- আমানতকারীদের অর্থ ফেরতে অক্ষম
- সহায়ক জামানত যৎসামান্য
- গড় খেলাপি ঋণ ৮৩ শতাংশ
- মূলধন ঋণাত্মক
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ঋণের নামে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। নামে বেনামে জনগণের আমানতের অর্থ বের করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। এ জন্য সহায়তা করে স্বয়ং নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট হারে অর্থ নিতেন ঊর্ধ্বতন কিছু কর্মকর্তা। আর এ তালিকায় শীর্ষে ছিল তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। ব্যাংক লুটেরা এস আলম রিলায়েন্স ফাইন্যান্সকে শূন্য করে ফেলে। পরে নাম পরিবর্তন করে আভিভা ফাইন্যান্স রাখা হলেও প্রতিষ্ঠনটি দেউলিয়াত্ব বরণ করছে। এস আলম ও পিকে হালদারের শিকার হয় অর্ধডজন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বেনামী ঋণ সৃষ্টি করে অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা জনগণের আমানত ফেরত দিতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দুর্দশাগস্ত এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০টি। ইতোমধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি ১১টি পুনর্গঠন করা না হলে সে একপর্যায়ে দেউলিয়া হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি লুটপাটের শিকার হয় দেশের আর্থিক খাত। বিশেষ করে দেশের ব্যাংকিং খাত ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। একমাত্র মাফিয়া এস আলম ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেই হাতিয়ে নিয়েছে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা। যদিও এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক হিসাব। পিকে হালদারের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়। তার লুটপাটের সুবিধাভোগী মাফিয়া এস আলমও ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০টি প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ স্থিতি রয়েছে ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮৩ শতাংশের বেশি। প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে যে জামানত রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর তার মূল্য দেখানো হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিএ ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করা হলে প্রকৃত জামানত হবে আরো অনেক কম। প্রতিবেদনে সিএ ফার্মের মাধ্যমে সহায়ক জামানতের সঠিক পরিমাণ যাচাইয়ের সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য ২০ প্রতিষ্ঠান মেয়াদ শেষে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। আমানত ফেরত না দেয়া বিষয়ে অভিযোগের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ভালো ১৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সাধারণ আমানতকারীদের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সমস্যাগ্রস্ত ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্দশা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, তাদের অনেকেরই নিজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করতে পারছে না। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বছরে বেতনভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রায় ১৭২ কোটি টাকা। প্রধান নির্বাহীর বেতনভাতা, ভাড়া ও অন্যান্য ব্যয় মিলে মোট বার্ষিক খরচ হচ্ছে ২০৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অথচ নিট সুদ আয় হচ্ছে ঋণাত্মক এক হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট লোকসান হচ্ছে বছরে ১ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবিলম্বে তহবিলের জোগান দিয়ে পুনর্গঠন করার। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানগুলো আপনা আপনিই দেউলিয়াত্ব বরণ করতে হবে। তবে ইতোমধ্যে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।