বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলো তদন্ত কমিশন। চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয়টি একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের ফল ছিল। এই ষড়যন্ত্রকারীরা গায়ের জোরে এতদিন সেটি ধামচাপা দিয়ে রেখেছিল। দেশী-বিদেশী এই চক্র শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আর গোপন রাখতে পারল না। এ জন্য কমিশন-প্রধান জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে ধন্যবাদ জানাই। তার সাথে মিলে যারা কঠোর পরিশ্রম ও সাহসিকতা প্রদর্শন করে দুরূহ কাজটি সম্পাদন করেছেন, তারা সবাই কৃতিত্বের দাবিদার। পিলখানা হত্যাকাণ্ড জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিক্ষেপ করেছিল। অন্য দিকে ফজলুর রহমান কমিশন আবার যেন আশার আলো জ্বালিয়ে দিলো। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের উপযুক্ত বিচার সম্পন্ন করা গেলে তা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে গভীরভাবে বদলে দেবে। এমনকি এটি উপমহাদেশের রাজনীতির নতুন গতিপথ নির্ধারণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড হবে আগামীর বাংলাদেশের এক ব্যারোমিটার। এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, যারা এর পেছনের ইন্ধনদাতা ও সমর্থক, তারা বাংলাদেশের শত্রু। তারা যে একটি স্বাধীন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ চায় না, সেটি প্রমাণ হয়ে গেছে। এখন এই ছাঁচে ফেলে দেশের প্রতি কার কমিটমেন্ট কতটুকু তা পরিমাপ করা যাবে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়, সে দিন থেকে এদের পরিচয় প্রকাশ হতে শুরু করেছে। শত্রুদের প্রথম কাতারে রয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মাফিয়া সিন্ডিকেট। হত্যাকাণ্ডের শুরুতে ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে শেখ হাসিনা বিডিআর-প্রধানকে ফোন করে তার অবস্থা জানতে চান। তিনি তাকে আদেশ দেন, যেন কোনো ক্রসফায়ার না হয়। মোট কথা, কোনো ফায়ার না করে তাকে নিষ্ক্রিয় থাকার ইঙ্গিত দেন তিনি। আবার বলেন, অচিরেই তোমাদের সাহায্যে র্যাব ও সেনাবাহিনী পৌঁছে যাবে, হেলিকপ্টারও পাঠানো হচ্ছে।
ওই সময় পিলখানার আশপাশে থাকা র্যাব ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা পরে নিশ্চিত করেছেন, তাদের পিলখানায় ঢুকতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়। সে জন্য বিপুলসংখ্যক সামরিক সদস্য সেখানে থাকলেও কেউ পিলখানায় ঢুকতে পারেননি। দু’দিন ধরে তারা নিজেদের সহকর্মীদের হত্যাযজ্ঞ ঠায় দাঁড়িয়ে দেখেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে, হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকী এ সময় সামরিক বাহিনীর মধ্যে একটি বিকল্প কমান্ড স্ট্রাকচার প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছায়া নেটওয়ার্ক সামরিক বাহিনীর অন্য সদস্যদের সেখানে ঢুকতে বাধা দিয়েছে। অর্থাৎ, হাসিনা জেনারেল শাকিলকে সাহায্য পাঠানোর যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এটি ছিল পুরোপুরি মিথ্যা। তিনি বরং তাদের নিষ্ক্রিয় রেখে হত্যার শিকার হওয়ার ষড়যন্ত্র এঁটেছেন। হাসিনা, তারিক সিদ্দিকী এবং এই ছায়া নেটওয়ার্কে আরো কারা ছিলেন, কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের প্রধানদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
