- আয়নার মতো স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চাই : সিইসি
- এআই অপব্যবহার হবে বড় চ্যালেঞ্জ : গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা
দেশের শীর্ষ গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথে ইসির সংলাপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এবারের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন, জাতীয়ভাবেই করতে হবে। ইসির একার পক্ষে সব কিছু সামাল দেয়া সম্ভব হবে না বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, আমরা আয়নার মতো স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চাই। সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই- এই ঢোলটা আপনারা একটু বাজিয়ে দেবেন। আমরা নিজের ঢোল নিজেরা বাজাতে চাই না। আমাদের পক্ষ হয়ে আপনারা (গণমাধ্যম) একটু বাজিয়ে দেন।
অন্য দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে গণমাধ্যমের কর্মীদের নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে অবাধ সুযোগ ও তাদের নিরাপত্তা ইসিকে নিশ্চিত করতে হবে। কালো টাকার মালিক, ঋণ ও কর খেলাপিরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে ব্যাপারে ইসিকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক অপপ্রচার, গুজব মোকাবিলা করাকেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। এ সময় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে তারা সংবাদকর্মীদের দ্রুত তথ্য সরবরাহ করার পরামর্শ দেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গতকাল সোমবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাথে আয়োজিত এক সংলাপে শুভেচ্ছা ও সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও শীর্ষ প্রতিনিধিরা এতে তাদের মতামত তুলে ধরেন। সংলাপে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের, প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মারুফ কামাল খান, আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল ইসলাম, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল, দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক এহসান মাহমুদ, বাংলাবাজার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক রাশেদুল হক ও খবর সংযোগের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম।
এ ছাড়া বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, ইউএনবির সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক মো: বশির উদ্দিন, সারাবাংলাডট নেটের হেড অব নিউজ গোলাম সামদানী ভূইয়া, দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব নিউজ জিয়াউল হক, যায়যায়দিনের যুগ্ম সম্পাদক মো: মাহমুদুজ্জামান, ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচনবিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান, রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসির (আরএফইডি) সভাপতি কাজী জেবেল ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বক্তব্য রাখেন।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এই নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাই একটি ভালো নির্বাচন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ২০২৪ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় ২১ লাখ মৃত ভোটার চিহ্নিত করে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। একই সাথে প্রায় ৪৫ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত করা হয়েছে। নারী ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ বাড়াতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে, যার ফলস্বরূপ বিপুলসংখ্যক নারী নিবন্ধন করেছেন।
নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে জানিয়ে সিইসি বলেন, পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার পর পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। এটি একটি শংকর পদ্ধতি, যা ডিজিটাল ও পোস্টাল ব্যালটের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যত চেষ্টাই আমরা করি না কেন, মিডিয়া, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম জনমত গঠন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে সহায়ক। তিনি একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন দেখতে চান এবং এ জন্য ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের সহায়তা কামনা করেন, যাতে তারা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেন।
কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রত্যাশা থাকবে আপনারা মেরুদণ্ড সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাতির কাছে পৌঁছাবেন। এটি দেশকে নতুন করে গড়ার একটি বিরল সুযোগ। যা হয়তো ৫০ বা ১০০ বছরে আসবে না। তিনি ইসিকে ডু অর ডাই মনোভাব নিয়ে দৃঢ়তার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অতীতের নির্বাচন পরিচালনাকারীরা এখন কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছেন। ইসির সামনেও একই ধরনের আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, তরুণ ও গণ্যমান্য শিক্ষকদের নিয়ে একটি নজরদারি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। তার মতে, এটি নির্বাচন কমিশনের কাজ অনেকাংশে সহজ করবে এবং সবার মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া তিনি সাইবার নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
ইনকিলাবের প্রধান সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সিইসি যেভাবে তার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ইতোমধ্যে বাংলাশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। পূর্বের নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশের মানুষ যে দু’টি প্রতিষ্ঠানের ওপর ব্যাপকভাবে বিক্ষুব্ধ- এর মধ্যে একটি নির্বাচন কমিশন এবং দ্বিতীয়টি পুলিশ। তিনি বলেন, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেভাবে কাজ করছেন আমরা আশাবাদী তার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন তার সুনাম ফিরেয়ে আনবেন। বিশ্বব্যাপী যে সুনাম ছিল সেটাকেও ফিরেয়ে আনবেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও মর্যাদাহানী হয়েছে ২৪ ও ১৮ এর নির্বাচনে। সবার জন্যই এই নির্বাচন একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। আশা করি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করে তার ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পারবে।
শ্রীলঙ্কার নির্বাচনের উদাহরণ উল্লেখ করে বাহাউদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যেভাবে রসাতলে যাচ্ছে সেখান থেকে ফিরে আসতে হবে। কয়েক শ’ বছরের ইতিহাসে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ইতিহাস এত খারাপ ছিল না, গণ-অভ্যুত্থানের আগে যেমন ছিল। সেখানে একটি নির্বাচনের পর ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে যে নির্বাচনের স্বপ্ন আপনারা দেখছেন সে নির্বাচন আপনারা করেন। একটি ভালো নির্বাচনই বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারবে। এআই, সাইবার কিভাবে মোকাবেলা করবেন তা সেনাবাহিনীসহ যেসব সংস্থা আছে তাদের সাথে আলোচনা করে কাজ করবেন।
দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, বিগত দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশন জঘন্য প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছিল। ইসির দিকে তাকালেই মানুষ ঘৃণা করত। এমন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আমাদের ডেকেছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তিনি বলেন, সেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি আপনাদের সফলতার সাথে শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশ-প্রশাসনে ফ্যাসিস্টের দোসর ও অনুসারীরা রয়েছে। এদের দিয়ে কিভাবে আপনারা কাজ করাবেন সেটা আপনারাই জানেন। এ ছাড়া এআইর অপব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ইসিকে সতর্ক করে আবদুল হাই শিকদার বলেন, পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নির্বাচন বানচালে কাজ করছে, যাতে নির্বাচন হতে না পারে। সেই লক্ষ্যে হেন কোনো কাণ্ড নাই তারা করছে না। এ ছাড়া সাইবার বুলিং চলছে। ইসির বিরুদ্ধে কত কী প্রোপাগান্ডা হবে। আগামী নির্বাচন যাতে কেউ বানচাল করতে না পারে, সেজন্য দৃঢ়তা দেখাতে হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিক নীতিমালা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এটা দয়া করে সংশোধন করেন। গণমাধ্যমকে শত্রু হিসেবে না নিয়ে সহযোগী হিসেবে দেখেন।
দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান বলেন, নির্বাচনে লেবেল প্লেইং ফিল্ডের জন্য নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে। যতটা সম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে একাধিক দিনে নির্বাচন করা যায় কিনা এ বিষয়টি ইসি বিবেচনা করে দেখতে পারে।
নয়া দিগন্ত নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী বলেন, ইসি ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে জন ও নিরাপত্তা প্রশাসনের নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তিনি বলেন, ঋণ খেলাপি ও কর খেলাপিরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে ব্যাপারে ইসিকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে।
