১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভের পরও শাসনক্ষমতা না পাওয়ায় যে অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে তা অবশেষে মুক্তি সংগ্রামের রূপ পায়। নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগকে শাসনক্ষমতা না দেয়ায় ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানের অখণ্ডতা ধরে রাখা যায়নি।
পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালের বিভাজনের সময় তখন ভারতবর্ষের লোকসংখ্যা ছিল ৩৩ কোটি। এর মধ্যে ১০ কোটি ছিল মুসলমান, অবশিষ্ট ২৩ কোটির বৃহদাংশ হিন্দু ও একটি ক্ষুদ্রাংশ খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। উপমহাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ব্রিটিশ ভারতে যে দু’টি দল সর্বাধিক সোচ্চার ছিল তার একটি হলো কংগ্রেস, অপরটি মুসলিম লীগ। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই কংগ্রেস সম্পর্কে সাধারণ্যে ধারণা ছিল এ দলটি হিন্দুদের স্বার্থ সংরক্ষণে অধিক সচেষ্ট। অন্য দিকে মুসলিম লীগ সম্পর্কে ধারণা ছিল মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দলটির জন্ম হয়েছে। কংগ্রেস প্রথম থেকেই হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছিল। কংগ্রেসের জন্মের ২০ বছর পর মুসলিম লীগের জন্ম হয় এবং দলটি ভারতবর্ষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের সমন্বয়ে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবি তোলে।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকরা প্রথমত ভারতবর্ষকে ডমিনিয়নের মর্যাদা দিয়ে স্বাধীনতার প্রস্তাব দেয় এবং ওই প্রস্তাবে বলা ছিল, ডমিনিয়নভুক্ত প্রত্যেক প্রদেশ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। এরপর ভারতবর্ষের স্বাধীনতার এক বছরের কিছুকাল আগে ব্রিটিশরা তিনটি পৃথক রাজ্যগোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র (ফেডারেল স্টেট) গঠনের প্রস্তাব করে। উভয় প্রস্তাব কংগ্রেস নেতারা প্রত্যাখ্যান করেন এবং এর পরিণামে ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের প্রত্যাবর্তন-পরবর্তী হিন্দু ও মুসলিম জনগোষ্ঠী সমন্বয়ে দু’টি পৃথক রাষ্ট্র গঠন অনেকটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বি-জাতিতত্ত্ব উদ্ভাবন করে হিন্দু ও মুসিলম দু’টি পৃথক জাতিসত্তা এমন ভাষ্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হলেও এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ব্রিটিশদের ডমিনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব কংগ্রেস গ্রহণ করলে মুসলিম লীগের পক্ষে তা অগ্রাহ্য করা কঠিন হতো। কেবিনেট মিশনের যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব ভেস্তে গেলে সিদ্ধান্ত হয় হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ সমন্বয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হবে। সে সময় ভারতবর্ষের ছয়টি প্রদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এ ছয়টি প্রদেশ হলো পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত, বেলুচিস্তান, জম্মু ও কাশ্মির এবং বাংলা।
হিন্দু নেতা প্রভাবিত কংগ্রেস ভারতবর্ষ বিভাজনে সম্মত হলেও এর সাথে শর্ত দিয়ে দাবি তোলে বাংলা ও পাঞ্জাব বিভক্ত করতে হবে এবং ব্রিটিশ শাসনের অধীন ভারতবর্ষের স্বাধীন রাজ্যগুলোকে রাজার ইচ্ছানুযায়ী ভারত বা পাকিস্তান যেকোনো দেশে যোগদানের ক্ষমতা দিতে হবে। সে সময় জম্মু ও কাশ্মিরের লোকসংখ্যার অধিকাংশ ছিল মুসলমান এবং অপর দিকে জুনাগড় ও মানভেদর এবং হায়দরাবাদের জনসংখ্যার অধিকাংশ ছিল হিন্দু। এ রাজ্যগুলো মুসলিম শাসক দ্বারা শাসিত হলেও প্রথমোক্ত রাজ্যের রাজা ভারতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। অন্য দিকে শেষোক্ত দু’টি রাজ্যের রাজা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হতে চান। প্রথমোক্ত রাজ্যটির সাথে পাকিস্তানের স্থলসীমানা থাকলেও শেষোক্ত দু’টি রাজ্য চতুর্দিকে ভারত দ্বারা বেষ্টিত ছিল। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার এক বছরের মাথায় ভারত জোরপূর্বক শেষোক্ত দু’টি রাজ্য দখল করে নেয় এবং প্রথমোক্ত রাজ্যটির এক-তৃতীয়াংশ বর্তমানে পাকিস্তানের এবং দুই-তৃতীয়াংশ ভারতের দখলে।
