মুন্সীগঞ্জ জেলায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ভোট দিতে পারেনি বাংলাদেশের জনগণ। তাই এবার অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে উন্মুখ গোটা জাতি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অনেকেরই প্রত্যাশা, পুরনো চারটি আসন পুনর্বিন্যস্ত হয়ে ফিরে আসবে। এটা হলে জেলার রাজনৈতিক সমীকরণে প্রার্থী বাছাই, কৌশল ও সমর্থন পুনর্বিন্যাস করতে হবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং অন্যান্য দলকে।
জেলার প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে তৎপর থাকলেও জামায়াত তাদের প্রার্থী আগে থেকেই চূড়ান্ত করে রেখেছে এবং তারা এলাকাভিত্তিক গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছে। এনসিপির একজন প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে থাকলেও বাকিরা এখনো সংগঠনাত্মক প্রস্তুতি নিতেই ব্যস্ত রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) : শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় এ আসনে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু এবং সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপি সভাপতি মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য শেখ মো: আবদুল্লাহ মনোনয়ন লাভের আশায় ব্যাপক গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন। ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি মীর সরফত আলী সপু ছাত্র জীবন থেকে অদ্যাবধি বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং স্থানীয় রাজনীতিতে নানা দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন জেলা সেক্রেটারি ও ইসলামপুর কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক এ কে এম ফখরুদ্দিন রাজী। মনোনয়ন প্রাপ্তির পর থেকে জামায়াতের অপেক্ষাকৃত নবীন এ প্রার্থীর নেতাকর্মী অনুসারীরা বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করছেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গীবাড়ি) : লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় এ আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম তিনজন সদস্য মনোনয়ন লাভের আশায় জন সংযোগ করে যাচ্ছেন। এরা হলেন প্রবীণ ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও সদ্য ঘোষিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সিনহা, বিএনপি কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আ্যডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্র নেতা ড. এস এম আসাদুজ্জামান রিপন। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য, সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক এ বি এম ফজলুর করিমকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য অধ্যাপক এ বি এম ফজলুর করিম ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সংসদীয় এ আসনে তার পরিচিতি রয়েছে। সদ্য গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা সমন্বয়ক বিশিষ্ট ব্যাংকার ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম এই আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সাংগঠনিক সভা করলেও এখনো জনসংযোগ শুরু করেননি তিনি।
মুন্সীগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) : সদর ও গজারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় এ আসনের নির্বাচনের তৎপরতা এবং ফলাফল পুরো জেলায় প্রভাব ফেলে। বিগত কয়েক বছর ধরে আ: হাই অসুস্থ ও শয্যাশায়ী হওয়ায় তার ছোট ভাই মহিউদ্দিন আহমেদ বিএনপির হাল ধরেছেন। তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা মহিউদ্দিন আহমেদের মনোনয়ন প্রার্থনা করে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়ায় পোস্টার ও ফেস্টুন লাগিয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির মনোনয়ন প্রার্থীরা হলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ঢাকা চেম্বার্স অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম বাবু এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেন পুস্তি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো: আবু ইউসুফকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তার পক্ষে সংগঠনের দায়িত্বশীল কর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। অধ্যাপক ইউসুফ এবারই প্রথম এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
প্রার্থী নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা : রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত দলীয় কাঠামো অনুসরণ করে সংগঠিতভাবে কাজ করছে। তবে বিএনপিকে বর্তমান প্রজন্মের সৎ, শিক্ষিত ও জনবান্ধব নেতাদের সামনে আনতে না পারলে হতাশা বাড়বে এবং ফলাফলও নেতিবাচক হতে পারে।