢাবি শিক্ষার্থীর দিকে

‘‘মানুষের পরিশ্রম আর আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাব, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে।’’

হারুন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Printed Edition
চারুকলায় নতুন করে তৈরি হচ্ছে ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি
চারুকলায় নতুন করে তৈরি হচ্ছে ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি |নয়া দিগন্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রার মূল মোটিফ ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ ফের তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই দায়িত্ব শিল্পীদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। এর আগে, গত ১২ এপ্রিল ভোর পৌনে ৫টার দিকে ফ্যাসিবাদের মোটিফে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এতে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিসহ পাশে থাকা শান্তির পায়রার মোটিফ পুড়ে যায়। এ নিয়ে ফ্যাসিবাদের মোটিফ থাকবে কি থাকবে না এ নিয়ে সংশয় শুরু হয়েছিল সবার মনে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের হওয়া মিটিংয়ে মোটিফ ফের নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদিও এটি কর্কশীটের দ্বারা তৈরি হবে।

গতকাল সকালে সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, কর্কশীট দিয়ে মোটিফ বানানোর কাজ শুরু হয়েছে। দিনরাত সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। মুখাকৃতিটি প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

ভিসি বলেন, আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সেখানে বাধা এসেছে। এ ধরনের কাজে বাধা আসেই, ষড়যন্ত্র থাকে। তবে মানুষের পরিশ্রম আর আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাব, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে। এ কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা এখন একটি জাতীয় দায়িত্ব পালন করছি এবং চাই সবাই আমাদের পাশে থাকুক।

চারুকলায় ইতোমধ্যেই প্রতিকৃতিটি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছে গেছে। শিল্পীরা দ্রুততম সময়ে কাক্সিক্ষত মোটিফটি তৈরির জন্য ব্যস্ত রয়েছেন। ককশিট দিয়ে প্রতিকৃতি গড়ে তোলা সম্ভব কি-না, সে বিষয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, এক মাস ধরে তৈরি করা প্রতিকৃতি তো একদিনে বানানো সম্ভব নয়। তবে শিল্পীরা কীভাবে, কতটা করতে পারেন, তা সময়ই বলে দেবে। আমরা বিষয়টি সম্পূর্ণ শিল্পীদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। তারা দফায় দফায় বসছেন, পরিকল্পনা করছেন। তারাই সবচেয়ে ভালো জানেন কী করবেন।

নববর্ষের শোভাযাত্রার এসব শিল্পকর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট ঢাবি চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান লিমন জানান, এটি অন্তত এক মাসের একটা কাজ ছিল। সেটি মুহূর্তেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমার তো ধারণা এই চারুকলা অনুষদে ফ্যাসিজমের সাথে যাদের ওঠাবসা ছিল তারাই এ কাজটি করেছে। তবে আনন্দ শোভা যাত্রায় ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতির ব্যাপারে আমরা বিকল্প চিন্তাভাবনাও করছি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

এর আগে, শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রার অগ্রগতি দেখতে চারুকলা পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, এই আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে আমি স্যালুট জানাই। তারা গত এক মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। “ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি” নাশকতার মাধ্যমে পুড়িয়ে ফেলে শিল্পীদের স্পিরিট দমানোর চেষ্টা করলেও আমি এসে দেখছি শিল্পীদের স্পিরিট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আশা করব দেশবাসী দারুণ একটি শোভাযাত্রা করবে। দেশবাসীকে আহ্বান জানাই শোভাযাত্রায় অংশ নেয়ার জন্য।

ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে আগুন দেয়া ব্যক্তি হিসেবে সন্দেহের তীর ঢাবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ থেকে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য নির্মিত ‘ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি’ আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। গতকাল এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন হিসেবে ঢাবির এক শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রাথমিক অনুমান বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, সন্দেহের তালিকায় থাকা ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি সূর্যসেন হল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী, হল ও ডিপার্টমেন্ট বয়কটের শিকার। একাধিক সহপাঠি তাকে চিহ্নিতের ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন। এর আগেও নাকি তিনি ঢাবির বিজয় একাত্তর হলের সামনে থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের স্লোগান দিয়েছেন। তাকে ১৫ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করতে দেখা গেছে ।

সহকারী প্রক্টর ও আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আরবি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর (‘র’ আদ্যাক্ষর) ছবি পেয়েছি। বিষয়টি ভেরিফাই করার চেষ্টা করছি। যদিও তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতে পারছি না। ছবিটি নিয়ে বিভাগে কাজ চলছে। চেষ্টা করছি বিষয়টি অতি দ্রুত নিশ্চিত করতে।