একাদশ শ্রেণীর বাংলা ও ইংরেজির ৫ শতাধিক নকল বই জব্দ

অনুমোদনহীন বই বাজারে সয়লাব এনসিটিবির অভিযান

অভিযুক্ত মীম প্রেসের মালিক পলাতক বাইন্ডিংয়ের ৪ কর্মচারী আটক

Printed Edition

শাহেদ মতিউর রহমান

অভিনব পন্থায় একাদশ শ্রেণীর বাংলা ও ইংরেজির পাঁচ শতাধিক পাঠ্যবই নকল করেছে মীম প্রিন্টার্স নামের একটি প্রেস। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব নকল বই জব্দ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ সময় প্রেসের মালিক পালিয়ে গেলেও চার কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে সূত্রাপুর থানা পুলিশ।

এনসিটিবি থেকে শতকরা ১২ শতাংশ হারে রয়্যালিটির বিনিময়ে অনুমোদন নিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি এবং আইসিটি এ তিনটি বই ছাপানো ও বাজারজাত করার অনুমতি নিতে হয় নির্ধারিত প্রেসগুলোকে। কিন্তু নিম্নমানের কাগজ-কালি এবং শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বাস্থ্যকর এসব বই এনসিটিবির অনুমতি ছাড়াই কিছু প্রেস অবৈধ পন্থায় নকল করে কম দামে বাজারে বিক্রি করে এতে অনুমোদন পাওয়া প্রেসগুলোকে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়। যদিও এনসিটিবি এ বিষয়ে প্রতি বছরই বাজারে কড়া নজরদারি রাখে তারপরও গতকাল এমনই এক প্রেস থেকে নকল বই জব্দ করেছে সংস্থাটি। এনসিটিবির পক্ষে গতকালের এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সম্পাদনা বিভাগের মাধ্যমিক বিভাগের সম্পাদক ড. মো: ছাইদুর রহমান ।

এনসিটিবিসূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সূত্রাপুরের ডালপট্টি এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে এনসিটিবি প্রকাশিত ২০২৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত বাংলা, ইংরেজি ও সহপাঠ বইয়ের বিপুল পরিমাণ নকল কপি জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে এনসিটিবির কর্মকর্তাদের সাথে সহায়তা করেন সূত্রাপুর থানা পুলিশ। অভিযানে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা জানান, অনুমোদন পাওয়া চারটি প্রেসের বই নকল করে বাজারে বিক্রির পাঁয়তারা করেছিল অভিযুক্ত মীম প্রিন্টার্স । এ চারটি প্রেস হলো অগ্রণী প্রেস, মানামা প্রেস, ফাহিম প্রেস এবং আনন্দ প্রেস।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিনব পন্থায় এ বই নকল করা হয়েছে। যেমন একটি প্রেসের নামে বই মুদ্রণ করা হয়েছে। অপর একটি প্রেস থেকে বাইন্ডিং করা হয়েছে আবার অন্য একটি আলাদা জায়গা থেকে বইয়ের কভার পেজ ছাপানো হয়েছে। পুরো এ প্রক্রিয়া এমনভাবে পরিচালনা করা হয়েছে যাতে কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রেসে অভিযান চালিয়েও মূল হোতা কাউকেই ধরাছোঁয়া না যায়।

এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হেলালের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে আশরাফ বুক বাইন্ডিং নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এসব নকল বই জব্দ করা হয়। আবার বাবু বাজার এলাকা থেকে এসব নকল বইয়ের কভার পেজ ছাপানো হয়েছে। তবে এ নকল বইগুলো ছাপার দায়িত্ব পালন করেছে মীম প্রিন্টার্স।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, মীম প্রিন্টার্স বিগত বছরগুলোতে তাদের পাঠ্যবই মুদ্রণে জড়িত ছিল। তবে এবার তারা টেন্ডারে বই মুদ্রণের কাজে অংশ নিয়েও নিজেদের দুর্বলতার কারণেই কোনো কাজ পায়নি। অবশ্য গতকাল অভিযান চলাকালে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির একটি পরিদর্শক টিমও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাইন্ডিং কারখানার মালিক নাজমুলকে গ্রেফতার করে। তবে মীম প্রিন্টার্সের মালিক আব্দুর রাজ্জাক অভিযানের আগেই গা ডাকা দেন।

পুলিশ সূত্র আরো জানায়, নাজমুলের দেয়া তথ্যে ভিত্তিতে পরে কোতোয়ালি থানাধীন মীম প্রেসে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নকল বইয়ের ছাপা ফর্মা উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশ চারজন মেশিনম্যানকে আটক করে। তবে প্রেসের মালিক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। নাজমুল পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, এ নকল বই ছাপার সাথে বিপ্লব ও সম্রাট নামে দুই ব্যক্তি জড়িত। পুলিশ বর্তমানে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত মেশিনম্যানরা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, নকল বই ছাপার জন্য বিপুল পরিমাণ কাগজ ও সরঞ্জাম সেখানে এখনো মজুদ আছে। অভিযান শেষে এনসিটিবির কর্মকর্তারা সূত্রাপুর থানায় উপস্থিত হয়ে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন।