আসাদ শাসনের পতনের এক বছর পর ২০২৫ সালের ৫ অক্টোবর সিরিয়া প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করল। দেশটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, বিভক্ত এবং পুনর্গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে এই নির্বাচন নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। কিন্তু প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা জোলানির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
এই নির্বাচন ও তার পরের রাজনৈতিক বিন্যাস শুধু সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন নয়, এর সাথে যুক্ত রয়েছে বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক সমীকরণ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শারা জোলানির সম্পর্ক, যা সিরিয়ার পরবর্তী পথচলাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
অস্থির প্রেক্ষাপটে নির্বাচন
অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণার পর সিরিয়ায় নাগরিক অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে, জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বাস্তুচ্যুত বা বিদেশে শরণার্থী এবং নাগরিক রেকর্ড হয়ে পড়েছে পুরনো ও অপ্রচলিত। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী আয়োজন ছিল কঠিন প্রশাসনিক পরীক্ষা।
প্রেসিডেন্ট জোলানি একটি পরোক্ষ ভোটব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সুপ্রিম কমিটির তত্ত¡াবধানে স্থানীয় পর্যায়ের সাবডিস্ট্রিক্ট কমিটিগুলো ছয় হাজার সদস্যের একটি ইলেক্টোরাল কলেজ গঠন করে, যারা এক হাজার ৫০০ প্রার্থীর মধ্য থেকে ১২১ জন সংসদ সদস্য নির্বাচন করে। অবশিষ্ট ৭০টি আসন সরাসরি প্রেসিডেন্টের নিয়োগের আওতায় রাখা হয়, যা ‘ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলেও সমালোচকদের মতে এটি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের সূ² উপায়।
গণতন্ত্র নাকি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ
নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ উঠেছে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন ও নিরাপত্তা সংস্থার প্রভাব বিস্তারের। অভিযোগ রয়েছে, অনেক জনপ্রিয় প্রার্থীকে শেষ মুহূর্তে বাদ দেয়া হয়েছে এবং ‘বিশ্বস্ত’ প্রার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠদের পরামর্শে।
এই প্রেক্ষাপটে অনেক পর্যবেক্ষকের আশঙ্কা, নতুন পার্লামেন্ট হয়ে উঠতে পারে আসাদ আমলের মতোই একটি প্রতীকী প্রতিষ্ঠান, যেখানে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য সরাসরি প্রেসিডেন্টের নিয়োগে আসবেন, আর বাকিরাও প্রশাসনিক প্রভাবের বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না।
তবে কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ হয়তো একটি অন্তর্বর্তী পর্যায়ের বাস্তবসম্মত পথ- যেখানে স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে গড়ে তোলা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা
প্রথম সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা জোলানি। দামেস্কে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম ব্যারাক জানান, ১০ নভেম্বরের দিকে এ সফর অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাহরাইনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিবিষয়ক সম্মেলন ‘মানামা ডায়ালগ’-এর ফাঁকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন টম ব্যারাক। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, শারার এ সফরে সিরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আইএসবিরোধী জোটে যোগ দেবে।
এই সফর সিরিয়া যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। সিরিয়ার নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা হলো প্রেসিডেন্ট জোলানির যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সতর্ক কিন্তু কৌশলগত সম্পর্ক। আসাদের পতনের পর সিরিয়ার নতুন প্রশাসন দু’টি পরস্পরবিরোধী লক্ষ্য সামনে রাখে; এক দিকে রাশিয়া ও ইরানের অতিরিক্ত প্রভাব থেকে মুক্তি, অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এমন এক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন, যা পুনর্গঠনের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা, মানবিক ত্রাণ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিতে পারে।
জোলানি প্রশাসনের প্রথম কূটনৈতিক অগ্রাধিকার ছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুর্দিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে শান্তিপূর্ণ সংলাপের সূচনা, যা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়েছে। সেখানে স্থগিত নির্বাচনের বিষয়টি এখন ওয়াশিংটনের কাছে পরীক্ষার একটি সূচক- জোলানি সত্যিই কি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রকাঠামো গঠনে আগ্রহী, নাকি এটি কেবল রাজনৈতিক কৌশল?
