আহসান হাবীব শিবচর (মাদারীপুর)
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের গাফিলতিতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ও পাঁচ্চর ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম চরম জলাবদ্ধতায় ভুগছে। কালভার্টের মুখ বন্ধ থাকায় প্রায় ১৬০ একর ফসলি জমি বছরের অর্ধেক সময় পানির নিচে থাকে। পাঁচ বছর ধরে এ অবস্থার ফলে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষকরা পড়েছেন চরম আর্থিক সঙ্কটে। কালভার্টের মুখ খুলে খালের সাথে সংযোগ দিলে তাদের জমি আবারো ফসলের উপযোগী হবে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রেললাইন নির্মাণের সময় কালভার্টের মুখ অত্যন্ত সরু করে দেয়া হয়। ফলে শিবচরের মাদবর কান্দি, বালাকান্দি, হাজী লেদুখান চরকান্দি, পুরান কান্দি, ফরাজী কান্দি ও শিকদার কান্দিসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। ধান রোপণের পর পানি না নামায় জমি ডুবে যায়; আবার রবি মৌসুমে পানি শুকাতে দেরি হওয়ায় আলু, গম, রসুন, ধনিয়া, সরিষা বা শাকসবজির চাষ করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফসলি জমি এখন স্থায়ী বিলের রূপ নিয়েছে।
গ্রামবাসী জানায়, ২০২১ সালে রেললাইন নির্মাণকালে প্রকল্পের কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কাজ শেষে কালভার্টের মুখ খুলে পাঁচ্চর খালের সাথে সংযোগ দেবেন। কিন্তু কাজ শেষে তারা তা করেননি। বর্তমানে রেললাইনের নিচে পানি নিষ্কাশনের পথ পুরোপুরি বন্ধ। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জমির পানি বসতবাড়ি পর্যন্ত ঢুকে পড়ে। শিকদার কান্দির কৃষক সুলাইমান শিকদার বলেন, আমার সাত বিঘা জমিতে তিন মৌসুমে ধান, গম, ধনিয়া, কালোজিরা, মশুরি, সবজি সবই হতো। এখন শুধু পানি আর কাদা। আগে ২০০ মণ ধান পেতাম, এখন চাল কিনে খেতে হয়।
অন্য কৃষক আব্দুল হাই লপ্তি বলেন, রেললাইন হয়েছে, কিন্তু আমাদের জীবন থেমে গেছে। পাঁচ-ছয় বছর ধরে জমি পানির নিচে। সরকার যদি খালের মুখ খুলে দিত, আমরা আবার চাষাবাদে ফিরতে পারতাম। স্থানীয় কৃষকরা জানান, টানা জলাবদ্ধতায় তাদের ফসলি জমি অনুর্বর হয়ে যাচ্ছে। অনেকে চাষাবাদ ছেড়ে দিনমজুরি বা ভিন্ন পেশায় ঝুঁকছেন। এমনকি বৃষ্টির পানি আটকে থাকায় সড়ক যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, রেললাইন নির্মাণের সময় খালের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১৬০ একর জমিতে পানি জমে রয়েছে। কৃষকরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত। উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিবচর উপজেলা ইউএনও এইচ এম ইবনে মিজান জানান, রেল প্রকল্পের কালভার্ট দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্বে কালভার্ট দিয়েছি। ওই স্থানেও একটি কালভার্ট রয়েছে, তবে স্থানীয়দের বাধার কারণে সেটি নদীর সাথে সংযুক্ত করা যায়নি। ইউএনওর সাথে আলোচনা হয়েছে, খুব দ্রুতই সংযোগের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
 


