মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাত ধরে আর গেট পার করবেন না শিক্ষিকা মাহরীন

জিলানী মিলটন
Printed Edition
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাত ধরে আর গেট পার করবেন না শিক্ষিকা মাহরীন
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাত ধরে আর গেট পার করবেন না শিক্ষিকা মাহরীন

শিক্ষক শুধুমাত্র একজন পাঠদানকারী নন, তিনি উত্তম আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী। নিজের প্রায় শতভাগ পোড়া দেহ নিয়ে, নিজ শ্রেণীকক্ষের ছোট শিশুদের রক্ষায় শেষপর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর জীবন রক্ষা করে নিজে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরীর শরীরের অনেকাংশই দগ্ধ হয়েছিল। দগ্ধ হওয়ার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের শত ভাগই দগ্ধ হয়েছিল। আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা: শাওন বিন রহমান শিক্ষিকা মাহরীনের মৃত্যুর বিষয় জানান। এরপর মাহরীন চৌধুরীর ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী এক ফেসবুক পোস্টে বোনের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে লেখেন, মাহরীন আপু আর আমাদের মাঝে নেই। আমার বড় বোন, যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন।

সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের সামনে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চার দিকে। ওই সময় প্রতিদিনের মতো স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের হাত ধরে গেট পার করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শিক্ষিকা ও স্কুলের কো-অর্ডিনেটর মাহরীন চৌধুরী। আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে গেলেও তিনি নিজে বেরিয়ে আসার আগে যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব, তাদের বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান। এ সময় তার শরীর আগুনে দগ্ধ হয়।

মুনাফ মুজিব চৌধুরী লিখেছেন, মাইলস্টোনে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতেন মাহরীন। আগুন লাগার পর তিনি প্রথমে বের হয়ে আসেননি, বরং যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ১০০ শতাংশ দগ্ধ হন।

মুনাফ চৌধুরী লেখেন, আপনারা দয়া করে আমার প্রিয় বোনের জন্য দোয়া করবেন। তিনি তার দুই ছেলেকে রেখে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এর আগে, মাহরীনের স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, মাহরীনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব ঝলসে গেছে। লাইফ সাপোর্টে নেয়ার আগে স্বামীর সাথে একটু কথা বলেন মাহরীন। এ বিষয়ে মনসুর হেলাল বলেন, মাহরীন বলেছেন- স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন। ঠিক তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নিজে দগ্ধ হলেও সেসময় তিনি বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। শুধু একজন সাহসী শিক্ষক হিসেবেই নয়, মাহরীন চৌধুরীর পারিবারিক পরিচয়ও অনন্য। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। তার বাবা মহিতুর রহমান চৌধুরী এবং মা সাবেরা চৌধুরী। মাহরীনের দাদী রওশানারা চৌধুরী ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খালা।

জানা গেছে, মাহরীন ছিলেন স্থানীয় বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী কমিটির সভাপতি। শিক্ষা, সমাজসেবা ও মানবিক কর্মকাণ্ডে তার সুনাম ছিল প্রশংসনীয়।

বাবা-মায়ের পাশে দাফন

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মরহুমার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।