আশা-নিরাশার দোলাচলে বাংলাদেশ

জসিম উদ্দিন রানা
Printed Edition

টাইগার দলের ক্রিকেটারদের মগজের কোষগুলো জ্যামে আটকা। না আছে স্বস্তি, না আছে শান্তি, না আছে আত্মবিশ্বাস। ফাইলার খেলা তথা শিরোপা উঁচিয়ে ধরার স্বপ্ন নিয়ে আমিরাতে গিয়ে এখন গা বাঁচানোর লড়াই। এখন সব চাপ আফগানিস্তান ম্যাচের ওপর। রান রেট, আত্মবিশ্বাস, কৌশল-সবকিছু মিলিয়ে এই ম্যাচই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের ভাগ্য। এক দিকে শেষ আশা, অন্য দিকে বিদায়ের শঙ্কায় মাঠে নামবে টাইগাররা জটিল সমীকরণ নিয়েই। হংকংয়ের সাথে জিতে শ্রীলঙ্কানদের সাথে হেরে এশিয়া কাপে টিকে থাকার লক্ষ্যে আজ আবুধাবির শেখ যায়েদ স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায়।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-২০তে বাংলাদেশের রেকর্ড খুব একটা ভালো না। ১২ বার মুখোমুখি হয়ে পাঁচবার জিতলেও সাতবার হেরেছে টাইগাররা। এশিয়া কাপে এ পর্যন্ত আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে দু’টিতে, হেরেছে তিনটিতে। এশিয়ার কাপে টি-২০তে মাত্র একবার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। ২০২২ সালের ওই ম্যাচ সাত উইকেটে জিতেছিল আফগানরা।

গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে সাত উইকেটে হারিয়ে জয় দিয়ে এশিয়া কাপের আসর শুরু করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচেই হোঁচট। শ্রীলঙ্কার কাছে ছয় উইকেটে হার। দুই ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের ২ পয়েন্ট। সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখতে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। শ্রীলঙ্কার মতো এক ম্যাচে ২ পয়েন্ট। আফগানদেরও এক ম্যাচে দুই পয়েন্ট। হংকংয়ের বিপক্ষে ৯৪ রানের জয় পায় তারা। বাংলাদেশের কাছে হারলেও সুপার ফোরে খেলার সুযোগ থাকবে আফগানদের। তখন শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে হবে আফগানদের। বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তান জিতে গেলে সুপার ফোরের টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের।

এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেতে মরিয়া বাংলাদেশ। অধিনায়ক লিটন দাস জানান, জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছেন না তারা। ‘আমরা জানি আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমাদের জন্য বাঁচা-মরার ম্যাচ। ঘুরে দাঁড়াতে সেরাটা উজাড় করে দেবো।’

জয় দিয়ে দারুণ শুরুর পর দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে গিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। দলের মিডল অর্ডার ব্যাটার জাকের আলী মনে করেন, এক ম্যাচ হারে দলের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরবে না। কারণ বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য, এশিয়া কাপ জয়। ‘আমরা বিশ্বের যেখানেই খেলি না কেন, সব ম্যাচ জয়ের মানসিকতা থাকে। পরবর্তী ম্যাচেও একই লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামব। আমরা এখানে শুধু ম্যাচ খেলতে আসিনি, চ্যাম্পিয়ন হতে এসেছি।’

সাধারণত টি-২০ ফরম্যাটে সেরা দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে আফগানিস্তান। তাদের হারানো বলে কয়ে হবে না। তবে এশিয়া কাপে আসার আগে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টানা তিনটি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ভরসা ওই জায়গায়। লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচে পেসার তাসকিন ছিলেন না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একাদশে ফিরতে পারেন।

আবুধাবিতে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলে ভিন্ন দৃশ্যপটে থাকত বাংলাদেশ। বিসিবির সাবেক নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু মনে করেন, বড় টুর্নামেন্টে বেশির ভাগ সময়েই ভাবতে হয় পয়েন্ট টেবিলের জটিল হিসাব-নিকাশ নিয়ে। ১৭-১৮ জন ক্রিকেটার নিয়ে কি একটা দেশের ক্রিকেট চলতে পারে? তানজিদ হোসেন তামিম প্রথম ওভারেই কিভাবে ক্রস ব্যাটে খেলে? সংক্ষিপ্ত সংস্করণে শুরুতেই পাওয়ার প্লেতে প্রথম দুই ওভারে দু’টি উইকেট যাওয়া হতাশার। তখনই আমরা পিছিয়ে পড়েছি। আফগানদের বিপক্ষে ওই ভুলগুলো করা যাবে না।’

দলের কোচ সালাহ উদ্দিনের পর্যবেক্ষণও একই। জাকের-শামীম ডেথ ওভারে বল তুলে মারতেই পারেননি। বিগ হিটিংয়ের জায়গাই দেয়নি লঙ্কান বোলাররা। প্রথম ছয় ওভারে তিন উইকেটে ৩০ রান হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ যতটুকু ঘুরে দাঁড়িয়েছিল জাকের ও শামীমের ৮৬ রানের সৌজন্যে। শেষ ২৪ বলে বাংলাদেশ যোগ করেছে ৩৯ রান। এই চার ওভারে মারতে পেরেছে মোটে একটা চার আর একটা ছক্কা। আবুধাবির উইকেটে ১৬০-৭০ রান চ্যালেঞ্জিং স্কোর।

আফগানিস্তানের সেরা স্পিনার রশিদ খান তো জানিয়েই দিলেন, ‘আমরা কোনো সমীকরণে যেতে চাই না। নিজেদের মাঠে খেলা বলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা ফেবারিট। ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তবে ফরম্যাটটা যে টি-২০। আমরাও হংকংকে হারিয়েছি। বাংলাদেশও হারিয়েছে। তবে তারা শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে আহত বাঘ হয়ে আছে। আমরা সে সুযোগটি নিতে দেবো না।’