আগামী অর্থবছর শুরু হবে ২০২৬ সালের ১ জুলাই। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট দেয়ার কথা আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তার আগেই। তাই এই সরকারের পক্ষে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন বা ঘোষণা করা সম্ভব হবে না। এই কাজটি করতে হবে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তার মাধ্যমে। নতুন সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরি করার সময় পাবে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মাস। এজন্য নতুন সরকারের সুবিধার্থে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বাজেটের একটি রূপরেখা দিয়ে যেতে চায়। এই রূপরেখায় পুরো বাজেটের একটি খসড়া কাঠামো দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে।
এই লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আগামী ২২ ডিসেম্বর সোমবার বাজেট সংক্রান্ত একটি উচ্চপর্যায়ে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এই বৈঠকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত এবং আগামী ২০২৬-২৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনায়’ সকালে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এখানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনামন্ত্রী ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক এবং এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের এই বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে আকার রয়েছে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। প্রথমে চিন্তা করা হয়েছিল এই অঙ্ক কাটছাঁট করে সাত লাখ ৭০ হাজার কোটিতে নামিয়ে আনা হবে। কিন্তু পাঁচ ইসালামী ব্যাংককে একীভূতকরণে অর্থসহায়তা এবং সরকারি চাকুরেদের কিছু সুবিধা দেয়ার কারণে এখন আর বাজেটের তেমন কোনো কাটছাঁট করা হচ্ছে না। তবে শেষ পর্যন্ত বাজেটের আকার এক বা দুই হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের আকার হতে পারে সাত লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার কমানো হতে পারে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ফলে সংশোধিত এডিপির আকার দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। একই সাথে রাজস্ব বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেটের প্রাথমিক আকার প্রস্তাব করা হতে পারে আট লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিপি আকার থাকবে আড়াই লাখ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের শুরুতে সরকারি চাকুরেদের জন্য আর্থিক সুবিধার একটি ঘোষণা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে মহার্ঘ্যভাতা দেয়া হতে পারে। এর অঙ্ক হতে পারে ২০ শতাংশ। আগামী সোমবার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেখানে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের দায়িত্বটি নতুন সরকারকে দিয়ে যেতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
জানা গেছে, সোমবারের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সামনে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট ও আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকারে নিয়ে একটি রূপরেখা উপস্থাপন করবেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। শুধু তাই নয়, একই সাথে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির একটি ধারণাও দেয়া হবে তাতে। এ ক্ষেত্রে বাজেট নিয়ে একটি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির নিয়ে অন্য একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হতে পারে। এই রূপরেখা বা গবেষণাপত্রটি তৈরি করছে অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিভাগ।



