পেশাদারিত্বের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালনা প্রয়োজন : রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির

Printed Edition
ওয়েস্টিন হোটেলে সমন্বিত পররাষ্ট্রনীতি গঠনের বিষয়ে জাতীয় সংলাপে বক্তারা : নয়া দিগন্ত
ওয়েস্টিন হোটেলে সমন্বিত পররাষ্ট্রনীতি গঠনের বিষয়ে জাতীয় সংলাপে বক্তারা : নয়া দিগন্ত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালনা করা প্রয়োজন মন্তব্য করে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরিচালনা করা উচিত হবে না। বাংলাদেশকে বিশ্বের ১৯২টি দেশ সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে, সে জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

‘সমন্বিত পররাষ্ট্রনীতি গঠনের পথে বাংলাদেশ’ বিষয়ক একটি জাতীয় সংলাপে তিনি এ সব কথা বলেন। ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিজিএডি) গত শনিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এ সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষাবিদ, সাবেক কূটনীতিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা অংশ নেন।

হুমায়ুন কবির বলেন, পররাষ্ট্রনীতি এমন একটি বিষয়, যা প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। ১৯৭১ সালে জাতির প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত না হলেও ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এ অসম্পূর্ণ আকাক্সক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে গঠিত সার্ক আঞ্চলিক সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করেছিল। সংসদের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হলে পররাষ্ট্রনীতি টিকিয়ে রাখা কঠিন।

বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, আগের সরকারের ‘ইলিশ কূটনীতি’ বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল। তিনি জলবায়ু ন্যায়বিচার ও প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আপনার শত্রু আমার শত্রু হতে হবে’-এমন নীতি বাদ দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নেয়া উচিত।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা: তাসনিম জারা বলেন, পররাষ্ট্রনীতিতে সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে হবে।

এনসিপির আন্তর্জাতিক সেলের সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম আলী আশরাফ বলেন, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। তৈরি পোশাকের বাইরে ফার্মাসিউটিক্যাল ও হাইটেক টেক্সটাইল খাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

বিআইআইএসএসের সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. রাজিয়া সুলতানা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দূরদর্শী কূটনীতির ওপর জোর দেন।

ঢাকা ফোরাম ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা আশফাক জামান বলেন, বাংলাদেশকে দরিদ্র ও বন্যাপ্রবণ দেশের ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইসলামিক ন্যাটো’ নামে পরিচিত সৌদি-পাকিস্তান চুক্তি থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে।

আইপিজিএডির চেয়ারম্যান ড. ইশারাফ হোসেন উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, সত্তরের দশকের ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অনুপস্থিত। তিনি নতুন সরকারকে এ নীতিকে পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হিসেবে পুনর্বহালের আহ্বান জানান।

আইপিজিএডির নির্বাহী পরিচালক আলাউদ্দিন মোহাম্মদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভিন্ন মত থাকলেও সবাই এক টেবিলে বসতে পারে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আইপিজিএডি সেই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করেছে।

বাংলাদেশকে এখন নিজের সংজ্ঞায় নতুন করে বিশ্বের সামনে দাঁড়াতে হবে বলে সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা একমত হন।