কমনওয়েলথ মহাসচিবকে সিইসি

নিরাপত্তায় দেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করা হচ্ছে

Printed Edition

বিশেষ সংবাদদাতা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক প্রস্তুতি এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে সফররত কমনওয়েলথ মহাসচিবকে অবহিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে মহাসচিবকে জানানো হয়েছে, সারা দেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন- এই তিন জোনে ভাগ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে গতকাল রোববার সিইসির সাথে কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বচওয়েকের বৈঠক হয়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতি, অগ্রগতি, বিদেশে ভোট প্রদান, রেফারেন্ডামসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব বলেন, কমনওয়েলথ মহাসচিব বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে সিইসির কাছে জানতে চেয়েছেন। এ সময় জানানো হয়েছে, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় সব নির্বাচন সামগ্রী প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিদেশে বসবাসকারী ভোটারদের জন্য ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং’য়ের প্রক্রিয়াও চলছে। ৫৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে- এটি জেনে মহাসচিব সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এটি সফলভাবে সম্পন্ন হবে।

ইসি সচিব জানান, আইসিপিভির আওতায় দেশের ভেতরে প্রায় ১০ লাখ ভোটার। যারা বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ দায়িত্বে নিয়োজিত তাদেরও ভোটদানের সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এটিও মহাসচিবের কাছে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। আখতার আহমেদ বলেন, কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেছেন যে, একই দিনে রেফারেন্ডাম আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য বাড়তি দায়িত্ব। তবে ইসি যে প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে, তা দেখে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। মহাসচিব নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ ও ভোটার তালিকা সংশোধন, সংক্রান্ত সংখ্যাগত তথ্য জেনে প্রশংসা করেন বলে জানান ইসি সচিব।

তাকে জানানো হয়, মৃত ভোটারদের বাদ দিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এই উদ্যোগকেও তিনি ভালো সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যা দেন। কমনওয়েলথ মহাসচিব মিসইনফরমেশন ও ফেক নিউজের বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সতর্ক থাকতে বলেছেন। এ সময় ইসি তাকে জানায়, গণমাধ্যমের মাধ্যমে নিয়মিত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তা আরো সম্প্রসারিত হবে।

কমনওয়েলথ মহাসচিবকে উদ্ধৃত করে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, মহাসচিব বলেছেন, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা- ট্রাস্ট ইন ইলেকশন সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো জরুরি। সিইসি বলেছেন, প্রয়োজনীয় প্রচার চলছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোও সহযোগিতা করবে বলে আশা করা হয়। এতে আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে।

আখতার আহমেদ বলেন, মহাসচিব জানিয়ে দিয়েছেন, ৫৬ সদস্য দেশের সংগঠন হিসেবে কমনওয়েলথ প্রয়োজন হলে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। ব্রিটেনের সহযোগিতা পাওয়ায় তিনিও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। সচিব জানান, বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, বিদেশী পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানো হবে। মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন- তারা এসে নির্বাচনকে আরো ক্রেডিবল করতে ভূমিকা রাখবেন। তিনি বলেন, এখনো পর্যবেক্ষক দলের সংখ্যা বা পাঠানোর সময় বিষয়ে কিছু নির্দিষ্ট হয়নি। প্রবাসী পর্যবেক্ষকরাও নির্বাচন পর্যালোচনা করে তাদের অবস্থান জানাবেন।

আখতার আহমেদ বলেন, কমনওয়েলথ জিজ্ঞেস করেছে আমরা কী ধরনের সহযোগিতা চাই? তবে আমরা এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলিনি। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কোথায় সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে, তা নির্ধারণ করতে কিছু সময় লাগবে। তিনি জানান, আলোচনার শেষাংশে মহাসচিব নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির ওপর আস্থা ও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে।

ইসি সচিব জানান, আলোচনাটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। মহাসচিব আমাদের প্রস্তুতিকে সমর্থন ও আস্থা জানিয়েছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। শেষে কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেছেন আমরা আশা করি, এবারের নির্বাচন ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ও পার্টিসিপেটরি হবে।