জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস চর্চা কেন জরুরি

ইতিহাস চর্চা অব্যাহত না থাকলে সমাজ স্মৃতিহীন হয়ে পড়ে, এবং স্মৃতিহীন সমাজের জন্য ভবিষ্যৎ কেবলই অনিশ্চয়তা

Printed Edition

সৌরভ হাছান হিমেল

ইতিহাস চলমান আলোকচিত্রের মত; এটিকে প্রতিনিয়ত বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে আলো ফেলে দেখার একটি বুদ্ধিবৃত্তিক হাতিয়ারও বলা যায়। একটি সমাজ তার ইতিহাস থেকে যত বিচ্ছিন্ন হয়, ততই সে আত্মপরিচয় সঙ্কটে ভোগে। ইতিহাসচর্চা এই বিচ্ছিন্নতাকে প্রতিরোধ করে। এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের নৈতিকতা যাচাই করতে সহায়তা করে, রাষ্ট্রের আচরণের ধারাবাহিকতা বুঝতে সহায়তা করে এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পক্ষে একটি যুক্তিসঙ্গত বয়ান তৈরি করে। ইতিহাস মানুষকে শেখায়- কোন ভুলগুলো পুনরাবৃত্তি করা যাবে না, কোন আন্দোলনগুলো জাতিকে অধিকার সচেতন করেছিল এবং কোন সিদ্ধান্তগুলো একটি রাষ্ট্রকে উন্নয়নের পথে কিংবা ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। বিশেষত রাজনৈতিক আন্দোলন, গণজাগরণ এবং রাষ্ট্রবিরোধী নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, জনগণের চেতনাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র ও সমাজকে গঠনের চালিকাশক্তি। ইতিহাস চর্চা একটি সমালোচনামূলক প্রক্রিয়া, যেখানে অতীত ও বর্তমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ভবিষ্যতের পথরেখা নির্ধারণ করা হয়। নাগরিকদের মধ্যে জবাবদিহির চেতনা, কর্তৃত্বের প্রতিরোধ এবং অধিকারের অনুধাবন গড়ে তোলে ইতিহাস। এটি একদিকে যেমন রাষ্ট্রকে তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, অন্যদিকে জনগণকে সচেতন, সংগঠিত ও সংগ্রামী করে তোলে।

