সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের দৃষ্টিতে ঐকমত্য হচ্ছে, বাস্তবসম্মত আশা আকাক্সক্ষার সমঝোতা। কারণ অন্যরা স্বাভাবিকভাবেই এগুলোতে তাদের জন্য ন্যায্যতা আছে বলে মনে করে। সে ক্ষেত্রে বড় ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীতই ঐকমত্য সৃষ্টি হতে পারে। তবে সেখানে আস্থা ও বিশ্বাসের বন্ধন থাকতে হবে। আর মার্কসবাদীদের জন্য ঐকমত্য হচ্ছে একটি উচ্চ পর্যায়ের আদর্শিক বিষয়। এটি শ্রেণিশাসন নিশ্চিত করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সমাজে বিরোধের মাত্রা হ্রাস করার উদ্দেশ্যেই এমনটি করা হয়। অনেকেই ঐকমত্য বলতে বোঝেন তাত্ত্বিকতার অবসান এবং সঙ্ঘাতের অনুপস্থিতি। এখানে মূল্যবোধ এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনই প্রাধান্য পায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে ঐকমত্য মানেই হচ্ছে আন্তঃদলীয় সমঝোতা (Cross Party Agreement)। স্বাভাবিকভাবেই এগুলোর সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং সংবিধান সভাকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। এ ছাড়াও বৃহত্তর জাতীয় লক্ষ্যের ব্যাপারে একমত হওয়ার বিষয়টিও সর্বক্ষেত্রে গুরুত্ব অর্জন করে। তাত্তি¡কদের অনেকে ঐকমত্য বলতে বোঝেন কিছু বিষয়ে নীতিগত সমঝোতা। এসব নীতিমালা রাজনীতি, সমাজনীতি ও অর্থনীতিতে গ্রহণযোগ্য হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য অর্জনের জন্য বর্তমান নীতিগুলো, ভবিষ্যৎ কার্যকারণের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করা হয়। সমাজের বিভিন্ন স্বার্থজ্ঞাপক গোষ্ঠীর সমন্বয় প্রয়াস এতে বিধৃত থাকে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণ হিসেবে জার্মানির Grand Coalition এবং অস্ট্রিয়ায় প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের উপস্থাপিত সমঝোতার কথা উল্লেখ করা যায়। পূর্ব ইউরোপে এই সময়ে ডান-বাম এর সমন্বয়ে মধ্যপন্থী ক্ষমতাবিন্যাস লক্ষ করা যায়। ১৯৭০ সালের পরবর্তী পর্যায়ে কিছু জাতীয় বিষয়ে মার্গারেট থেচারের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার উদাহরণ লক্ষ করা যায়। পাশ্চাত্যে বৃহত্তর ক্ষেত্রে উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোয় জাতীয় ঐকমত্য একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। দীর্ঘকালের অনুশীলন ও চর্চার ফলে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু যেমন- পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও উন্নয়ন কৌশল প্রভৃতি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাক্কালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলতেন, ‘পুরনো সমাজ ও নতুন রাষ্ট্র’ (Old society & new state)। অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হওয়ার পর নতুন অভিধাটি পরিত্যাজ্য হতে বাধ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রে এই দীর্ঘ সময়ও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য অর্জিত হয়নি। সমগোত্রীয়তার দিক থেকে বাংলাদেশ একটি ভাগ্যবান রাষ্ট্র। এখানে ধর্ম, ভাষা, নৃ-তত্ত্ব, ইতিহাস ও ভুগোল আমাদেরকে প্রায় একই রকম বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এদেশের রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশে কৃত্রিম জাতীয় ঐকমত্যের সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতা এবং শুধু ক্ষমতাই যাদের উদ্দেশ্য বিধেয়, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করেছে। স্বাধীনতার পরপরই স্বাধীনতার সপক্ষ-বিপক্ষ শক্তি, মুজিব নগরীয় অমুজিব নগরীয় এবং মুক্তিযোদ্ধা সেনাবাহিনী বনাম পাকিস্তানফেরত সেনাবাহিনী ইত্যাদি কৃত্রিম বিভাজন সৃষ্টি করা হয়। বাংলাদেশে বড় ধরনের রক্তপাতের পেছনে এসব কারণগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে কার্যকর ছিল।
২০২৪ সালের গণবিপ্লব সৌভাগ্যক্রমে সতত স্বাভাবিকভাবে একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত তৈরি করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর মূল কর্তা হওয়ার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের কৃতিত্ব দাবি ক্ষীণ হয়ে যায়। সে কারণে জাতীয় ঐক্য অর্জন সহজ হয়। সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষ এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানায়। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মতো জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেন। এই সরকার গণবিপ্লব তথা জন-আকাক্সক্ষার প্রতিভূ বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু সময় অতিক্রান্ত হতে না হতেই রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য দৃশ্যমান হয়। স্বাধীনতার পর থেকে বিভাজিত জাতি বিশেষত গত সতেরো বছরে রাজনৈতিকভাবে বিকারগ্রস্ত স্বৈরতন্ত্র সৃষ্ট একনায়কত্ব জাতীয় ঐক্যকে যেভাবে বিচূর্ণ করেছে সেটি পুনরুদ্ধারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগী হয়। প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক, প্রশাসনিক ও আইনগত সংস্কার সাধন করে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে একটি কাক্সিক্ষত বাস্তবতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রফেসর ইউনূস সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সংলাপ অব্যাহত রাখে। কমিশন ছয়টি সংস্কার কমিশনের কয়েকটি সুপারিশকে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে, যেগুলো আইনগত বা প্রশাসনিক উপায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এটি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ১৬৬টি মূল প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে। প্রথম পর্যায়ে, কমিশন ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সাথে আলাদাভাবে বৈঠক করে, এবং পরে ২০টি অমীমাংসিত মৌলিক প্রস্তাব নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করে। ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়, যার বেশির ভাগই বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে, পাশাপাশি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছয়টি প্রস্তাব। সংবিধান সংস্কার কমিশন ১৮টি প্রস্তাব জমা দেয়, যার মধ্যে একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবও রয়েছে, যা ৩০টি দলের সমর্থন পেলেও এর কাঠামো নিয়ে মতবিরোধের কারণে অমীমাংসিত থাকে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, আরো ১৪টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন খসড়া ভাষ্য ২৮ জুলাই চূড়ান্ত করে দলগুলোর কাছে মতামতের জন্য পাঠায়, আগস্ট-সেপ্টেম্বর জুড়ে বাস্তবায়নপদ্ধতি নিয়ে সংলাপের পর ১১ সেপ্টেম্বর খসড়া চূড়ান্ত হয় এবং ১৪-১৫ অক্টোবর চূড়ান্ত অনুলিপি দলগুলোর কাছে প্রেরিত হয়। সনদটিতে রাষ্ট্রকাঠামো, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ-সংক্রান্ত সংস্কার অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ২৫টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এতে স্বাক্ষর করেন; আমন্ত্রিতদের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও কিছু বাম দল সই থেকে বিরত থাকে। স্বাক্ষরের দিনে সংসদ ভবনের বাইরে সংঘর্ষের ঘটনা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাভারেজও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে এবং স্বাক্ষর-পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিতে গণভোটসহ বিকল্প পদ্ধতির বিষয়টি কমিশনে বিবেচিত হয়।
রাষ্ট্র সংস্কারে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে দীর্ঘ ৯ মাস মতৈক্যে চেষ্টা করে অবশেষে রাজনৈতিক দলের জন্য বড় ধরনের প্রশ্ন রেখেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ দাখিল করেছে। বাস্তবায়ন পদ্ধতির একাধিক বিকল্প রেখে চূড়ান্ত প্রস্তাব সরকারের কাছে দাখিলের ফলে এতদিন ধরে যে রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জনের আশা করা গিয়েছিল তা এখন ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজকে অসমাপ্ত বলছেন অনেকেই। এতদিন ধরে যখন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল, আরো কিছুদিন কার্যক্রম পরিচালনা করলে যদি চূড়ান্ত ঐকমত্য অর্জন করা যেত তাহলেই উত্তম কিছু হতো। অনেকগুলো বিষয়েই রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারেননি। ক. সাংবিধান আদেশ কে জারি করবেন- রাষ্ট্রপতি না প্রধান উপদেষ্টা সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য অর্জন করতে পারেনি। খ. গণভোটের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য অর্জিত হলেও ভিন্নমত রয়েছে গণভোটের সময় নিয়ে। বিএনপি নির্বাচনের দিন গণভোটের কথা বলছে। অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলগুলো নভেম্বরের মধ্যে গণভোট চাচ্ছে।
