আবারো এক্সটেনশন চানর র‌্যাব ও এসবি প্রধান

আবু সালেহ আকন
Printed Edition

আওয়ামী লীগ আমলের ১৬ বছর চাকরিতে কোনো বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। কখনো পদোন্নতি আটকে যায়নি। ভালো ভালো পদায়নও পেয়েছেন। সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন, বিনিময়ে আওয়ামী লীগকে নানা সার্ভিসও দিয়েছেন। শেখ হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট আমলের অবসান ঘটলেও তারা কিন্তু ভালো অবস্থানেই আছেন। একজন র‌্যাবের প্রধান, আর অপরজন এসবি প্রধান। দু’জনেরই চাকরির মেয়াদকাল শেষ পর্যায়ে। এখন তারা আবার এক্সটেনশনের জন্য লবিং করছেন। এ নিয়ে পুলিশের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এরা আবারো এক্সটেনশন পেলে অনেক কর্মকর্তারই বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যাতে পুলিশ কর্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হবে হতাশা। যার প্রভাব পড়বে পুরো বাহিনীতে।

একেএম শহিদুর রহমান। বর্তমানে ডিজি র‌্যাব। ২০১৩ সালে নিয়মিত পদোন্নতিতে অতিরিক্ত ডিআইজি হন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল কমিশনার এডমিন হিসেবে পদায়ন পান। ২০১৬ সালে নিয়মিত পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে ডিআইজি হন। ডিআইজি হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং টেলিকমে পদায়ন পান। ২০২৪ সালের মে মাসে ১০ জন ডিআইজি সুপার নিউ মারারি এডিশনাল আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনিও তাদের মধ্যে একজন। ৫ আগস্টের পূর্বে তিনি এবং কৃষ্ণপদ রায় সুপার নিউ মারারি এডিশনাল আইজিপি থেকে নিয়মিত এডিশনাল আইজিপি পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টাসে পদায়ন পান। ৫ আগস্টের পরে ডিজি র‌্যাব হিসেবে পদায়িত হন। সেপ্টেম্বর ২০২৪ তিনি এক বছরের জন্য এক্সটেনশন পান এবং গ্রেড ওয়ান পান। আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৫ তার এক বছর এক্সটেনশনের মেয়াদ শেষ হবে। তিনি দ্বিতীয়বার এক্সটেনশন এর জন্য দরখাস্ত করেছেন।

গোলাম রসুল। অতিরিক্ত আইজিপি স্পেশাল ব্রাঞ্চ। পুলিশ একাডেমির ১০০ বর্ষপূর্তি পালনের ধারণা দেন পুলিশের নীতি নির্ধারকদের। সে সময় তিনি সারদার এসপি (এডমিন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং পুলিশ স্টাফ কলেজে বঙ্গবন্ধু কর্নারের উদ্বোধক ছিলেন। পুলিশের মাঝে বঙ্গবন্ধু নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করিয়েছেন তিনি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তার নেতৃত্বে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩৫ পৃষ্ঠার গবেষণা হয় যার শিরোনাম ছিল Bangabandhus Vision of Lwa Enforcement : Policing in Bangladesh। ১/১১ এর সময় সিটিএসবি তে দায়িত্ব পালনের সময় রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র হননের কাজে তিনি ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। ২০১৮ সালে পরবর্তী পদোন্নতি পাবার আশায় কামাল আবদেল নাসেরকে মুজিব শতবর্ষ পালনের আইডিয়া দেন। হাসিনাকে খুশি করতে সকল পুলিশ ইউনিটে মুজিব কর্নার বানানোর জন্য তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর মাধ্যমে হাসিনাকে প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ আছে। উনার সেই প্রস্তাবে দেশে-বিদেশে পুলিশসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানে মুজিব কর্ণার স্থাপন করা হয়।

কিছুদিন আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে ইমিগ্রেশন পার করিয়ে দেয়ার ঘটনা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজ উদ্যোগে সেপ্টেম্বর/২০২২ সালে “বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’’ নামে সংস্থার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। সে সময় তার সাথে স্টাফ কলেজে কাজ করতো ৩৫ ব্যাচের এএসপি মমিনুল। যিনি বর্তমানে এসবিতে তার স্টাফ অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

আগামী ৩১ আগস্ট গোলাম রসুলের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তিনিও এক্সটেনশনের জন্য লবিং করছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এভাবে চাকরির মেয়াদ এক্সটেনশন হলে নিচের অনেক কর্মকর্তাই বঞ্চিত হবে। তারা কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবেন। যা পুলিশিং কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়বে।