এক সময় যে দেশকে বাইরের শক্তির উপর নির্ভর করতে হতো, আজ সেই দেশকেই বলা হচ্ছে আঞ্চলিক প্রতিরোধের কেন্দ্র। গল্পটা যেন কেবল অস্ত্র বা ক্ষেপণাস্ত্রের নয়- গল্পটা এক জাতির আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার, এক জাতির বিশ্বাস আর ত্যাগের ফল।
তেহরান থেকে ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর লজিস্টিকস বিভাগ ঘোষণা করেছে, ক্ষেপণাস্ত্র, অস্ত্রশস্ত্র, মহাকাশ গবেষণা ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে ‘ইরানি জাতির সন্তানদের’ অর্জনই ইরানকে পরিণত করেছে এক আঞ্চলিক প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা শক্তির কেন্দ্রে।
জাতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দেয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্প এমন এক সাফল্য অর্জন করেছে, যা দেশকে বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরাসরি আত্মনির্ভরতার শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। এ অর্জন কেবল সামরিক শক্তি নয়, বরং জাতীয় গর্বের প্রতীক। যা গোটা অঞ্চলে ইরানকে প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড় করিয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসলামী বিপ্লবের বিজয় ও তথাকথিত ‘নির্ভরশীল পাহলভি শাসনের’ পতন, পাশাপাশি মার্কিন সামরিক উপদেষ্টাদের আধিপত্যের অবসান- এসবই প্রতিরক্ষা শিল্পে আত্মনির্ভরতা, গতিশীলতা ও অগ্রগতির নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তারা আরো জোর দিয়ে বলেছে, চার দশকব্যাপী ‘সর্বাত্মক ও অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা’ সত্ত্বেও ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্প আজ প্রবৃদ্ধি ও প্রাণশক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এটা সম্ভব হয়েছে নিষ্ঠাবান ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিশেষজ্ঞদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধ, যা ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দিয়েছিল, সেই সংঘাতে ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা পুরো বিশ্ব দেখেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও তুলে ধরেছে ইরানের মিসাইল শক্তি ও প্রতিরক্ষা দক্ষতা। একইসাথে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে, ইরানের শত্রুরা বুঝে গেছে, কোনো ধরনের দুঃসাহসিকতা বা ভুল পদক্ষেপের জবাব তারা পাবে ‘অত্যন্ত কঠিন এক চপেটাঘাত’ হিসেবে।
বিবৃতির শেষাংশে প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মীদের অভিনন্দন জানানো হয়, ইসলামী বিপ্লব ও প্রতিরক্ষার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় এবং সর্বাধিনায়ক আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনেয়ির প্রতি পুনরায় আনুগত্যের অঙ্গীকার করা হয়। একইসাথে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, ইরানের প্রতিরক্ষা শক্তিকে আরো সুদৃঢ় করতে তারা কোনো প্রচেষ্টা বাদ রাখবে না।
ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্পের এই গল্প নিছক সামরিক সাফল্যের নয়, বরং এটি এক জাতির আত্মবিশ্বাস, সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের কাহিনি। বাইরের শক্তির ছায়া থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের হাতেই ভবিষ্যৎ গড়ার এ এক জীবন্ত উদাহরণ। আজ যখন নিষেধাজ্ঞা আর চাপের মধ্যেও ইরান দাঁড়িয়ে বলছে- ‘আমরা আত্মনির্ভর’, তখন বোঝা যায়, এই অর্জন শুধু ইরানের নয়, গোটা অঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণকেই পাল্টে দিচ্ছে।