বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসবভাতা বৃদ্ধি করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অতিরিক্ত ৭৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা চেয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদকে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ ৯৮ হাজার ৬৮ জন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মাসিক ২০০০ টাকা করা হলে অতিরিক্ত লাগবে ৪৫৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। একইভাবে চিকিৎসা ভাতা মাসিক ১০০০ টাকা হলে ২২৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা হার ৭৫ শতাংশ করা হলে ৮৪ কোটি টাকার প্রয়োজন পড়বে। ফলে এজন্য সর্বমোট-প্রয়োজন হবে ৭৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণ এবং দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসনের অংশ হিসেবে উল্লিখিত খাতগুলোতে আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়নসহ শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে সহায়তা করবে।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টার কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, চিঠিতে লিখেছেন, সারা দেশের শিক্ষকদের চাকরির সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ তাদের কল্যাণ এবং শিক্ষা প্রদানের সার্বিক পরিষেবা উন্নয়ন সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু বিগত সময়ে শিক্ষা খাতের উন্নয়নের পরিবর্তে অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করার মাধ্যমে শিক্ষার বাজেট সঙ্কোচন করা হয়েছে। ফলে শিক্ষকদের জীবনযাত্রা ও সামাজিক অবস্থানে নানা রকম বৈষম্য প্রতিফলিত হচ্ছে। এ সঙ্কট উত্তরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার শিক্ষা খাতের আনুপাতিক বাজেট বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। শিক্ষা খাতের ব্যয় বাড়ানো হলে শিক্ষার উন্নয়নসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ও পেশাদারিত্বের মান বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বৈষম্য হ্রাস পাবে।
অর্থ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠিতে বলা হয়, আপনি অবগত আছেন যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ডিও পত্র প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ থেকে শিক্ষকদের উৎসব বোনাস ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু কর্মচারীদের বিদ্যমান বোনাস ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি না পাওয়ায় তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা নিরসনে কর্মচারীদের বোনাস ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা হতে ২০০০ টাকা ও চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা বৃদ্ধিকরণের বিষয়টি গত ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে ডিও (আধা-সরকারিপত্র) পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়েছিল। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পেশাদারিত্বের মান বৃদ্ধিকল্পে তাদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি করাও প্রয়োজন।
এ অবস্থায়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অতিরিক্ত ৭৬৯ কোটি ৩৩ কোটি টাকা সংস্থানের জন্য অর্থ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বিভাগ সূত্র জানায়, অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়ার বিষয় নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে তা বিবেচানধীন আছে বলে জানা গেছে। যদি কিছু হয়, তবে তা সংশোধিত বাজেটে হতে পারে।