যুক্তরাষ্ট্রও জোলানিকে এখনো শর্তসাপেক্ষ সমর্থনের মধ্যে রেখেছে। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বকে মানবাধিকার, শরণার্থী প্রত্যাবর্তন এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের মতো ইস্যুতে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে হবে। তবেই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল এবং পুনর্গঠন তহবিলের প্রবাহ সম্ভব হবে।
নতুন কূটনৈতিক ভারসাম্য
আল শারা জোলানির রাজনৈতিক কৌশল এখন ‘মাল্টি-অ্যালাইনমেন্ট’- এক দিকে রাশিয়া ও চীনের সাথে সীমিত নিরাপত্তা সহযোগিতা বজায় রাখা, অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কাছে পুনর্গঠনের অংশীদার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করা।
এটি এক ধরনের ‘ডুয়াল-ট্র্যাক ডিপ্লোমেসি’, যা সিরিয়ার দীর্ঘমেয়াদি সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথও তৈরি করতে পারে। তবে ঝুঁকিও আছে, যদি এই ভারসাম্য ব্যর্থ হয়, সিরিয়া আবারো ভৌগোলিক বিভাজন ও প্রক্সি প্রতিযোগিতার শিকার হতে পারে।
নির্বাচন থেকে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের পথে
সিরিয়ার ৫ অক্টোবর নির্বাচন এখনো চূড়ান্ত কোনো রায় দেয়নি। এটি এক দিকে একটি নতুন সূচনার প্রতীক, অন্য দিকে পুরনো আশঙ্কার পুনর্জন্ম। প্রেসিডেন্ট জোলানি যদি সত্যিই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে তার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গড়ে তোলা সতর্ক সম্পর্ক দেশটির পুনর্গঠনকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
অন্যথায় এই নির্বাচন ইতিহাসে থেকে যাবে ‘পরিবর্তনের সুযোগ হারানোর’ আরেকটি উদাহরণ হিসেবে, যেখানে গণতন্ত্রের আড়ালে আবারও ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত রাজনীতি ফিরে এসেছে।
ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক : বিরোধ ও নতুন বাস্তবতা
ইসরাইল ও সিরিয়ার সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী বৈরিতা হিসেবে বিবেচিত। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই দুই দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। গত দুই দশকে একাধিকবার শান্তি আলোচনার চেষ্টা হলেও, কোনো আলোচনাই স্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছায়নি।
আসাদ শাসনের পতনের পর সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার পরিবর্তন এবং প্রেসিডেন্ট জোলানির নেতৃত্বে নতুন প্রশাসনের উত্থান- এই প্রাচীন বৈরিতার কূটনৈতিক পরিসরে নতুন কিছু সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে।
গোলান হাইটস ইস্যু ও স্থায়ী অচলাবস্থা
ইসরাইল-সিরিয়া বিরোধের মূল কেন্দ্রে রয়েছে গোলান হাইটস- একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল, যা ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইল দখল করে নেয় এবং ১৯৮১ সালে একতরফাভাবে অন্তর্ভুক্ত করে। সিরিয়া আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী সেই দখলকে এখনো মেনে নেয়নি।
এই ইস্যুটি কেবল সীমান্ত প্রশ্ন নয়; এটি সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, জাতীয় মর্যাদা এবং আরব বিশ্বে তার অবস্থানের সাথে সরাসরি যুক্ত। তাই ইসরাইলের সাথে যেকোনো ধরনের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এই প্রশ্নে আপস না করে সম্ভব নয়- এমন বিশ্বাস সিরিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বে গভীরভাবে প্রোথিত।
নতুন প্রশাসন, নতুন বাস্তবতা
আসাদ শাসনের অবসানের পর প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা জোলানি ক্ষমতায় আসেন একটি জটিল পরিস্থিতিতে- যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি, জাতিগত বিভাজন এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সঙ্কটে। তার প্রশাসনের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল এক দিকে রাষ্ট্র পুনর্গঠন, অন্য দিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সাথে ভারসাম্য রক্ষা।
জোলানি সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপত্তা ও পুনর্গঠন সহযোগিতা অর্জনের জন্য পশ্চিমা শক্তি- বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক মজবুত করা। এই লক্ষ্য অর্জনে ইসরাইল ইস্যুটি একটি ‘কৌশলগত পরীক্ষার ক্ষেত্র’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দামেস্কের নতুন প্রশাসন সরাসরি ইসরাইলের সাথে আলোচনা শুরু না করলেও, ব্যাক-চ্যানেলে যোগাযোগ ইতোমধ্যে শুরু করেছে। এগুলো মূলত সীমান্ত নিরাপত্তা, শরণার্থী প্রত্যাবর্তন এবং দক্ষিণ সিরিয়ার সামরিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। এ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রও মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার পুনর্গঠন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ‘সংযুক্ত প্রক্রিয়া’ হিসেবে দেখছে।
