অতীতের বদনাম দূর করতে উদ্যোগ নিচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষিত বেকারের লাগাম টানতে প্রতি জেলায় মনিটরিং সেল

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition

অতীতে এমন অভিযোগ ছিল যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে সমাজের জন্য শিক্ষিত বেকার তৈরি করা। তবে গত ৫ আগস্টের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই অভিযোগ গোছাতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেও অনেক শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে নিজেদের জায়গা করে নেয়ার সুযোগ না পাওয়ায় তাদেরকে শিক্ষিত বেকার বলে নিয়মিতই তিরস্কার কিংবা অবজ্ঞা করা হতো। তবে আগামী দিনে এমন বদনাম আর থাকবে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে ইতোমধ্যে কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সূত্র মতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১৯২১টি স্নাতক পাস (ডিগ্রি), ৮৮১টি স্নাতক, ১৭৬টি স্নাতকোত্তর এবং ৩১৭টি পেশাদার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, শিক্ষাকে অধিকতর জীবনমুখী ও যুগোপযোগী করার জন্য কার্যক্রম সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজও শুরু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর অংশ হিসেবে অধিভুক্ত কলেজসমূহে বিরাজমান সমস্যা বা উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নের অন্তরায় চিহ্নিত করে তা দূরীকরণের লক্ষ্যে জেলা কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন সেল গঠন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার মুন্সীগঞ্জ জেলায় প্রথম মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এই সেলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্য দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে একাডেমিক সিলেবাসের সাথে টেকনিক্যাল বা কারিগরি শিক্ষাকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে নতুনভাবে সিলেবাস সাজানো হচ্ছে। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর ৫০ হাজারের বেশি ফ্রিল্যান্সার তৈরির একটি উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ এসব তথ্য জানিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, জেলা মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন সেল গঠনে সংশ্লিষ্ট জেলার একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের জেলা কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন সেল গঠন করা হচ্ছে। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলার তিনটি কলেজের অধ্যক্ষ যাদের একজন মহিলা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক-শিক্ষা, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা বার কাউন্সিল সভাপতি, জেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি, জেলা এফবিসিসিআই সভাপতি, একটি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, একটি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক প্রতিনিধি, দুইটি কলেজের দুইজন শিক্ষক প্রতিনিধি, চারটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যাদের দুইজন ছাত্রী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন সেলের একজন প্রতিনিধি। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় এই সেল গঠন করা হবে। মুন্সীগঞ্জ জেলায় হয়েছে এই সেলের প্রথম সভা।

প্রফেসর আমানুল্লাহ জানিয়েছেন, জেলা পর্যায়ে কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন সেলের লক্ষ্য হচ্ছে কলেজ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কলেজ পরিচালনা পর্ষদ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, আইনজীবী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে কলেজসমূহের বিদ্যমান সমস্যা খুঁজে বের করে, তা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিতে সহায়তা করার পাশাপাশি দেশপ্রেম এবং নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদান করা। এ ছাড়া কলেজগুলোর জনবল ও ভৌত অবকাঠামোর অবস্থা জানার পাশাপাশি ক্লাসে শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠদান নিশ্চিত করতে চায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

ভিসি আমানুল্লাহ তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বিভিন্ন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আপনাদের প্রতি আবেদন থাকবে আপনাদের ছেলেমেয়েদের প্রতি পড়ালেখাকে ফার্স্ট প্রায়োরিটি দেবেন। তার পর আপনারা রাজনীতির কথা চিন্তা করবেন। তাদের পড়াশোনার বিষয়টি আগে দেখার চেষ্টা করবেন।