- এক বছরে নতুন করে ৭৯ হাজার ৭২৭টি বিও হিসাব শেয়ারশূন্য
- পরিচালন হচ্ছে না ২০ হাজার ৭৪টি বিও হিসাব
- ২ হাজার ৫২৮ জন প্রবাসী পুঁজিবাজার বিমুখ
- মূল্যসূচক থেকে পয়েন্ট কমলেও তারল্য বেড়েছে
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ধসিয়ে দেয়া পুঁজিবাজারের কোমড় এক বছরেও সোজা করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার মধ্যে অস্থিরতা ও চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে প্রতিবন্ধকতার কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আজো ফিরেনি। বিনিয়োগ আকর্ষণে আসেনি নতুন কোনো কিছু। ফলে আস্থাহীনতায় নতুন করে ৫৭ হাজার ৪০৬টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ব্যালেন্স শূন্য বা খালি হয়ে গেছে। শেয়ারহীন বিও হিসাব ৭৯ হাজার ৭২৭টি বেড়েছে গত এক বছরে। ২ হাজার ৫২৮ জন প্রবাসী বিনিয়োগকারী বাজার বিমুখ হয়েছে বলে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে। আর ঢাকা স্টকের তথ্য বলছে, উত্থান-পতনে দেশের পুঁজিবাজারে এখনো রক্তক্ষরণ চলছে। তবে মূল্য সূচক ২১০ পয়েন্ট হারালেও বাজারমূলধন ৩৬ হাজার কোটি টাকা ফিরেছে।
বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তি হলো ৭ আগস্ট। ওই সময় পর্যন্ত সিডিবিএলের হালনাগাদ তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের গত এক বছরে দেশের পুঁজিবাজারের তেমন কোনো অগ্রগতি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জিত হয়নি। উল্টো দর পতনের ¯্রােতে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ নিয়ে শঙ্কিত। যদিও বিও হিসাব খোলার সংখ্যা বেড়েছে ৬৬ হাজারের বেশি। বেড়েছে ব্যালেন্স শূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা। হাসিনা সরকারের পতনের পর দিন ৭ আগস্ট ব্যালেন্সশূন্য বিও হিসাব ছিল তিন লাখ ১২ হাজার ৮৭৭টি। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে আরো বিও হিসাব ৫৭ হাজার ৪০৬টি ব্যালেন্স শূন্য হওয়ায় এখন তিন লাখ ৭০ হাজার ২৮৩টিতে পৌঁছেছে ব্যালেন্স শূন্য বিও।
নিষ্ক্রিয় বিও বেড়েছে ১.২০ শতাংশ
গত এক বছরে ব্যবহার হয়নি এমন বিও হিসাব সংখ্যা আরো ২ হাজার ২৪৭টি বেড়েছে। ফলে ৭ আগস্ট সরকারের বর্ষপূর্তিতে ৬৪ হাজার ১২টিতে দাঁড়িয়েছে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাব। ৭ আগস্ট ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৭৬৫টি। শেয়ার আছে এমন বিও হিসাব বর্তমানে ১২ লাখ ১৪ হাজার ৭৩টি। গত ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট এই বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০টি। ফলে এক বছরে শেয়ারশূন্য হয়েছে ৭৯ হাজার ৭২৭টি বিও হিসাব। যেখানে গত ১ জানুয়ারিতে ছিল ১২ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৯টি।
সিডিবিএলের তথ্য থেকে আরো জানা গেছে, সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব খোলার পরিমাণ এক বছরে বেড়েছে। এই বৃদ্ধির সংখ্যা প্রায় ৬৬ হাজার। ৭ আগস্ট শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৪টি, ৭ আগস্ট ২০২৪ সালে ছিল ৭৯ লাখ ৮ হাজার ২৪৮টি।
বাজার ছাড়ার স্রোতেই স্থানীয় ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে প্রায় ১০ হাজার।
বর্তমানে বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৪৪ হাজার ৫৬৩টি। ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট ছিল ৪৭ হাজার ৮১টি। বর্তমান সরকারের এক বছরে বিদেশী ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ২ হাজার ৫১৮টি। বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ধারাবাহিকভাবে কমেছে। কারণ তারা আস্থা পাচ্ছে না। সার্বিকভাবে পুরুষ বিনিয়োগকারী এক বছরে কমেছে ১০ হাজার ৮৯৮ জন। আর মহিলা বিনিয়োগকারী ৯ হাজার ৫৬৬ জন। ব্যক্তি বিনিয়োগকারী কমেছে ২০ হাজার ৪৬৪ জন। যৌথ বিও কমেছে ১৯ হাজার ৬৪টি।
এক বছরে পুঁজিবাজারের চিত্র
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ধারাবাহিক দরপতনে হতাশায় আক্রান্ত বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রণক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কোনো উদ্যোগই বাজারে কাজে আসছে না। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় অস্তিরতা বাজারকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। চলতি বছরের শুরুতে বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা করেছিল কোনো ধরনের সুবাতাস বইবে বাজারে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, গত এক বছরে প্রধানসূচক ডিএসইএক্স ২১০ পয়েন্ট হারিয়েছে। প্রতিদিনের লেনদেন গড়ে ৬৯ কোটি টাকা কমেছে। লেনদেন এখনো হাজার কোটি টাকাকে অতিক্রম করে স্থির হতে পারেনি। বাজারমূলধন অনেকটাই কমেছিল। তবে এখন ৩৬ হাজার ২২ কোটি টাকা ফিরে আসায় বাজারমূলধনের আকার সাত লাখ ১৫ হাজার ৭৯ কোটি ২১ লাখ টাকায় অবস্থান করছে। আর শেয়ার হাতবদলের পরিমাণ ২৫ কোটির নিচেই রয়েছে।
সম্প্রতি এক পর্যালোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আমরা কাজ করছি। কিছু সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির তালিকা করে তাদের সাথে বসছি আমরা। সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ (ডিটারমাইন্ড)। ইনশাআল্লাহ ভালো ফল দেখব। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকা এবং সার্ভেইল্যান্স কার্যক্রম জোরদার করার কথাও বলেন তিনি।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা সরকার পতনে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারকাজ শুরু করলেও তার সুফল পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের বাজারে আস্থা ফেরাতে সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। বর্তমানে বাজারে সক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৭৮ লাখ থেকে কমে মাত্র সাড়ে ১৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। পটপরিবর্তনের পর বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এখনো বাজারে আস্থা ফেরাতে পারেনি সরকার। ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত এক দুই বছরে কোনো আইপিও বা প্রাথমিক শেয়ার আবেদন আসেনি বাজারে।