- ইসরাইলের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত
- ইরানের ৩০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংসের দাবি
- তেলআবিবে মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিস্ফোরণ
- এনপিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে তেহরান
- আইআরজিসি গোয়েন্দা প্রধান ও দুই জেনারেল নিহত
ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুর ওপর গতকাল সোমবার ভোররাতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে ইরান। নজিরবিহীন হামলার জবাবে শুক্রবার রাত থেকে প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তেহরান। তবে গতকালের অভিযানটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ও ব্যাপক। এবার আরো বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে দেশটির ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। এতে প্রাথমিকভাবে কমপক্ষে আটজন ইসরাইলি নিহত হওয়ার খবর মিলেছে।
অন্যদিকে ইসরাইলও ইরানের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে। দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ইরানের ৩০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, আমরা ইরানের অন্তত ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছি। এটি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এ ছাড়া সেনাবাহিনী আরো দাবি করেছে যে, তারা ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
এর মধ্যে চলমান পরিস্থিতিতে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি থেকে সরে যেতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইরানের কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাল্টাপাল্টি হামলায় ইরানে ২২৪ জন এবং ইসরাইলে অন্তত ২৪ জন নিহতের খবর বলা হয়েছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন ও আলজাজিরার।
সোমবার ভোররাতে চালানো সর্বশেষ প্রতিশোধমূলক হামলায় আইআরজিসি একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তেলআবিব, হাইফা এবং অধিকৃত অঞ্চলের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোর (যেমন বনে ব্রাক) লক্ষ্যবস্তুর ওপর নিক্ষেপ করেছে। ১৩ জুন থেকে ইসরাইলি আগ্রাসনে ইরানের সেনা কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিকসহ বহু মানুষ নিহত হওয়ায় এর জবাবে এই পাল্টা হামলা চলছে। গত চার দিনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। হামলায় ইসরাইলের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তেল শোধনাগারও লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরাইলের ওপর হামলায় আইআরজিসির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ও গতি বাড়িয়েছে। আরো ভারী ওয়ারহেডের কারণে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পেরেছে।
সর্বশেষ হামলায় আইআরজিসি ‘ফাত্তাহ’ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলেও জানা গেছে। উচ্চ গতিসম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্র সহজেই ইসরাইলের অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম। ‘ফাত্তাহ’ ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেডে একটি গোলাকার ইঞ্জিন থাকে, যা কঠিন জ্বালানিতে চলে এবং এতে চলমান নোজেল থাকে, যার কারণে ক্ষেপণাস্ত্রটি সব দিকেই চলাচল করতে পারে। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের নিচ ও উপর দিয়ে ঘণ্টায় ম্যাক ১৩ থেকে ১৫ গতিতে চলতে সক্ষম।
ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি ইসরাইলি হামলার পর বলেছেন, ‘জায়োনিস্ট শাসকগোষ্ঠী বড় ভুল করেছে, গুরুতর অপরাধ করেছে এবং একেবারেই বেপরোয়া আচরণ করেছে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, এর ফলাফলই ওই শাসকগোষ্ঠীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং দেশের কর্মকর্তারা ও জনগণ সবাই সশস্ত্র বাহিনীর পাশে রয়েছে।’
মার্কিন দূতাবাসের পাশে ক্ষয়ক্ষতি : ইসরাইলের তেল আবিবে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাছাকাছি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এক এক্স পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন। পোস্টে রাষ্ট্রদূত হাকাবি লেখেন, ইরান থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাস ভবনের কাছে আঘাত হেনেছে। এতে দূতাবাস ভবনে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। রাষ্ট্রদূত আরো জানান, এ ঘটনায় মার্কিন কর্মীদের কেউ হতাহত হননি। সোমবার জেরুসালেম আর তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেট বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছে আলজাজিরা।
তেহরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণের দাবি : ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, আমরা তেহরানের আকাশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। তিনি আরো জানান, ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ও ড্রোন বর্তমানে কোনো বাধা ছাড়াই তেহরান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে এবং ইরানের সামরিক সক্ষমতা চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিকে এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে নতুন করে ইসরাইলি হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, ইরাক সীমান্তবর্তী ইলাম প্রদেশের মুসিয়ান শহরের পৌরসভার ফায়ার সার্ভিস ভবনে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। অন্য দিকে ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ওই অঞ্চলের একটি হাসপাতালেও বোমা বর্ষণ করা হয়েছে। দু’টি সংবাদমাধ্যমই ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, ইসরাইলের বেশ কয়েকটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইরানি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ইরানের ৩০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ধ্বংস : ইরানের ৩০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। দখলদার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা একযোগে ৫০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের অন্তত ১২০টি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। সোমবার দুই শত্রুরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান সংঘর্ষ চতুর্থ দিনে গড়ালে এ দাবি জানানো হয় বলে খবর আলজাজিরার।
ইরান ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে : ইরান এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড। তারা জানিয়েছে, এই নিহতদের বেশির ভাগই আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন না। আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরাইল দাবি করেছে, গত কয়েক দিনে ইরান প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইরানের একেকবারের হামলায় ছিল ৩০ থেকে ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র। অন্য দিকে ইরান জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
ইসরাইলে নিহত বেড়ে ২৪, ইরানে ২২৪ : ইসরাইলের ভূখণ্ডে রোববার দিবাগত রাতে একের পর এক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আটজন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। বলা হয়েছে, রাতভর তেল আবিব ও হাইফাসহ বিভিন্ন ইসরাইলি শহরে হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরাইলি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, আহত অবস্থায় প্রায় ৩০০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে গত শুক্রবার হামলা, পাল্টা হামলার শুরু থেকে এ পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুর) ইসরাইলে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। এ দিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, গত শুক্রবারের পর থেকে ইরানজুড়ে ইসরাইলের হামলায় মোট ২২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর বিবিসির।
গোয়েন্দা প্রধান ও দুই জেনারেল নিহত : দখলদার ইসরাইলের হামলায় ইরানের চৌকস ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ও সামরিক বাহিনীর দুই জেনারেল নিহত হয়েছেন। রোববার তাদের হত্যা করে ইসরাইল। ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক ইসরাইলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য করে রাজধানী তেহরানে হামলা চালানো হয়। অপর জেনারেলের নাম মোহসেন বাঘারি বলে জানিয়েছে ইরানি সরকারি সংবাদমাধ্যম।
যুক্তরাষ্ট্রকে নিন্দা জানাতে বলল ইরান : যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ভূখণ্ডে একের পর এক ইসরাইলি হামলার সমালোচনা করতে বলেছে তেহরান। পারমাণবিক ইস্যুতে কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রাখতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে এটা করতে হবে বলেছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই গতকাল সোমবার এ কথা বলেছেন বলে খবর বিবিসির। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পারমাণবিক ইস্যুতে গত রোববারের পূর্বনির্ধারিত কূটনৈতিক আলোচনা স্থগিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসমাঈল বাকাই গতকাল এ মন্তব্য করলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনাকে ‘অর্থহীন’ উল্লেখ করে মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই বলেন, আলোচনা অব্যাহত রাখতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরাইলি হামলার সমালোচনা করতে হবে।
এনপিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে ইরান : পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যেতে চায় ইরান। এ জন্য দেশটি পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই গতকাল সোমবার এ কথা বলেছেন। মুখপাত্র আরো জানান, তেহরান গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির বিপক্ষে। বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে ১৯৬৮ সালে সই করা হয়েছে এনপিটি। এখন পর্যন্ত ১৯১টি দেশ এ চুক্তিতে সই করেছে। পাঁচ বছর পরপর দেশগুলো চুক্তিটি পর্যবেক্ষণ করে।
খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইসরাইল। সেই প্রস্তাব তারা ওয়াশিংটনকে জানিয়েওছিল; কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলি প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বার্তা সংস্থা এপি এবং রয়টার্স দুইজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য এ খবর সত্য নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ইরান তার শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীদের হারিয়ে ইসরাইল আক্রমণ যখন তীব্র করেছে, সেই সময় এমন বিস্ফোরক তথ্য সামনে এলো; কিন্তু এই সময়ই কেন এমন সংবেদনশীল একটি খবর ছড়ানো হলো? এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় মার্কিন কর্মকর্তারা কেন ফাঁস করলেন? ঠিক কী কী কারণ থাকতে পারে এর পেছনে? খবরটি চাউর হওয়ার পর থেকেই এসব প্রশ্ন উঠছে।
সাবেক ইসরাইলি কূটনীতিক ও লেখক অ্যালন পিঙ্কাসের সাথে এ ইস্যুতে কথা বলেছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। তিনি বলেন, এমন সময়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই আলোচনা সামনে আনায় বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। প্রথমত ইসরাইল যদি এমন পরিকল্পনা করেও থাকে, তারা কেন যুক্তরাষ্ট্রকে জানাল? দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র কেন বিষয়টি ফাঁস করল? আলজাজিরাকে তিনি বলেন, এর পেছনে নানাবিধ কারণ থাকতে পারে।
যুদ্ধেই কখনো কখনো সমস্যার সমাধান করতে হয়-ট্রাম্প : কখনো কখনো যুদ্ধ করেই সমস্যার সমাধান করতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যখন হামলা-পাল্টাহামলা ও সঙ্ঘাত তীব্র পর্যায়ে পৌঁছেছে তখন এই মন্তব্য করলেন তিনি। এ ছাড়া ইসরাইল ও ইরান একসময় সমঝোতায় পৌঁছাবে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করেন ইসরাইল ও ইরান একসময় একটি সমঝোতায় পৌঁছাবে। তবে কখনো কখনো দেশগুলোর মধ্যে আগে যুদ্ধ বাধেই এবং যুদ্ধ করেই সমস্যার সমাধান করতে হয়। জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পাশে আছে এবং থাকবে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেননি, তিনি ইসরাইলকে ইরানের ওপর হামলা বন্ধ করতে বলেছেন কি না। রোববার নিজের সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোস্যাল’-এ দেয়া এক পোস্টেও ট্রাম্প একই রকম মন্তব্য করেন।
আরো দুই মোসাদ সদস্য গ্রেফতার : ইরানি পুলিশ জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার বৈদেশিক শাখা মোসাদের আরো দুই সদস্যকে গ্রেফার করেছে। একই সাথে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর ইরনার। ইরানের ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পুলিশ কমান্ডের মুখপাত্র সাইদ মনতাজের আল-মাহদি জানান, পুলিশ তেহরান প্রদেশের রে কাউন্টির ফাশাফুয়েহ এলাকা থেকে এই দুই মোসাদ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। ইরানি পুলিশ জানায়, এই দু’জনের কাছ থেকে ২০০ কেজির বেশি বিস্ফোরক, ড্রোন চালানোর ২৩টি সরঞ্জাম, লঞ্চার এবং আরো অনেক সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি নিসান পিকআপ ট্রাকও জব্দ করা হয়েছে।
কুদস ফোর্সের সদর দফতরে হামলা : তেহরানে কুদস ফোর্সের সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে এ কথা জানিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। আলজাজিরার খবর অনুসারে, ইরানের অভিজাত রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) ‘বিদেশী শাখা’ ধরা হয় এই কুদস ফোর্সকে। লেবানন থেকে ইরাক, ইয়েমেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত পুরো মধ্যপ্রাচ্যে মিত্র মিলিশিয়াদের ওপর কুদস ফোর্সের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তেহরানে কুদস ফোর্সের সদর দফতরে ইসরাইলি হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইরান।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি ভবনে ইসরাইলের হামলা : তেহরানে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবি-এর প্রধান কার্যালয়ে ইসরাইলি বিমানবাহিনী হামলা চালিয়েছে। হামলার কারণে টিভির সরাসরি সম্প্রচারে বিঘœ ঘটে। যদিও পরে টিভির সরাসরি সম্প্রচার পুনরায় শুরু হয়।
হামলার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সম্প্রচার চলাকালেই স্টুডিও কাঁপতে শুরু করে। ধূলা ও ধোঁয়ায় ভরে যায় পর্দা। একপর্যায়ে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি শোনা যায় পেছন থেকে। একজন ব্যক্তি রক্তাক্ত হাতে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসছেন বলেও ভিডিওতে দেখা গেছে।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ এবং আলজাজিরা জানায়, হামলার কিছু আগে উপস্থাপিকা সাহার ইমামি বলছিলেন, ‘যা শুনছেন, তা আগ্রাসনের শব্দ। সত্যের ওপর আঘাত।’ এর কয়েক সেকেন্ড পরই ঘটে বিস্ফোরণ। এ সময় স্টুডিও ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে যান উপস্থাপিকা সাহার ইমামি। তাকে দেশটির সর্বাধিক পরিচিত সংবাদমুখ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তেহরানের ওই এলাকাটি আগেই ফাঁকা করার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইরানের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করেই আঘাত হানা হয়েছে।
তবে হামলার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই আইআরআইবি তাদের সম্প্রচার পুনরায় শুরু করে। সম্প্রচার সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাসান আবেদিনি বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শত্রু জানে না ইসলামী বিপ্লব ও মহান ইরানের কণ্ঠ সামরিক হামলা করে থামানো যাবে না।