ইতিহাস চর্চা অব্যাহত না থাকলে সমাজ স্মৃতিহীন হয়ে পড়ে, এবং স্মৃতিহীন সমাজের জন্য ভবিষ্যৎ কেবলই অনিশ্চয়তা।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণ-আন্দোলনকে আমরা ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে আখ্যা দিয়ে থাকি। জুলাই বিপ্লব ছিল একটি গণজাগরণ, যেখানে ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, তরুণ ও সাধারণ মানষু- বিভিন্ন শ্রেণিপেশার জনগণ- রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, দুর্নীতি, কর্তৃত্ববাদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় দেশের রাজনৈতিক পরিসর সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছিল, নাগরিক অধিকার সীমিত করা হচ্ছিল এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো বিতর্কিত আইন ব্যবহার করে বাকস্বাধীনতা দমন করা হচ্ছিল। বিতর্কিত কোটাপ্রথা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পর্যবেক্ষণ, গ্রেফতার ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে রাষ্ট্র একটি পর্যায় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত সমাজ কায়েম করার চেষ্টা করে। জাতীয়ভাবে এ সময়টিতে বিদ্যমান ছিল একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রবণতা, একদিকে জাতীয় রাজনীতিতে একচেটিয়াকরণ, অপরদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন। দেশে পরপর দু’টি নির্বাচন অংশগ্রহণহীন ও বিতর্কিত হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বিরোধীদলগুলো দমন-পীড়নের শিকার হয় এবং রাজনীতিতে মতপ্রকাশের পরিসর ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক বৈষম্য ও প্রযুক্তি-নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে একটি তীব্র সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভ জমতে জমতে একপর্যায়ে জুলাই মাসে বিস্ফোরিত হয়। জনগণের ক্ষোভ একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে রূপ নেয়, যা সম্মিলিত অসন্তোষ ও প্রতিবাদচেতনাকে কেন্দ্র করে বিস্ফোরিত হয়। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল নেতৃত্বহীনতা, বিকেন্দ্রিকতা ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার উপর জোরারোপ। এর প্রেরণা ছিল রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার যন্ত্রণাবোধ, জীবিকা ও মানবিক মর্যাদার সঙ্কট এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। একদিকে যেমন কোটাপ্রথা বাতিলের দাবি উঠে, তেমনি উঠে ন্যূনতম মজুরি, খাদ্য নিরাপত্তা, ও উন্নত নাগরিক জীবনের দাবিও। আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল একটি উত্তরাধুনিক অথচ মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন, যেখানে নাগরিক শুধু ভোট অধিকারের পাশাপাশি একজন মতপ্রকাশকারী, নীতিনির্ধারক অংশীদার হতে চেয়েছিল। প্রেরণা ছিল নিপীড়নের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ, আর লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের জবাবদিহিমূলক পুনর্গঠন। রাষ্ট্র যখন মতপ্রকাশকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বিরুদ্ধ মতকে শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত করে, তখন জনগণের প্রতিরোধ হয়ে ওঠে গণতন্ত্রের নতুন ভাষ্য। জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল সেই সব মানুষ, যারা পত্রিকার পাতায় বা মঞ্চে সচরাচর জায়গা পায় না- রিকশাচালক, শ্রমজীবী নারী, ক্ষুদ্র কৃষক, বেকার তরুণ। তাদের অধিকাংশের মুখে কোনো দাবি-দাওয়া লেখা ছিল না কিন্তু তাদের চোখে ছিল রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার বেদনা এবং তাদের পদচারণায় ছিল ন্যায়বিচারের আকুতি। এই নৈতিক শক্তির ইতিহাস না লিখলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভাববে, ইতিহাস কেবল রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের কাজ। বাস্তবে, প্রান্তিক মানুষের সংগ্রামই ইতিহাসের হৃদস্পন্দন। তাদের জীবন, প্রতিবাদ, নির্যাতন ও প্রতিরোধের কথা লেখায় আনতে না পারলে একটি জাতির ইতিহাস অসম্পূর্ণই থেকে যায়। জুলাই বিপ্লব রাষ্ট্রের কেন্দ্রীকরণ প্রবণতার বিরুদ্ধে বিকেন্দ্রীকরণ, শাসনক্ষমতার স্বচ্ছতা ও জন-অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক কাঠামোর দাবি তোলে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি এবং মানুষের ওপর বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার যে প্রত্যয় এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়, তা ভবিষ্যৎ গণ-আন্দোলনের জন্য একটি দিকনির্দেশক দলিল হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের মূলধারার ইতিহাস চর্চায় এখন পর্যন্ত জুলাই বিপ্লবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য যথাযথভাবে আলোচিত হয়নি। এটি একটি চলমান ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হওয়ায় রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাসে জায়গা পায়নি, অন্যদিকে মূলধারার গণমাধ্যম ও শিক্ষাব্যবস্থায় এর ন্যারেটিভ অদৃশ্য বা বিকৃত হয়েছে। রাজনৈতিক বয়ান ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক ইতিহাস চর্চার ফলে এ ধরনের জনগণকেন্দ্রিক আন্দোলনকে ‘অরাজনৈতিক’, ‘উচ্ছৃঙ্খল’, বা ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ হিসেবে চিত্রায়ন করা হচ্ছে। অথচ জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, বিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক চেতনা ও গণতন্ত্রের পুনরাবিষ্কার স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। ইতিহাস চর্চায় এই বিপ্লবকে অন্তর্ভুক্ত না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাসের মধ্যে বেড়ে উঠবে, যেখানে রাষ্ট্রের জবাবদিহি, গণ-আন্দোলনের অধিকার ও নৈতিক প্রতিবাদ উপেক্ষিত থাকবে। জুলাই বিপ্লবকে একাডেমিক, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা না গেলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশে ইতিহাসচর্চার একটি বড় সমস্যা হলো, তা রাষ্ট্রনির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক-কেন্দ্রিক এবং ক্ষমতার পছন্দনির্ভর। শিক্ষা কারিকুলামে এমনকি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনা তো দূরে থাক, অতীতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পর্যন্ত স্থান পায় না। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব, যার মধ্য দিয়ে জনগণের বৃহৎ অংশ রাষ্ট্রের দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলে, তা এখনো জাতীয় শিক্ষানীতিতে কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি। পাঠ্যবইয়ে জাতির ইতিহাস বলতে কেবল নির্বাচিত কিছু দলীয় অর্জনের বর্ণনা থাকে, যেখানে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ বা বিকেন্দ্রিক গণচেতনার ঘটনাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই একটি অসম্পূর্ণ ইতিহাস ধারণ করে বড় হচ্ছে, যা রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের মধ্যে একটি বিচ্ছিন্নতার দেয়াল গড়ে তোলে। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনার বিশ্লেষণ অনেকাংশে অনুপস্থিত। গবেষণাকাজ এখনো প্রাচীন ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ বা দলীয় রাজনৈতিক পটভূমির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। জুলাই ২০২৪ সালের মতো একটি ব্যাপক জনগণমুখী গণ-আন্দোলন নিয়ে কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা সংস্থা কিংবা স্বতন্ত্র একাডেমিক প্ল্যাটফর্ম এখনো সুসংগঠিত গবেষণা শুরু করেনি। এই অনীহার পেছনে একদিকে রয়েছে গবেষকদের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ, অন্যদিকে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বাধা ও অর্থনৈতিক উৎসাহের অভাব। আবার যেসব গবেষণা হতে পারত, তা প্রাথমিক পর্যায়ে নানাভাবে রুদ্ধ বা অবহেলিত হয়। ফলে এই আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ বা গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে না, যা ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ ও নীতিনির্ধারণে এক বড় শূন্যতা তৈরি করবে। জুলাই বিপ্লবকে আড়াল করে রাখার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে রাজনৈতিক বয়ান। এ বিপ্লব ছিল দলনিরপেক্ষ, বিকেন্দ্রিক এবং বিকল্প রাজনৈতিক চেতনার বাহক- যা কোনো প্রধান দল বা নেতৃত্বের অধীন ছিল না। ফলে এটি প্রচলিত বর্ণনার বাইরে ছিল এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারে এর গুরুত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে খাটো করে দেখা হয়েছে। রাষ্ট্র-সমর্থিত গণমাধ্যমগুলো আন্দোলনকারীদের ‘উচ্ছৃঙ্খল’, ‘অরাজনৈতিক’ বা ‘বিকৃত উদ্দেশ্যসম্পন্ন’ হিসেবে চিহ্নিত করতে সচেষ্ট ছিল। একইভাবে বিরোধী দলগুলোও এটিকে নিজেদের সফলতা হিসেবে উপস্থাপন করতে না পারায় একে কৌশলে এড়িয়ে গেছে।

