মুহাম্মদ হানিফ ভূঁইয়া নোয়াখালী
ভরা মৌসুমেও নোয়াখালীর মেঘনা নদীতে কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা মিলছে না। এতে হতাশায় দিন কাটছে জেলার জেলে পরিবারগুলোর। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অনেকেই পড়ছেন ঋণের ফাঁদে।
জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে জেলে পরিবারগুলো প্রতি বছর দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসার পরিচালনা করে এবং মৌসুমে ইলিশ মাছ সরবরাহ করে ঋণ মুক্ত হয়। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস ইলিশের মৌসুম। এ বছর মাস দু’টি পেরিয়ে গেলেও ইলিশ ধরা পড়ছে না আশানুরূপ। এতে জেলে পরিবারের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে তাদের।
জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ১৫৪ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ছয় হাজার ৮৭ জন, হাতিয়ায় ২৫ হাজার ৯৯৫ জন, কোম্পানীগঞ্জে চার হাজার ৫৬ জন এবং সুবর্ণচরে আছেন আট হাজার ১৬ জন জেলে রয়েছেন।
হাতিয়ার তমরুদ্ধির জেলে অর্জুন, তালেব, আজগর ও সুজন বলেন, প্রতিদিন ভোরে নদীতে যাই, বিকেলে খালি হাতে ফিরি। যে ক’টি মাছ ধরা পড়ে, তা দিয়ে ট্রলারের ভাড়া মেটানোই কষ্টকর। মহাজনের ঋণ শোধ করব কিভাবে?
সদর উপজেলার জেলে জন্টু জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর সমুদ্রে গেলেও মাছ ধরা পড়ে সামান্য। সংসার চালাতে পারছি না, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। কোম্পানীগঞ্জের জেলে পরিমল বলেন, এনজিওর কাছ থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
হাতিয়ার জেলে শংকর জানান, মাছ বিক্রি করে ট্রলারের ভাড়া মেটাতে হয়। বদলায় কাজ নেয়া লোকদের টাকাও দিতে হয়। হাতে কিছুই থাকে না আর।
হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটের আড়তদার হাবিব ভূঁঁইয়া বলেন, মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া। জেলেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, মহাজনরাও দেনা-পাওনায় জর্জরিত।
এ দিকে সাধারণ বাজারে মাছের সঙ্কট আরো তীব্র। অন্যান্য মাছের সরবরাহও কম থাকায় দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ইলিশ সরবরাহ কম থাকায় প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। অন্যান্য বছর তা বিক্রি হতো ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। ফলে ইলিশ এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিছু এনজিও জেলেদের উন্নয়নে কাজ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। সরকার সাধারণত মা ইলিশ রক্ষার্থে মাছ শিকার নিষিদ্ধের সময় ভিজিএফ সহায়তা দিলেও অন্যান্য সময় তেমন সহায়তা দেয়া হয় না।
নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, মাছ পাওয়া যাচ্ছে না- এ কথা সঠিক নয়। তবে জেলেদের প্রত্যাশামতো ধরা পড়ছে না। মৌসুম শেষ হতে এখনো কিছুটা সময় বাকি আছে। আশা করি, শেষ দিকে মাছের সরবরাহ বাড়বে।
ইলিশের আকাল শুধু জেলেদের জীবিকা নয়, সাধারণ মানুষের ভোক্তা জীবনেও বড় প্রভাব ফেলছে। এখন প্রশ্ন হলো, মৌসুম শেষ হওয়ার আগে নদী ও সাগরে কাক্সিক্ষত ইলিশ ধরা পড়বে কি না। নাকি হতাশা নিয়েই এ বছর কেটে যাবে হাজারো জেলে পরিবারকে।