এখন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী গণভোট কখন হবে তা নির্ধারণের এখতিয়ার সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। গ. উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি নিয়েও ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অবশেষে জাতীয় সংসদে পিআর পদ্ধতি গ্রহণ না করলেও সৃষ্ট উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন সুপারিশ করেছে। ঘ. রাজনৈতিক দলের প্রধান সরকারপ্রধান হওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগসহ মৌলিক সংস্কার ইস্যুতে বিএনপির আপত্তি বা নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। ঙ. আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধানের প্রস্তাবিত সংস্কারে ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংস্কারগুলো সংবিধানে সংযুক্ত হবে বলে প্রস্তাব করেছে কমিশন। এ ব্যাপারে গুরুতর আপত্তি রয়েছে বিএনপির। চ. আগামী সংসদকে একই সাথে সাংবিধানিক পরিষদের ভূমিকা পালনের বিষয়টিতেও সম্মত নয় বিএনপি। আগেই বলা হয়েছে কমিশনের ৮৫টি সুপারিশের মধ্যে অধিকাংশের ব্যাপারে দলগুলো একমত হলেও মৌলিক প্রস্তাবে মতভিন্নতা আছে। সমাপ্তিমূলক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তনের জন্য আমরা সাংবিধানিক ক্ষমতা হিসেবে জনগণের ক্ষমতা যেন ব্যবহৃত হয় সে জন্য গণভোটের প্রস্তাব করেছি। আশা করি এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তা অর্জন করা যাবে।’
ইতোমধ্যে প্রকাশিত প্রতিক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর মন্তব্য অনৈক্য দৃশ্যমান হচ্ছে। সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশনের দেয়া প্রতিবেদনে বিএনপির দেয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো লিপিবদ্ধ না থাকায় এর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রতারণা করেছে। অপর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, কমিশন সুপারিশের মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে অনৈক্য তৈরির চেষ্টা করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে করা নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই বলে যারা বলছেন, তারা আলটিমেটলি জুলাই সনদ অকার্যকর করার অপরিণামদর্শী সর্বনাশের পথে হাঁটছে। এ থেকে বিরত থাকা উচিত। যারা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চায়, তাদের খারাপ উদ্দেশ্য জাতি বুঝে গেছে।’ পরবর্তী সময়ে তিনি আরো বলেন, ‘নভেম্বরে গণভোট হওয়ার তারিখ যত বিলম্বিত হবে, জাতীয় নির্বাচন ততই অনিশ্চিত হবে।’ এ দিকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক করে বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে কোনো দল বা কোনো শক্তি যদি মনে করে তারা এককভাবে সবকিছু করবে, এই জাতীয় ঐক্য ভেঙে দেবে বা জনগণের আকাক্সক্ষার বিপরীতে দাঁড়াবে, তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। তারা সংসদ টেকাতে পারবে না। সরকার টেকাতে তাদের কষ্ট হবে। জনগণের যে আস্থা তারা সেই আস্থা পাবে না। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নসংক্রান্ত ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ দুই সুপারিশের প্রথম প্রস্তাবনায় এনসিপি একমত বলে জানান এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম। আর সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনাটি বাস্তবায়নের উদ্যোগের সাড়া এলে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এতকিছুর পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত ফলাফল দেখে হতাশ হতে হয়। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, কমিশন দীর্ঘ সময় ধরে যে নিষ্ঠা, পরিশ্রম, ধৈর্য ও কৌশল নিয়ে কাজ করেছে, তা নিঃসন্দেহে ধন্যবাদার্হ। ভেতরের সীমাবদ্ধতা ও অপ্রকাশিত কষ্টের কথা তারাই জানেন। জনগণের কাছে বিচার্য হলো সঙ্কটের উত্তরণ। স্পষ্ট উত্তরণ না ঘটলেও যে পথ ও পাথেয় তারা দিয়েছেন তা জাতি স্মরণ রাখবে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে কষ্টকর বিষয় হলো ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান উত্তর যে জাতীয় ঐকমত্য সূচিত হয়েছিল তা অনিশ্চিত হওয়া। স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালীন সময়ে রাজনীতিকদের তরফ থেকে জনগণ আরো দায়িত্বশীল, সতর্ক ও ধৈর্যশীল আচরণ আশা করে। জাতীয় নির্বাচনের যে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথা গোটা জাতি অগ্রসর হচ্ছে তা যথাসময়ে যথানিয়মে অনুষ্ঠিত হোক এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়



