২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে প্রাণহানি ঘটে ব্যাপক হারে, যা ‘জুলাই গণহত্যা’ নামে পরিচিতি পায়। পরে ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, তাদের ৯ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ‘জুলাই’ মাস চলতেই থাকবে। সেই ধারাবাহিকতায় ১ আগস্টকে ৩২ জুলাই হিসেবে গণ্য করা হয়।
এই দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা ও দমন-পীড়নের মুখে কর্মসূচি পরিণত হয় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে। কোথাও কোথাও ছাত্রদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং চালানো হয় গণগ্রেফতার।
ছাত্রদের পাশাপাশি কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও অধিকারকর্মীরা অংশ নেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিহতদের স্মরণে চিত্রাঙ্কন, দেয়াল লিখন, ফেস্টুন, স্মৃতিচারণ এবং অনলাইন ও অফলাইনে গণ অংশগ্রহণের ডাক দেয়া হয়।
একই দিনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে থাকা আন্দোলনের ছয়জন ছাত্রনেতার মধ্যে পাঁচজনকে দুপুরে মুক্তি দেয়া হয়। জানা গেছে, তারা দুই দিন ধরে অনশনে ছিলেন এবং শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় নিজ নিজ বাসায় ফিরেছেন।
অন্য দিকে বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।
পরবর্তী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২ আগস্ট (৩৩ জুলাই) দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ আহ্বান জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের স্মরণে জুমার নামাজ শেষে কবর জিয়ারত, মন্দির-গির্জায় প্রার্থনা এবং সারা দেশে গণমিছিল আয়োজন করা হবে।
এই কর্মসূচিতে শ্রমজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে লোকপ্রশাসন বিভাগ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। একই দিন দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়।
এ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘নীল দল’ সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের কথা উল্লেখ করে আন্দোলন বন্ধের আহ্বান জানায়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিহতদের বিচার ও নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানান।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায়, জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশী-আমেরিকানরা। তারা রেমিট্যান্স বন্ধ ও শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবি করেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বলেছে, রাষ্ট্র পরিচালনার নৈতিক অধিকার এই সরকারের নেই।
এ দিকে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সহিংসতার তদন্তে জাতিসঙ্ঘ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত। চলমান ঘটনার তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে সরকার।