বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ

পরিচালনা পর্ষদে পাস হওয়ার পরও পে-কমিশন ভাতা মেলেনি

মনির হোসেন
Printed Edition

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকটা চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর মধ্যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু বিলের ফাইল পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে পাস হওয়ার পরও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দফতরে সেগুলো পড়ে রয়েছে। শুধু ফাইল চাপা পড়ে আছে তা নয়, প্রতি বছর হজ পোস্টিংয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঠানোর নিয়ম থাকলেও এবার সেখান থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত কর্মকর্তারা বলছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্টরাই এখনো বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবন কন্ট্রোল করছে। তাদের ইশারায় বিমানের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র ওঠানামা করে। ফলে অনেক ফাইল চালাচালির কার্যক্রম চলছে অনেকটা ধীরগতিতে। এ কারণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বদনাম হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। তাই বিমানের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এমন চিহিৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে দ্রুত সরিয়ে সেখানে যোগ্য মেধাবীদের বসানোর দাবি উঠেছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সাফিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে বরাবরের মতো তিনি টেলিফোন রিসিভ করেননি।

গতকাল বিমানের বলাকা ভবনের দায়িত্বশীল ও বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নয়া দিগন্তকে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে যারা বিমানে ব্যাপক লুটপাট অনিয়ম চালিয়েছিল, এখনো তাদের দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে দেশের রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি। মনে করেছিলাম, বিমান থেকে আওয়ামী প্রেতাত্মাগুলো দূর হয়েছে; কিন্তু এখন দেখছি তাদের ছায়াগুলোই সবখানে রাজত্ব করছে। তারা ঘাপটি মেরে আছে বিমানের ভেতরে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে।

ওই কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সবার জন্য পরিচালনা পর্ষদে আলোচনা করেই পে কমিশন অ্যালাউন্স (ভাতা) বিল দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই ভাতা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ব্যবস্থাপনা পরিচালকের টেবিলে অনেক দিন থেকেই পড়ে আছে। এর মধ্যে অনেকের পদোন্নতি-সংক্রান্ত ফাইলও জমা হয়ে আছে। তিনি কোনো ফাইলেই সই করছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলাকা ভবনের প্রশাসন শাখা-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমানের বোর্ড চেয়ারম্যান নাকি অনেক দিন থেকেই অসুস্থ। এজন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে বোর্ড থেকে আমাদের পে কমিশন বিল অনুমোদন দেয়ার পরও এমডি সেটি দিতে গড়িমসি করছেন। ফাইল তার টেবিলে ফেলে রেখেছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বিমানের বোর্ড চেয়ারম্যান অসুস্থ। তার নির্দেশনা ছাড়া এমডি কিছুই করতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। যেখানে বোর্ডে অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেখানে আবার কিসের অপেক্ষা? তারা প্রশ্ন রেখে জানতে চান, চেয়ারম্যান অসুস্থ থাকলে কি বিমানের সব গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে ? এর কি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই ? পে কমিশন বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, এটি হচ্ছে মূল বেতনের টাকা বাদ দিয়ে শিফটিং ডিউটি, ফুড, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ড্রেসসহ যত ধরনের ভাতা আছে এটাকে পে কমিশন ভাতা বলা হয়। মানে আমাদের জীবন যাত্রায় যে ধরনের খরচ বাড়ছে তার ওপর ভিত্তি করেই এ ভাতাগুলো পরিচালনা পর্যষের বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু এমডি এ নিয়ে চুপ করে আছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজের কারণগুলোর মধ্যে আরো যেসব রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রতি বছর ৬০-৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হজ পোস্টিংয়ে পাঠানো হয়। এবার সে সুযোগ থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।

গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবার বিমান ম্যানেজমেন্টের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকেই হজ পোস্টিংয়ে যেতে পারেননি। ২০২৪ সালেও ৬০-৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এক মাসের জন্য হজ পোস্টিংয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার সবাই বঞ্চিত হয়েছেন। এবার বিমানের সব সেকশন থেকে হজ পোস্টিংয়ে যাওয়ার জন্য ৫১ জনের নাম তালিকায় ছিল। তাদের একজনও যেতে পারেননি। তবে জিডি ফরমেটে ইদানীং ২-৩ জন করে ৭২ ঘণ্টার জন্য যাচ্ছে। তারা ৭২ ঘণ্টা থেকে আবার ঢাকায় চলে আসছেন। এ সময়ে তাদের কাজ হচ্ছে ঢাকা জেদ্দা ঢাকা রুটের ফ্লাইট ডিসপাস করা। এখানেও বিমানের বোর্ড চেয়ারম্যান অসুস্থ থাকার কারণ দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এমন ছোট-বড় মতামতের কারণে অনেক ফাইল স্থবির হয়ে আছে। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমান কর্তৃপক্ষের কাছে দাবির পাশাপাশি অনুরোধ জানিয়ে বলছেন, বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনায় নবীন-প্রবীণের সমন্বয় করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তারা এখন এটি দেখার অপেক্ষায় আছেন। তাহলে ফিরতে পারে কাজের গতি। কমবে অসন্তোষের মাত্রাও।