নয়া দিগন্ত ডেস্ক
নোয়াখালীর কবিরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরো নয়জন।
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় ট্রাকচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার উপজেলার কবিরহাট-বসুরহাট সড়কের আলিয়া মাদরাসার সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে জেলা শহর মাইজদী থেকে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে বসুরহাটের উদ্দেশে একটি সিএনজি রওনা দেয়। যাত্রাপথে সিএনজিটি উপজেলার কবিরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কবিরহাট- বসুরহাট সড়কের আলিয়া মাদরাসার সামনে পৌঁছলে সিএনজির সামনের এক্সেল ভেঙে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের উল্টো পাশে চলে যায়। ওই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাক সিএনজিকে চাপা দিয়ে অনেক দূর নিয়ে যায়। এতে সিএনজি চালকসহ চারজন যাত্রী ঘটনাস্থলে মারা যান। দুইজনকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে। নিহতরা হলো- সিএনজিচালক খোকন (৪৬) সিএনজি আরোহী শিক্ষার্থী তানিম হাসান (২৬), মো: সুমন (৩৩) ও শাহাদাত হোসেন (৩৬)। তবে তাৎক্ষণিক এক নারীসহ দু’জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় অটোরিকশার যাত্রীসহ চালক নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার দেওহাটা ওরাল সেতুর সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের রানাশাল গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে অটোচালক রহিজ সিকদার (৪৬) ও অটোর যাত্রী রশিদ দেওহাটা গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আব্দুল হামিদ (৬০)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইলগামী যাত্রীবাহী একটি বাস মহাসড়কের দেওহাটা ওভারব্রিজ দিয়ে পার হয়ে যাওয়ার সময় অটোচালক যাত্রীসহ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে রং সাইডে চলে যায়। এ সময় দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাস অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে অটোচালক ও যাত্রী দুইজনেই গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম পতেঙ্গা থানা এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মনজুর আলম (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী মারা গেছেন। তিনি পতেঙ্গার কাঠগর এলাকার শক্কুর আলমের ছেলে। সোমবার রাতে থানার কাঠগড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক নুরুল আলম আশেক জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় মনজুর আলমকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার অদূরে কদমতলী এলাকায় দু’টি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ২০-৩০ জন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী এনা পরিবহনের একটি বাস শায়েস্তাগঞ্জ থানার অদূরে কদমতলী এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা কুমিল্লাগামী রয়েল পরিবহনের একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। গুরুতর আহতদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ও মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট থেকে ঢাকাগামী এনা পরিবহনের একটি বাসের সাথে কুমিল্লা থেকে আসা রয়েল পরিবহনের বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে দু’জন মারা যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, গুরুতর আহতদের হবিগঞ্জ ও মাধবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে প্রেমিকের সাথে মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে সুমাইয়া (১৮) নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জমিদার ব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সুমাইয়া দৌলতদিয়া ঘাটের হোসেন মণ্ডলের পাড়ার মজিবর প্রামাণিকের মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুমাইয়া তার বন্ধু দৌলতদিয়া ঘাটের সাত্তার মেম্বার পাগার কিরোন প্রামাণিকের ছেলে মো: সজিব প্রামাণিকের মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে বের হন। মোটরসাইকেলটি দ্রুতগতিতে একে বেকে চলাকালে হঠাৎ পেছনের চাকায় সুমাইয়ার ওড়না পেঁচিয়ে যায়। এতে ভারসাম্য হারিয়ে তিনি সড়কে ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। পরে স্থানীয়রা তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে রাত ১২টার দিকে সুমাইয়ার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদি হয়ে আহলাদিপুর হাইওয়ে থানায় সজিব প্রামাণিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামি ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সুমাইয়ার মৃত্যু ঘটিয়েছে।
মোংলা খুলনা মহাসড়কে স্কুলশিক্ষকসহ নিহত ৩
মোংলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বাবুর বাড়ি নামক স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলশিক্ষকসহ মোটরসাইকেলের তিন আরোহী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, মৃত আব্বাস আলী ইজারাদারের ছেলে জামির ইজারাদার (৫৫), মৃত শেখ শাহাদাত হোসেনের ছেলে মিজান শেখ (৫৫), ও মনিন্দির হালদারের ছেলে হরিপদ হালদার (৬০)। তারা প্রত্যেকেই বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কালেখারবেড়ের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোংলা খুলনা মহাসড়কের চেয়ারম্যানের মোড় থেকে একটি রাজনৈতিক প্রোগ্রাম শেষে নিহত জামির ইজাদারের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে (বাগেরহাট হ- ১২৯৫৭১) তারা বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা খুলনাগামী একটি যানবাহন তাদের সজোরে ধাক্কা দিলে ছিটকে ঘটনাস্থলে তিনজনের মৃত্যু হয়।
এতে খুলনা মোংলা মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
নিহত জামির ইজারাদার রামপাল উপজেলার রাজনগর দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, অপর দু’জন স্থানীয় ব্যবসায়ী।
কাটাখালী হাইওয়ে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো: জাফর আহমেদ জানান, নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।



