বদরগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ১৪

উভয়পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো বদরগঞ্জ পৌর এলাকাজুড়ে। এলাকায় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিচ্ছে।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
Printed Edition

দোকান ভাঙচুরের প্রতিবাদে আহূত মানববন্ধনে হামলার ঘটনায় রংপুরের বদরগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং সাংবাদিকসহ অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে পৌরসভার শহীদ মিনার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো বদরগঞ্জ পৌর এলাকাজুড়ে। এলাকায় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, স্থানীয় ইউপি সদস্য ইশতিয়াক আহদের কাছ থেকে জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী দোকান ভাড়া নেয়। দোকানের চুক্তির মেয়াদ আছে ২০২৮ সাল পর্যন্ত। ৫ আগস্টের পর ওই দোকান ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয় ইশতিয়াক মেম্বার। এরই মধ্যে বুধবার ইশতিয়াক বাবুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা শহীদ মিনারসংলগ্ন ওই বেঙ্গল ট্রেডার্স দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে মানববন্ধন করে ব্যবসায়ী সমিতি।

মানববন্ধন শুরু হওয়া মাত্রই উপজেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারের লোকজন মানববন্ধনে হামলা চালায়। এ ঘটনায় জাহিদুলের পক্ষ নিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মানিক এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মানিকের লোকজন পাল্টা আক্রমণ চালায়। শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো পৌর এলাকা। পরে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাভলু মিয়া (৪৫) হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি মোহাম্মদ আলীর গ্রুপের কর্মী, মধুপুর কালজনি এলাকার বাসিন্দা।

রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা হলেন মোহাম্মদ আলী সরকার গ্রুপের বিএনপি কর্মী কালুপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি এলাকার কলম উদ্দিনের ছেলে মোন্নাফ মিয়া (৬০), মিতু মিয়া (৪০) মৃত আফসার আলী ছেলে শফিকুল ইসলাম (৫০), রুহুল আমিনের ছেলে জয়নাল আবেদীন (২৫), মৃত মোহাম্মদ আলী ছেলে মুন্না খান ও মংলু মিয়া। এর মধ্যে শফিকুল ইসলামের অবস্থা খুবই গুরুতর জানিয়েছেন হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার।

এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে মাছরাঙা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ফুয়াদ হোসেন, বৈশাখী টেলিভিশনের ভিডিও সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম মুকুলসহ বেশ কয়েকজনের ওপর হামলা এবং ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন মোহাম্মদ আলী সরকারের কর্মীরা।

হামলার সময় সন্ত্রাসীরা সেখানে থাক ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের একটি গাড়ি ছাড়াও বেশ কয়েকটি দোকানপাটও ভাঙচুর করে।

এ বিষয়ে বদরগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য সচিব কমল লোহানী জানান, সংঘর্ষের ঘটনাটি বিএনপির ব্যক্তিগত, দলীয় কোনো দ্বন্দ্ব নয়। মোহাম্মদ আলী সরকার ও মানিক চেয়ারম্যান আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। যার প্রতিফলন এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। আমরা চাই না বদরগঞ্জে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটুক। এ ঘটনায় বিএনপির ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা মাঠেই রয়েছি।

যৌথবাহিনীর ক্যাপ্টেন মেহেদী জানান, বদরগঞ্জ থানার সাথে যোগাযোগ করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। আশা করি এরপর আর কোনো ঘটনা ঘটবে না। এখানকার কিছু সিসি ক্যামেরার আমরা খোঁজ পেয়েছি। কারা ঘটনার সাথে জড়িত সিসি ক্যামেরা দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশ সুপার আবু সাঈম জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছে। এ ঘটনয় এজাহার পাওয়া মাত্রই আইনীকার্যক্রম শুরু হবে।