- তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান বাড়ছে
- পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা মোবাইল ফোন কোম্পানির ওপর করহার বাড়তে পারে
পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে আসন্ন বাজেটে এখাতে একগুচ্ছ প্রণোদনা দেয়ার চিন্তা করছে সরকার। এই প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে- পুঁজিবাজারে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর ছাড় বাড়ানো এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ওপর করছাড় দেয়া। বিশেষ করে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোতে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার জন্য কর রেয়াতসহ আরো কিছু প্রণোদনা দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে করের হার বাড়ানো হতে পারে পুঁজিবাজারে বাইরে থাকা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর ওপর এবং করের ব্যবধানও বাড়ানো হতে পারে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ওপর। অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসায়িত করতে মোটদাগে তিনটি পরিকল্পনার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে- এগুলোর মধ্যে- পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ করা। ব্যাংকিংখাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সীমিতকরণে পদক্ষেপ নেয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে প্রতিষ্ঠাকরণে এই বাজারকে দৃঢ়ভিত্তিতে দাঁড় করানোর কৌশল নির্ধারণ করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে থাকা কোম্পানিগুলোর ভিন্ন ভিন্ন করহার বিদ্যমান রয়েছে। যেমন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) এর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে তার ওপর করহার রয়েছে ২০ শতাংশ। অন্য দিকে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ বা ১০ শতাংশের কম শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে করহার রয়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ। একইভাবে আয়কর আইন, ২০২৩ এ সঙ্ঘায়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা পাবলিকলি ট্রেডেড নয় তাদের ওপর করভার রয়েছে ২৫ শতাংশ এবং একক ব্যক্তি কোম্পানিতে করহার রয়েছে ২০ শতাংশ। অন্য দিকে পাবলিকলি ট্রেডেড (পুঁজিবাজারে আছে)- ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) করহার রয়েছে ৩৭ দশমিক ৫ শতংশ এবং পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কর রয়েছে ৪০ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে পুঁজিবাজার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে আছে যেসব কোম্পানি তাদের সাথে যেসব কোম্পানি শেয়ারবাজারে নেই তাদের কর ব্যবধান বৃদ্ধি করা হতে পারে। যেমন-শেয়ার বাজারে থাকা ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বিদ্যমান কর রয়েছে সাড়ে ৩৭ শতাংশ। আর শেয়ারবাজারে বাইরে যারা রয়েছে তাদের ওপর করহার রয়েছে ৪০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে দু’টির মধ্যে করের ব্যবধান হচ্ছে মাত্র আড়াই শতাংশ। আগামী বাজেটে এই ব্যবধান ৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে শেয়ার বাজারে থাকা কোম্পানিগুলোর জন্য করহার হতে পারে ৩৫ শতাংশ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাদে শেয়ারবাজারে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর ওপরও করহার কমানোর প্রস্তাব করা হতে পারে।
জানা গেছে, শেয়ারবাজারের বাইরে থাকা মোবাইল ফোন কোম্পানির ওপর কর হার। বিদ্যমান ৪৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে। বর্তমানে গ্রামীণ ও রবি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত রয়েছে। তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংক পুঁজিবাজারে বাইরে রয়েছে। এর সাথে সরকারি ফোন কোম্পানি টেলিটকও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নয়।
এ দিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করতে বিশেষ কর প্রণোদনার দাবি জানিয়েছে। এ দাবির মধ্যে রয়েছে- ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান কমপক্ষে ১৫ করার কথা বলেছে। এ ছাড়াও যেসব প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি টাকার বেশি ট্যাক্স ইনসেনটিভ ও ট্যাক্স বেনিফিট বা ট্যাক্স ইনটেনসিভ উপভোগ করে, তাদের বাধ্যতামূলক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সর্বশেষ প্রস্তাব অনুযায়ী ট্যাক্স হলিডে প্রদানের সুপারিশ করেছে।