ভারতবর্ষ বিভাজনের আগের বছর বাংলা ও পাঞ্জাবে যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়, তাতে প্রায় ছয় লাখ হিন্দু-মুসলিমের প্রাণহানি ঘটে। এ দাঙ্গার জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম নেতারা যতটুকু না দায়ী তার চেয়ে ব্রিটিশদের দায় কোনো অংশে কম নয়। বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করে পশ্চিম-বাংলা ও পূর্ব-পাঞ্জাব পৃথক প্রদেশের মর্যাদায় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেও সামগ্রিকভাবে প্রদেশ দু’টি যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং এ দু’টি প্রদেশ বিভাজনের কারণে মুসলমানদের অংশে জনসংখ্যানুপাতে ভূমির পরিমাণের যে হ্রাস ঘটেছিল তা লাঘবে ব্রিটিশদের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
পূর্ব-পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত সিলেট জেলা ভারতবর্ষ বিভাজন-পূর্ববর্তী আসামের অংশ ছিল এবং গণভোটে সিলেট পূর্ব-পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলেও মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত করিমগঞ্জ মহকুমা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই ভারতকে দেয়া হয়। বাংলা বিভাজনের কারণে পূর্ব-বাংলার অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলেও ব্রিটিশরা তা নিরসনে উদ্যোগী হয়নি। পশ্চিম-বাংলার অন্তর্ভুক্ত পশ্চিম-দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ এ তিনটি জেলা ব্যাপকভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এ তিনটি জেলা পূর্ব-পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার ক্ষতি হিসেবে ব্রিটিশদের উচিত ছিল ভারতের বর্তমান মিজোরাম, মনিপুর, ত্রিপুরা ও মেঘালয় সমন্বয়ে পূর্ব-বাংলার সীমানা নির্ধারণ।
ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান তার রজত জয়ন্তীতে পা রাখার আগেই বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়। পূর্ব-পাকিস্তানে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে এর স্বপক্ষের নেতৃবৃন্দসহ অনেক ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক-জনতা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নেয়। তারা সেখানে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করে। এদের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের। ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক-জনতার একটি অংশ ভারতের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র পেয়ে এ দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম ছিল দু’টি- মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামী। এ দু’টি দলের সমর্থকদের সমন্বয়ে যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। ‘রাজাকার’ একটি ফারসি শব্দ, এর অর্থ সাহায্যকারী অথবা সহায়তাকারী। রাজাকার বাহিনী পাকিস্তানের বেতনভোগী বাহিনী ছিল এবং তৎকালে পূর্ব-পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলায় নিয়োজিত জেলা প্রশাসকদের রাজাকার বাহিনী গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ বাহিনীর মূল দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা এবং সড়ক ও রেলপথসহ সেতু ও উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। এ বাহিনী ছাড়াও মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর দলীয় কর্মীদের সমন্বয়ে আল-শামস ও আল-বদর নামক দু’টি পৃথক বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। তবে এ দু’টি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা দলীয় নেতৃত্বের ওপর ন্যস্ত ছিল।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মাধ্যমে সমাপ্ত না হলে তা সুদীর্ঘকাল ধরে চলত; তবে তার ব্যাপ্তি কত হতো তা বলা কঠিন।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পূর্ব-পাকিস্তানে অবস্থানরত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পরাজয় অনিবার্য ভেবে ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে স্বাধীনতা-পরবর্তী মুসলিম লীগ ও জামায়াতের যেসব নেতা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন তাদের কতিপয় মুক্তিবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিহত হন; তবে অধিকাংশ কারারুদ্ধ হন। রাজাকার হিসেবে যারা যোগ দিয়েছিলেন এদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই রাজনীতির চেয়ে অর্থনীতির বিষয়টি মুখ্য ছিল। এ রাজাকারদের বেশকিছু সংখ্যক স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে বা যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন; তবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন ৩-১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে বিভিন্ন জেলা শহরের পতন হতে থাকলে পলায়নরত রাজাকারদের উল্লেখযোগ্য অংশ মুক্তিবাহিনীদের আক্রমণে নিহত হন। আল-শামস ও আল-বদর বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশের ক্ষেত্রে একই পরিণতি ঘটে।