জনাব খলিলী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে একমত হয়েছে। সাধারণ নির্বাচনের এক মাস আগে এই নির্বাচন করতে পারলে প্রবাসীদের ভোট দানসহ নির্বাচন কমিশন সংস্কার পদক্ষেপের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পারবে। অন্য দিকে জনগণ অবাধ ও মুক্ত নির্বাচনের বিষয়ে আস্থাশীল হতে পারবে। সাধারণ নির্বাচনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের বলেন, নির্বাচনের মৌসুমে কিছু কিছু গল্পকার দেখা যায় বিভিন্ন জেলায়। এই গল্পকাররা আমাদের শোনান আড়াই হাজার ভোট ৩৫ মিনিটে কাস্ট হয়ে গেছে। অথবা সারাদিন শুনলাম ৭ ভোটে আবু তাহের পিছিয়ে আছেন। অথচ সন্ধ্যায় ঘোষণা করা তিন হাজার ভোটে আবু তাহের জয়লাভ করেছেন। তিনি বলেন, এই রূপকথাগুলো কারা শোনান। দুই ধরনের ভদ্র সন্তান এই গল্প শোনান- একজন হলেন ওসি, আরেকজন হলেন ডিসি। এই দুই ধরনের ভদ্র সন্তান নিয়ে যেন ইসি সজাগ থাকে।
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ তার বক্তব্যে নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জাতি ১৫ বছর পর একটি স্বচ্ছ ও আনন্দময় নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এবারের নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যাপক প্রয়োগের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি প্রশাসনের দুর্বলতা ও আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থী কেনা-বেচার মতো বিষয়গুলো নিয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব নিউজ জিয়াউল হক ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যেন ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কোনো ধরনের বাধা বা হয়রানির শিকার না হন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল হাসান প্রার্থীর হলফনামা দেয়ার সাথে সাথেই তা ওয়েবসাইটে আপলোড করার দাবি জানান। তিনি বলেন, এতে ভোটাররা প্রার্থীর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দ্রুত জানতে পারবেন। একই সাথে তিনি নির্বাচন কমিশনকে কোনো ধরনের গোপন নির্দেশনা না দেয়ার অনুরোধ করেন, যা স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণœ করতে পারে।
বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, আমরা আশা করব, নির্বাচনের আগে যে অর্থের খেলা শুরু হয়-মনোনয়ন বাণিজ্য, ভোট কেনা, এমনকি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার মতো কর্মকাণ্ড- এসব কঠোরভাবে বন্ধ করা হবে।
ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল বলেন, বিগত তিনটা নির্বাচন ভোটার ছাড়া নির্বাচন হওয়ার কারণে নির্বাচনের ওপরে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। এ আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলে নির্বাচন কমিশন সফল হবে। আমাদের দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গত তিনটা নির্বাচন মানে ভোটার ছাড়া নির্বাচন হওয়ার কারণে নির্বাচনের ওপরে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।
যমুনা টিভির জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন ও পুলিশের দায়-দায়িত্ব ইসিকে নিতে হবে। মাঠের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয় কাজ করে, তারা ভোটের পর ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়তে পারেন- এমন ধারণা পরিবর্তন করতে হবে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক মোস্তফা আকমল বলেন, নির্বাচনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার। এক মিনিটেই ভুয়া ছবি তৈরি করা যায়, প্রার্থীদের ভাবমর্যাদা নষ্ট করা সম্ভব। তিনি ভোটার তালিকা হালনাগাদে ত্রুটি দূর করা ও ফলাফল দ্রুত প্রকাশের আহ্বান জানান।
ডিবিসি টিভির সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, সংস্কার কমিশন অনেক কাজ এগিয়ে দিয়েছে। এজন্য আপনারা অংশীজনদের সাথে সংলাপ দেরি করছেন। কিন্তু আমরা সংস্কার কমিশনের সাথে যে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম সেগুলো আমলে না নিয়েই যদি নীতিমালা করেন তাহলে তো আজকের এই সংলাপ ফলপ্রসূ হলো না। কাজেই নীতিমালা সংশোধন করা উচিত।
চ্যানেল আইর জাহিদ নেওয়াজ বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য গোপন করা হয়, ব্যবস্থা নেয়া হয় না। হলফনামা যেটা দিলো আমরা জানি ভুয়া, কিন্তু ইসি আর সেটা তদন্ত করে দেখল না, সেটা হলে তো আর হলফনামা দেয়ার দরকার নেই। সোস্যাল মিডিয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এটিএন নিউজের হেড অব ইনপুট শহিদুল আজম বলেন, নিবন্ধিত গণমাধ্যম নিয়ম মেনে চলে, কিন্তু ইউটিউব বা মোবাইলভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে খবর ছড়ানো ঠেকানো কঠিন। তাই ইসির তথ্য শাখাকে শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, যা চাপিয়ে রাখা যাবে না, সেটি উন্মুক্ত করাই ভালো। তাহলে সন্দেহ থাকবে না।