এই দ্বিমুখী রাজনৈতিক ভূমিকা একটি স্বাধীন গণপ্রতিরোধকে ‘নো-ম্যানস রেভুল্যুশন’ বানিয়ে দিয়েছে, যেখানে জনগণ নেতৃত্বে থাকলেও ইতিহাসে তাদের অবস্থান অনির্ধারিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যদি আমরা কেবল ক্ষমতাবানদের লিখিত ইতিহাস পড়াই, তবে তারা শিখবে কিভাবে ক্ষমতার কাছে মাথা নত করতে হয়, প্রতিবাদ করতে নয়। জুলাই চব্বিশের গণ-আন্দোলন এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ব্যতিক্রমধর্মী ধারা তৈরি করে- যেখানে নেতৃত্বহীনতা, বিকেন্দ্রিকতা ও গণচেতনার নিজস্ব ভাষা সৃষ্টি হয়। ইতিহাস যদি পাঠ্যপুস্তক, গণমাধ্যম বা একাডেমিক চর্চার মাধ্যমে সংরক্ষিত না থাকে, তবে ভবিষ্যতের নাগরিকরা জানবে না কিভাবে নির্যাতনের মধ্যেও অধিকার অর্জনের লড়াই করা যায়। বড় বড় নেতার বাণী নয়, সাধারণ আপামর মানুষের কান্না, প্রতিরোধ, স্বপ্ন এবং আত্মত্যাগও ভবিষ্যতের চিন্তায় স্থান পাওয়া জরুরি। জুলাই বিপ্লব রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের জন্য এক অনন্য কেস স্টাডি হয়ে উঠতে পারত, যদি তা যথাযথভাবে বিশ্লেষিত ও সংরক্ষিত হতো। জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে কিভাবে একটি আধুনিক রাষ্ট্র তার নাগরিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে আইন, প্রশাসন ও প্রযুক্তিকে অস্ত্ররূপে ব্যবহার করে। রাষ্ট্রীয় সহিংসতা, তথ্য নিয়ন্ত্রণ, ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ- এসব কৌশল জনগণের চোখে ধরা পড়ে জুলাইয়ের ঘটনাপুঞ্জে। সুতরাং জুলাই বিপ্লবের দলিলীকরণ যে ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারকদের জন্য বাস্তব পাঠ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগে জুলাই আন্দোলনকে গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হলে ঘটনার বিশ্লেষণের পাশাপাশি এর অন্তর্নিহিত শ্রেণী চরিত্র, অংশগ্রহণকারীদের প্রেরণা ও রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া- সব কিছুকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুধাবন সম্ভব হয়। এম এ, এমফিল বা পিএইচডি থিসিসের মাধ্যমে এই বিপ্লব নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী কাজ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একে পাঠ্য জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ‘আধুনিক বাংলাদেশের গণ-আন্দোলন’ শীর্ষক একটি কোর্স চালু করে সেখানে জুলাই বিপ্লবকে একটি কেস স্টাডি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

এতে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র, সমাজ ও আন্দোলনের সম্পর্ককে ব্যবহারিক উদাহরণসহ বিশ্লেষণ করতে পারবে। একই সাথে নাটক, ছোটগল্প, চলচ্চিত্র বা ডকুমেন্টারি নির্মাণের মাধ্যমে এই বিপ্লবের নৈতিক বয়ান ও মানবিক দিক তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। যেহেতু একটি গণ-আন্দোলন কেবল রাজনৈতিক ঘটনাই নয়; বরং তা সামাজিক আবেগ, সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ এবং সামষ্টিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ- তাই তা সৃজনশীল মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলে সাধারণ জনগণও সহজে এর সাথে সংযুক্ত হতে পারে। কেননা, বিকল্প ইতিহাস চর্চা ছাড়া গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ অসম্ভব। আগামী প্রজন্মকে ইতিহাস থেকে পাঠ নিতে শেখাতে হলে, তাদের সামনে একটি বহুমাত্রিক, সত্যভিত্তিক এবং ন্যায্য বয়ান উপস্থাপন করতে হবে- আর এই দায়িত্ব আমাদেরই। আমাদের সবার।