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের বিভাজনের সময় পূর্ব-বাংলার শতভাগ মুসলমান পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পক্ষে ছিল। তখন স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল মুসলিম লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের ব্যাপক জনসমর্থন ছিল না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর যেসব নেতা আওয়ামী লীগ গঠনে ভূমিকা রাখেন তাদের কারো ব্যাপারে এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, তারা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির বিরোধী ছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন এবং স্বাধীনতার অব্যবহিত পর রাজাকারদের প্রতি এ দেশের মানুষের তীব্র অসন্তোষ ও ঘৃণা ছিল এবং এর ফলে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খুব কমসংখ্যকই মৃত্যু এড়াতে সক্ষম হয়। মুসলিম লীগ ও জামায়াত নেতাদের প্রায় সবাই পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাসী হলেও তাদের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতার চেয়ে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি অধিক প্রবল ছিল।
বঙ্গভঙ্গ এবং পূর্ব-বাংলার পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি এ দু’টির পেছনে ছিল ধর্মীয় জাতিসত্তা। আর এ ধর্মীয় জাতিসত্তার মধ্যে লুকায়িত ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ। পশ্চিম-বাংলার অভিজাত হিন্দুদের বিরোধিতার কারণেই বঙ্গভঙ্গ রদ হয়েছিল এবং সে রদের সান্ত¡না হিসেবে পূর্ব-বাংলার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এনে দিলেও এর বাস্তবায়ন অভিজাত হিন্দুদের তীব্র বাধার মধ্যে পড়ে। যে দর্শনের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ব-বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সে দর্শন পাকিস্তানের অখণ্ডতা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারেনি। তাই প্রশ্ন এসে যায়, একই দর্শন ভারতের অখণ্ডতা রক্ষায় কতদিন সহায়ক হবে?
মুসলিম লীগ ও জামায়াত দলগতভাবে পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে অবস্থান নিলেও তারা যতটুকু না স্বাধীনতাবিরোধী ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল ভারতবিরোধী। আর লাহোর প্রস্তাবের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে এক বা একাধিক রাষ্ট্র গঠিত হবে এ বাস্তবতা মেনে নিলে তারা বাংলাদেশবিরোধী ছিলেন এমন ভাবার অবকাশও সীমিত।
এ কথা সত্য যে, ধর্মীয় জাতিসত্তা তাদের হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী ভারত তথা হিন্দুস্তানের অনুগামী হতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল; কিন্তু তাতে কি এ কথা বলার অবকাশ সৃষ্টি হয় তারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা অক্ষুণ্ণ রেখে পূর্ব-পাকিস্তান তথা পূর্ব-বাংলার স্বায়ত্তশাসনের বিরোধী ছিলেন?
স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন সাহায্যকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে যারা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল সেসব রাজাকার ছাড়া অন্য যাদের আজ রাজাকার বলে অভিহিত করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তকরণ প্রভৃতি অভিযোগে স্বাধীনতার অব্যবহিত পর কোনো ফৌজদারি মামলা হয়েছিল কি?
লাহোর প্রস্তাবের অনুগামী হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছিলেন তাদের এবং তাদের অনেক উত্তরসূরির ভূমিকাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয়ে একটি শ্রেণী ও গোষ্ঠী রাজাকারের ভূমিকা হিসেবে চিহ্নিত করতে সচেষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রকৃতই তারা রাজাকার হয়ে থাকলে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত যে তিনজন বিচারাধীন অবস্থায় অন্তরীণ থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের নামাজে জানাজায় কেন এত বিপুল জনসমাগম হলো? আর এ বিপুল জনসমাগম তাদেরকে রাজাকার বলে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ভাবার অন্তরায় নয় কি?
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক