দেশের পুঁজিবাজারে পুরো সপ্তাহজুড়েই দরপতন প্রত্যক্ষ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। সূচকের বড় ধরনের অবনতির মধ্য দিয়ে যেভাবে সপ্তাহের শুরু হয় তেমনি সপ্তাহের শেষ দিনও এ পতনের ধারা অব্যাহত ছিল। প্রায় প্রতিদিনই শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় থাকা বাজারগুলো শেষ দিকে বড় ধরনের বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে। আর এর ফলে সপ্তাহান্তে বড় মূলধন হারায় পুঁজিবাজারগুলো।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ১০৭ দশমিক ৯ পয়েন্ট হারায়। রোববার ৫ হাজার ২০৫ দশমিক ২৩ পয়েন্ট থেকে সপ্তাহ শুরু করা সূচকটি বৃহস্পতিবার সপ্তাহশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ৯৭ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে। একই সময় বাজারটির অন্য দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৫২ দশমিক ৫১ ও ৩৯ দশমিক ২৫ পয়েন্ট।
সপ্তাহব্যাপী সূচকের টানা অবনতির ফলে এ সময় ডিএসই বড় আকারের মূলধন হারায়। রোববার ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে যে বাজারটি সপ্তাহ শুরু করে বৃহস্পতিবার সপ্তাহশেষে সে বাজারটির মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৩৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ১০৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অপর দিকে, চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারের মূলধন হারায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
সূচকের পাশাপাশি অবনতি ঘটেছে পুঁজিবাজারের লেনদেনে। ফেলে আসা সপ্তাহটিতে ডিএসইর মোট ১৫৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ১৮৮ দশমিক ১১ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ২ হাজার ৪৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি হয়। এভাবে বাজারটির সপ্তাহিক গড় লেনদেন যথারীতি ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৩৯৯ কোটি ৪ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৮৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
ডিএসই থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বিদায়ী সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ৯.৭৩। আর সপ্তাহ শেষে তা অবস্থান করছে ৯.৫৮। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর পিই রেশিও ০.১৫ তথা ১.৫৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
সর্বশেষ খাতভিত্তিক মূল্য-আয় অনুপাত (পিই): জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫.৯৯, ব্যাংক খাতে ৬.০৪, সেবা ও আবাসন খাতে ৯.৭৬, টেক্সটাইল খাতে ৯.৭৭, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১০.৫২, আর্থিক খাতে ১০.৬৫, সাধারণ বীমা খাতে ১২.১২, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ১২.৭৪, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১৩.০৩, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৩.১০, সিমেন্ট খাতে ১৪.০৯, প্রকৌশল খাতে ১৫.০৬, আইটি খাতে ১৬.৪২, বিবিধ খাতে ১৮.৩৪, পেপার ও প্রিন্টিং খাতে ১৮.৯৪, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ২৬.৩৭, পাট খাতে ২৬.৬০, ট্যানারি খাতে ৩৯.৩৪ এবং সিরামিক খাতে ১০৮।
বিদায়ী সপ্তাহে (১৩ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানির মাঝে লেনদেনের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে কোম্পানিটির ২১ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির গড়ে ১৭ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার গড় লেনদেন ছিল ১১ কোটি ৬ লাখ টাকার, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
লেনদেনের দশ কোম্পানির তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে ছিল উত্তরা ব্যাংক, এসিআই লি., শাইনপুকুর সিরামিকস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ম্যারিকো এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক।
এ সময় লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানি দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্র মতে, সপ্তাহে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬ টাকা ২০ পয়সা বা ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ায় তালিকার তৃতীয়স্থানে অবস্থান ছিল রেইনউইন যজ্ঞেশর।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল শাহজিবাজার পাওয়ার, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট এবং এনআরবি ব্যাংক।
একই সময় লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্র মতে, সমাপ্ত সপ্তাহে বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১ টাকা ৯০ পয়সা বা ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমেছে। দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ইউনিয়ন ক্যাপিটালের শেয়ারদর কমেছে ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ারদর পতনে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান ছিল সোনারগাঁও টেক্সটাইলস লিমিটেড।
সাপ্তাহিক দরপতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস, শাইনপুকুর সিরামিকস, জনতা ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এসএস স্টিলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।



