শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানই প্রধান প্রতিশ্রুতি
দীর্ঘ ছয় বছরের প্রতীক্ষার পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচন মূলত পাঁচটি বড় গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার রূপ নিয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীজোট, বাম সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিদ্বন্দ্বী এই প্রধান পাঁচটি জোটের ভিপি প্রার্থীরা কথা বলেছেন দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হারুন ইসলাম
মো: আবিদুল ইসলাম খান ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্যানেল ১০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট নিরসন, মানসম্মত শিক্ষা, শিক্ষার্থী কল্যাণ এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তিনি প্রচারণায় বিদ্যমান শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছেন।
নয়া দিগন্ত : ডাকসুতে ছাত্রদলের প্রার্থী হিসেবে আপনার প্রচারণায় কোনো বাধা আছে কি?
আবিদুল ইসলাম খান : আমরা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে আমরা নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের সাথে ইতিবাচকভাবে কাজ করছি। আমাদের বিশ্বাস, শিক্ষার্থীদের রায় পেতে আমাদের কাজ এবং পরিকল্পনাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচিত হলে আপনি প্রথমেই কোন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবেন? বিশেষ করে নারীশিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট নিয়ে আপনাদের কী পরিকল্পনা?
আবিদুল ইসলাম খান : আবাসন সঙ্কট আমাদের অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে কিছু হল নির্মাণের জন্য বাজেট পেয়েছে এবং আমরা চাই সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। যাদের বাইরে থাকার কোনো উপায় নেই, তাদের জন্য খুব দ্রুত অস্থায়ী ব্যবস্থা করা আমাদের লক্ষ্য। আমরা এই সমস্যার সমাধানে নির্বাচনের পরপরই কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।
নয়া দিগন্ত : একটি গুজব আছে যে ছাত্রদল নির্বাচন চায় না এবং সাম্প্রতিক রিটের পেছনে আপনাদের ষড়যন্ত্র রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আবিদুল ইসলাম খান : আমরা সব সময়ই একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার সুযোগ পাবে। আমরা সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি এবং আমরা নিশ্চিত যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নির্বিঘেœ চলবে।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনের ফলাফলে কারচুপির কোনো আশঙ্কা করছেন?
আবিদুল ইসলাম খান : না, আমরা ইতিবাচক চিন্তা করি। আমাদের বিশ্বাস, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে প্রচার চালানো।
নয়া দিগন্ত : শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? তারা কী ধরনের প্রত্যাশার কথা বলছে?
আবিদুল ইসলাম খান : অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা আমাকে উষ্ণভাবে গ্রহণ করেছে এবং তারা পরিবর্তন ও উন্নয়ন চায়। তারা আবাসন, শিক্ষার গুণগত মান এবং ক্যাম্পাসের সুযোগ-সুবিধা উন্নত করার কথা বলছে। আমি তাদের আশা ও আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
নয়া দিগন্ত : সারা দেশে ছাত্রদলের নানা সহিংসতা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনা ঘটছে, এর প্রভাব ভোটে পড়বে বলে মনে হয়?
আবিদুল ইসলাম খান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সব সময় শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত। আমরা শিক্ষার্থীদের সেবা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা আমাদের কাজ এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে তাদের সিদ্ধান্ত নেবে।
নয়া দিগন্ত : ছাত্রদলের হল কমিটি নিয়ে নানা আলোচনা আছে, শিক্ষার্থীদের হলে রাজনীতি নিয়ে শঙ্কাও আছে।
আবিদুল ইসলাম খান : আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির পক্ষে, যেখানে বিতর্ক এবং আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সব শিক্ষার্থী নিরাপদ বোধ করবে এবং তাদের কথা শোনা হবে। আমরা হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই।