পিএসকে পদোন্নতি দিতেই ২৪ ব্যাচের রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত

ঝুলে গেল অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি

শামছুল ইসলাম
Printed Edition

প্রশাসনে শিগগিরই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন ১২০ থেকে ১৪০ কর্মকর্তা। যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে দুই দফা বৈঠক করেছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)। চলতি সপ্তাহে আর একটি বৈঠক করেই যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির সম্ভাবনা থাকলেও এসএসবির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিব দেশের বাইরে যাওয়ায় সেটি আর হচ্ছে না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই কর্মকর্তা বিদেশ থেকে ফেরার পর আগামী মাসে এই ব্যাচের পদোন্নতি হতে পারে। জনপ্রশাসন সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জনপ্রশাসন সূত্র জানায়, অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির জন্য ২০ ব্যাচকে নিয়মিত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই ব্যাচে পদোন্নতির যোগ্য রয়েছেন ২৫৬ কর্মকর্তা। এ ছাড়া লেফট আউট, ইকোনমিক ও আদার্স মিলে পদোন্নতির যোগ্য রয়েছেন ৭০ কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে ৩২৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। বৈঠকে পদোন্নতির জন্য প্রত্যেক কর্মকর্তার কর্ম জীবনের সমস্ত নথিপত্র আলাদা আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরি জীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির বিষয়সহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

বিসিএস ২০ ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০০১ সালে যোগদান করলেও এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয় আওয়ামী শাসনামলে। এই নিয়োগে অর্থের বিনিময়ে ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। ফলাফল বাতিলের জন্য বঞ্চিতরা পিএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যান মোস্তফা চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে প্রথমে প্রেস ক্লাব ও পরে জাতীয় শহীদ মিনারে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে।

বিতর্কিতভাবে নিয়োগের পর গত ১৫ বছর প্রশাসন ক্যাডারকে দলীয় করণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে এই ব্যাচের কর্মকর্তারা। ২০১৮ সালের রাতের ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় নিয়ে আসায় ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তাকে ওএসডি এবং বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়।

এসব কর্মকর্তা এবার অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য তোড়জোর চালাচ্ছে তারা। এসএসবির সদস্য এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ম্যানেজের চেষ্টা করছেন। এই কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই রাতের ভোটের কারিগর। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে এই কর্মকর্তারাই ভোল পাল্টিয়ে নিজেদের এখন বঞ্চিত দাবি করতে শুরু করেছেন।

হাসিনার সুবিধাভোগী কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে উপদেষ্টার তদবির : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রভাবশালী এক উপদেষ্টার একান্ত সচিবকে পদোন্নতি দিতে পুরো প্রক্রিয়াটিই রিভিউ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন উপদেষ্টার একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে কর্মরত আছে। গত মার্চে নিয়মিত প্রক্রিয়ায় ২৪তম ব্যাচের পদোন্নতির ধারায় নাম ছিল না তার। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের এক মুখ্যসচিবের পিএস এবং ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে । গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির সভায় ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি রিভিউ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

গত ২৬ আগস্ট জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পুনর্গঠিত এই কমিটিতে সদস্যসচিব হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর আগে এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

পাশাপাশি পুনর্গঠিত কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিনকে কমিটির নতুন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব।

আলোচিত কর্মকর্তা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রভাবশালী এক উপদেষ্টার একান্ত সচিব। তিনি ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা হলেও গত মার্চে পদোন্নতির জন্য যোগ্য বিবেচিত হননি।

জনপ্রশাসন সূত্র জানায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিবের পিএস পদে দায়িত্ব পালন করার সুবাদে এই কর্মকর্তা ঢাকার পাশের গুরুত্বপূর্ণ এক জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ পান। তখন মন্ত্রিসভা বৈঠকে তার বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করেন সেই এলাকা থেকে নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী। এতে বিব্রত হয়ে সভা থেকে বের হয়েই অভিযুক্ত ডিসিকে (বর্তমানে উপদেষ্টার পিএস) প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এই অভিযোগের কারণেই ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ২ মাস আগে এই কর্মকর্তাকে ডিসি পদ থেকে প্রত্যাহার করে সরকার।

একই ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকায় এই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া না হলেও নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে ডিসি পদ থেকে প্রত্যাহারের ঘটনাকে এখন আওয়ামী লীগ বিরোধী কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে তার। এটাই উপদেষ্টাকে বুঝিয়ে নিজের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে চাইছেন আলোচিত এই একান্ত সচিব।