গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে অনৈক্য

নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হলে গণভোটও একই সাথে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। যারা গণভোট চান না তারা এটি কাজে লাগিয়ে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারেন।

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিন প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে একটা পর্যায়ে পৌঁছায়। বেশ কয়েকটি বিষয় বিএনপিসহ কয়েকটি দল নোট অব ডিসেন্ট দেয়। যেগুলো নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। নোট অব ডিসেন্ট কোনো অন্যায় বিষয় নয়; বরং এটি কোনো দলের একমত না হওয়ার প্রতিচ্ছবি। দুনিয়ার যেকোনো সভায় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা সংসদে দ্বিমত পোষণ করে নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার রীতি আছে। এটি স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা। সব স্থানে নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার পরও বেশির ভাগের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সভায় উপস্থিত সবাইকে তা মেনে নিতে হয়। তবে নোট অব ডিসেন্টগুলো রেকর্ডে থাকে। নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী বা তার দল ওটা নিয়ে রাজনীতি করবে বা তাদের বক্তব্য জনগণের কাছে তুলে ধরবে। এর বেশি কিছু নয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে গণভোটের প্রশ্ন আসে। গণভোট ও তার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা মত আসছে। যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নয় এবং দেশের ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই এ কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গণভোটের প্রয়োজন রয়েছে। কিভাবে হবে গণভোট? একাধিক মতামত এলেও বেশির ভাগ সদস্যের মতের বিপক্ষে যারা মত দিয়েছেন বা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন তাদের ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টগুলো গণভোটে দিলে জনগণ প্রকৃত রায় দেবেন।

গণভোট কখন হবে এ প্রশ্নটি বিরাট ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচনের আগে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বা মতভেদ বাড়ে। তার ফলে তখন দেশের রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এমনকি হানাহানি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। সুতরাং নির্বাচনের সাথে গণভোট হলে হানাহানির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। প্রাণহানি অবশ্যই গণভোটের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সব মিলিয়ে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট হলে হানাহানি ও প্রাণহানি কমানো সম্ভব হতে পারে। এ রকম ঘটনা ঘটলে গণভোট আস্থাহীন হতে পারে। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হলে গণভোটও একই সাথে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। যারা গণভোট চান না তারা এটি কাজে লাগিয়ে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারেন। এমনকি যারা নির্বাচন চান না বা নির্বাচনে জিততে পারবেন না তারাও এটি কাজে লাগিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারেন। সুতরাং বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পৃথক দিনে হওয়াই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়।