ইসরাইলের দৃষ্টিকোণ : নিরাপত্তা সর্বাগ্রে
ইসরাইল বর্তমানে তার সীমান্ত নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। দেশটির দক্ষিণ সীমান্তে (কুনেইত্রা, দারা, সুইদা প্রদেশের আশেপাশে) সিরীয় ও প্রোইরানিয়ান বাহিনীর উপস্থিতি তেল আবিবকে উদ্বিগ্ন করছে। তা ছাড়া ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ও হিজবুল্লাহর পুনঃসংগঠনের আশঙ্কার অজুহাত দেখিয়ে ইসরাইল এই অঞ্চলে স্থায়ী সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, মেট হারমন ও গোলান হাইটস অঞ্চলে ইসরাইলি সেনারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করবে- যা কার্যত শান্তি আলোচনার সম্ভাবনাকে আরো দূরে ঠেলে দিয়েছে। তবুও ইসরাইলের রাজনৈতিক মহলে একটি ধারা আছে যারা মনে করে- যদি দামেস্ক নতুন নেতৃত্বের অধীনে বাস্তববাদী নীতি নেয়, তবে সীমিত যোগাযোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও ভারসাম্যের কূটনীতি
বর্তমান মার্কিন নীতি সিরিয়া ও ইসরাইলের সম্পর্ককে একটি ‘শর্তসাপেক্ষ পুনর্মিলনের প্রক্রিয়া’ হিসেবে বিবেচনা করছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হলো- প্রথমত, সিরিয়ায় মানবাধিকার, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন ও শরণার্থী প্রত্যাবর্তনে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাক; দ্বিতীয়ত, দামেস্ক ইরানের সামরিক প্রভাব সীমিত করুক; তৃতীয়ত, তার পরই ইসরাইলের সাথে সীমিত আস্থা-নির্মাণমূলক যোগাযোগে মার্কিন সহায়তা পাওয়া যেতে পারে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জোলানির প্রশাসন একটি সূ² ভারসাম্যের কূটনীতি অনুসরণ করছে। রাশিয়া ও ইরানের সাথে ঐতিহ্যগত বন্ধন বজায় রেখে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আংশিক পুনঃসম্পর্ক স্থাপন। এই ‘দ্বিমুখী কূটনীতি’ সিরিয়াকে পুনর্গঠনের অর্থনৈতিক সহায়তা এনে দিতে পারে, তবে একই সাথে ইসরাইলের সম্পর্কের অগ্রগতি সেই প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হয়ে উঠেছে।
ভবিষ্যতের ইসরাইল সম্পর্কে তিনটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট
১. আস্থা-নির্মাণ ও সীমিত সহযোগিতা : সিরিয়া ও ইসরাইল সীমান্ত নিরাপত্তা ও মানবিক ইস্যুতে আংশিক সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে। এটি ধীরে ধীরে এক ধরনের ‘নন-অ্যাটাকেশন অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা পরোক্ষ যুদ্ধবিরতিতে রূপ নিতে পারে।
২. স্থিতাবস্থা বজায় : বর্তমান পরিস্থিতির মতো কোনো সরাসরি সঙ্ঘাত নয়, আবার কূটনৈতিক সম্পর্কও নয়। সীমান্তে মাঝে মধ্যে উত্তেজনা, কিন্তু যুদ্ধের মাত্রায় নয়।
৩. সঙ্ঘাত পুনরুজ্জীবন : যদি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ইরান বা হিজবুল্লাহর উপস্থিতি বাড়ে অথবা ইসরাইল আক্রমণাত্মক সামরিক অভিযান চালায়, তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক আবারো পূর্ণ সঙ্ঘাতের দিকে যেতে পারে।
ধীরে ধীরে পরিবর্তনের সম্ভাবনা
ইসরাইল-সিরিয়া সম্পর্ক এখন এক সতর্ক পরিবর্তনের ধারে দাঁড়িয়ে। দুই পক্ষই জানে যে, পূর্ণ কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ আপাতত অসম্ভব, তবে দীর্ঘমেয়াদে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে সীমিত সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করা প্রয়োজন।
প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা জোলানির প্রশাসন যদি অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনে সাফল্য পায়, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং ইরানের অতিরিক্ত প্রভাব থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়- তবে ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করতে পারে। তবে এর বিপরীতে, যদি গোলান হাইটস ইস্যুতে কোনো সমাধান না আসে এবং সীমান্ত উত্তেজনা অব্যাহত থাকে, তবে এ ক্ষেত্রে আগামী বছরগুলোতেও অচলাবস্থা রয়ে যাবে।
অতএব, ইসরাইল-সিরিয়া সম্পর্ক আজ এক ‘সাময়িক সমঝোতা ও কৌশলগত দূরত্বের’ যুগে প্রবেশ করেছে- যেখানে প্রত্যেক পক্ষ একে অপরের প্রতি সতর্ক, কিন্তু পুরোপুরি শত্রু হিসেবেও আচরণ করতে প্রস্তুত নয়। এই সূ² বাস্তবতাই আগামী দশকের মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ গড়ে তুলতে পারে।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত



