লিগ শিরোপা জিততে ভুলেই গিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। বাংলাদেশ পেশাদার লিগ শুরুর আগে সর্বশেষ তারা জাতীয় লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০০৫ সালে। ২০০৭ সালে দেশে প্রবর্তিত হয় পেশাদার লিগ খ্যাত প্রথমে ‘বি’ লিগ। হাল আমলে এখন যা বিপিএল। এত দিন দেশ সেরা এই লিগে তাদের দৌড় ছিল রানার্স আপ পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত সদ্যসমাপ্ত বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা জয়। তা তিন ম্যাচ হাতে রেখেই। শিরোপার তরতাজা ঘ্রাণ মিলিয়ে যেতে না যেতেই শুরু হয়ে গেছে এবারের সিজনের দল বদলের প্রস্তুতি। একটি দল বহু চেষ্টার পর লিগ শিরোপা জিতেছে। তাই তারা পরের সিজনেও চ্যাম্পিয়ন ফাইটিং দল গড়বে এটাই সমর্থকদের প্রত্যাশা। সাথে অন্য ফুটবলপ্রেমীদেরও। অথচ সেই মোহামেডানেই অশনি সঙ্কেত। চলতি সিজনে দল গোছানোর খবর তো নেই-ই উল্টো পদত্যাগ করেছেন ক্লাবের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। আর কর্মকর্তারা ব্যস্ত দলাদলিতে। ফলে এবার মোহামেডান আদো শিরোপার ধরে রাখার মতো দল গড়তে পারবে কি না সন্দেহ।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরপরই ক্লাব এবং সমর্থক দলের উদ্যোগে দুই দফা সংবর্ধনা দেয়া হয় চ্যাম্পিয়ন দলকে। তবে ঢাকা ক্লাবে সমর্থক দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলের কর্মকর্তাদের ব্যক্তব্য স্পষ্ট করেছে কি দলাদলিতে ব্যস্ত ক্লাবটির ভেতরে ও বাইরে থাকা সংশ্লিষ্টরা। কিছু দিন আগে জেল থেকে বেরিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। তাকে এই জেলে পাঠানো নাকি ক্লাবের একটি পক্ষের ষড়যন্ত্রের অংশ। অভিযোগ এক কর্মকর্তার। মোহামেডানের সাবেক শীর্ষ কর্মকতা মনিরুল হক চৌধুরী অনুষ্ঠানে অনুরোধ করেছিলেন যেন ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর পদত্যাগ না করেন ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে। কিন্তু ঠিকই ওই পদ থেকে ইস্তফা দেন গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। সমর্থক দলের ওই সংবর্ধনা মোহামেডান কর্মকর্তা নুরউদ্দিন আহমেদ সতর্ক করে বলেন, বিগত সময় যারা মোহামেডান ক্লাবকে ধ্বংস করেছে তারা ফের ক্লাবে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই তাদের ঢুকতে দেয়া হবে না ক্লাবে।
আলমগীরের এই পদত্যাগ মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। যদিও মোহামেডানের ফুটবল কমিটির সেক্রেটারি আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স জানান, ‘আলমগীর ভাই পদত্যাগ করেছেন। আবার ফিরেও আসবেন।’ জানা গেছে, মোহামেডান ক্লাবের গত সিজনের ফুটবল দল গঠনে যে ১০-১২ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল এর বেশির ভাগই দিয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। এর কিছুটা শেয়ার করেছেন ক্লাব সভাপতি জেনারেল (অব:) আবদুল মুবীনও। তবে নিজের পক্ষে আর একা ক্লাবকে টানা সম্ভব নয়। তাই সরে গেছেন ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান। প্রিন্স অবশ্য এবারের সিজনে ভালো দলা গড়ার বিষয়ে আশাবাদী। তার দেয়া তথ্য, সোলেমান দিয়াবাতে সহ গত সিজনের সব বিদেশীই থাকবে দলে। এখন আমরা স্থানীয় কাকে কাকে রাখব তা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছি।
প্রিন্স এই আশার কথা শুনালেও ক্লাবের অপর এক কর্মকর্তা হতাশ এই সিজনের দল গঠন নিয়ে। জানান, ক্লাব তো এখন বলতে গেলে অভিভাবকহীন। বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ। নতুন করে কমিটি গঠন করতে হলে নির্বাচন করতে হবে। লিমিটেড কোম্পানির এই ক্লাবে নির্বাচন করতে গেলে আদালতের অনুমতি লাগবে। দেখা গেল পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ করতে করতে পেরিয়ে গেছে দলবদলের সময়। তখন দেখা যাবে সব ক্লাব ভালো দল গঠন সম্পন্ন করে ফেলেছে। আর ধরা খেয়েছে মোহামেডান।
বাংলাদেশের ফুটবলে এখন নতুন জোয়ার চলছে। দেশবাসীর ব্যাপক আগ্রহ ফুটবলকে ঘিরে। এই পরিস্থিতিতে দর্শক প্রিয় দল মোহামেডান যদি শক্তিশালী দল গড়তে পারে এবং সাফল্যও পায় তাহলে ঘরোয়া ফুটবলে ফের দর্শক টানতে পারবে জনপ্রিয় ক্লাবটি। আগামীতে দর্শকদের প্রিয় জাতীয় স্টেডিয়ামে হবে লিগের ম্যাচ।