এই তালিকার সদস্যদের নাম দেখলে চোখ কপালে উঠবে। এদের বড় একটি অংশ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাদের দেশের মানুষ ভালোবাসত, পছন্দ করত। বিশ্বাস করত বলেই তাদের নির্বাচনে পাস করিয়ে সংসদে এনেছিল। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার লোকও ছিল। এরা কত বড় বিশ্বাসঘাতক, কল্পনাও করা যায় না। দায়িত্বে থেকে নিজ দেশের বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের হত্যায় তারা সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় যুক্ত হয়েছে। ভাড়াটে খুনিদের সাথে বসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা খুনিদেরকে বিডিআরের পোশাক সরবরাহ করে। যাতে তারা পিলখানায় সাধারণ বিডিআর সদস্যদের মধ্যে মিশে গিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী নিজের হোটেলে থাকতে দিয়েছিলেন এই খুনিদের। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর একটি আন্তঃদেশীয় খুনি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। এদের সাথে জড়িয়ে যায় আমাদের দেশের বিভিন্ন বাহিনীর লোকেরা। যারা দেড় দশক ধরে গুম-খুন, নিষ্ঠুর নিপীড়ন চালিয়েছে নিজ দেশের জনগণের ওপর।
চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার মূল কারণ ছিল দেশের মানুষের স্বাধীন চেতনার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া। একটি দুর্বল বাংলাদেশ বানানোর এ ষড়যন্ত্র ভারতের বহু পুরনো। হাসিনা এতে যুক্ত হয় ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার বন্দোবস্ত করতে। ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় এলে ভারতের সাথে তার চাওয়া একবিন্দুতে মিলে যায়। তদন্ত কমিশন বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘিরে প্রতিবেশী দেশের আচরণ যাচাই করেছে। তারা এই সময় বাংলাদেশ সরকারের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে কিছু ভারতীয়র নিবিড় সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে। ওই সময় বেশ কিছুসংখ্যক ভারতীয় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরা আবার বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ছেড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলেও যায়। দেখা যায়, তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ভারতীয়দের একটি অংশের বৈধভাবে বাংলাদেশ ত্যাগের কোনো রেকর্ড নেই। বিডিআরে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কয়েকজন সে দিন পিলখানায় ভারতীয় খুনিচক্র বø্যাকক্যাটের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। যারা বø্যাকক্যাট সদস্যদের দেখেছেন বলে উল্লেখ করেন, পরে দেখা গেল তাদের প্রত্যেকে খুনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন এখনো নিরুদ্দেশ। সেনাপরিবারের অনেকে জানান, তারা সে দিন পিলখানায় কিছু লোককে হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনেছেন। সবচেয়ে বড় প্রমাণটি হাজির করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন। তিনি কমিশনকে জানান, পিলখানায় সে দিন অভিযান চালাননি, কারণ ভারত হুমকি দিয়েছিল বাংলাদেশ আক্রমণের।
এ অঞ্চলে বাংলাদেশের স্বাধীনভাবে টিকে থাকা আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং করে তুলছে আরো একটি গ্রুপ। অনেকে তাদের দালাল বলে থাকে। এরা পেশাজীবী সমাজের সাথে মিশে আছে। সব ইস্যুতে তাদের কাছে ভারতের স্বার্থ প্রাধান্য পায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে হত্যাকাণ্ড শুরু হওয়ার সাথে সাথে এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তদন্ত কমিশন সাংবাদিক মুন্নি সাহা, জ ই মামুন ও মনজুরুল আহসানের সন্দেহজনক ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে। মুন্নি সাহাই প্রথম এই হত্যাকাণ্ডকে পিলখানা থেকে বিডিআর জওয়ানদের বঞ্চনার বিস্ফোরণ হিসেবে চিত্রিত করে লাইভ প্রচার শুরু করে। তখনই এটি ‘বিডিআর মিউটিনি’ নাম পেয়ে যায়। সেনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-জালিয়াতি সামনে এনে জওয়ানদের ভিক্টিম দেখানো হয়। এ কারণে বাংলাদেশী মিডিয়া সেনা কর্মকর্তাদের জীবন নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা দেখায়নি। একই প্রবণতা ভারতীয় মিডিয়ায়ও দেখা যায়। দুই দেশ থেকে একই সুরে সংবাদ প্রচার শুরু হয়। কমিশনের প্রতিবেদনে ঘটনার সময় কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা অপেশাদার বলে উল্লেখ করলেও বাস্তব পর্যবেক্ষণে এদের ভূমিকা আরো গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
জানা যাচ্ছে, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জঙ্গিতত্ত¡ আবিষ্কার করে। হাসিনা বাংলাদেশে জঙ্গি-সংক্রান্ত যে বয়ান প্রতিষ্ঠিত করেছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছিল এ দু’টি পত্রিকা। এ নিয়ে তাদের সীমাহীন বাড়াবাড়িতে বহু মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। হাসিনার পুলিশ-র্যাব এ সংক্রান্ত যত ভুয়া খবর প্রকাশ করেছে, আগ্রহ নিয়ে আগ বাড়িয়ে তারা প্রচার করেছে। সংবাদমাধ্যমের বড় অংশ তাদের অনুসরণ করেছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীর অবশিষ্ট কিছু দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাকে হুমকি মনে করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। বিডিআর হত্যার মাস্টারমাইন্ড ফজলে নূর তাপস একটি তুচ্ছ দুর্ঘটনাকে তাকে হত্যাচেষ্টা বলে সাজিয়ে মামলা করেন। সেই মামলায় তিনি পাঁচ চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসিয়ে দেন। এরপর তাদের জীবনে নেমে আসে অত্যাচার-নিপীড়নের ভয়াবহ স্টিম রোলার। সামরিক আদালতে দণ্ড দেয়া হয়। ঘটনাটি ছিল একটি এসি বিস্ফোরণের। এতে তাপস ক্ষতিগ্রস্ত হননি।
২০০৯ সালের ৬ নভেম্বর, ‘বজলুল হুদার ভাতিজা আতাউল রিমান্ডে’ শিরোনামে খবর ছাপে প্রথম আলো। ওই খবরে প্রথম আলো সেই পাঁচ সেনা কর্মকর্তার এমন পরিচয় খুঁজে বের করেছিল, যাতে তারা বাঁচার আর কোনো প্রচেষ্টা চালাতে না পারেন। সত্যিকার অর্থে তাপসের ওপর হামলা হয়েছিল কি না, তারা তা মোটেও অনুসন্ধান করেনি। এ ব্যাপারে প্রথম আলোয় কোনো খবর দেখা যায়নি। কিন্তু ঘটনার শিকার ওই পাঁচ সদস্যের রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজে তারা বের করেছিল। সামরিক বাহিনীর এই সদস্যরা সে সময় কোথাও প্রতিকার পাচ্ছিল না। মোট কথা, রাষ্ট্র তাদের সবধরনের মানবাধিকার হরণ ও বিচার পাওয়ার সুযোগ কেড়ে নিয়েছিল। এ অবস্থায় তাদের জন্য সংবাদমাধ্যম হতে পারত আশ্রয়স্থল। প্রথম আলো আশ্রয় দেয়ার বদলে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বের করে পরিস্থিতি আরো সঙ্গিন করে তোলে।
সামরিক আদালতে শাস্তি ভোগ করার পর তাদের ও তাদের পরিবারের ওপর নেমে আসে আরো ভয়াবহ নিপীড়ন। কয়েক দফায় তাদের গুম করা হয়। সেখানে তাদের ওপর নেমে আসে অবর্ণনীয় অত্যাচার। তাদের পরিবারও রেহাই পায়নি। তারাও গুমের শিকার হয়েছে। কয়েকজনের স্ত্রী ও কন্যাও গুমের শিকার হন। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে তাদের জীবন তছনছ হয়ে যায়। ৫ আগস্টের পর বেসামরিক আদালতে চলা মামলায় তারা সবাই বেকসুর খালাস পান। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের ভিত্তি পাওয়া যায়নি। এ খবর আবার প্রথম আলো ও বেশির ভাগ মিডিয়া প্রকাশ করেনি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বিডিআর হত্যা সবচেয়ে বড় মর্মন্তুদ ঘটনা। এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের স্বাধীনভাবে টিকে থাকাই হুমকিতে ফেলেছিল। আমাদের মিডিয়ায় এ নিয়ে কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়নি। এ নিয়ে গত দেড় দশকে মিডিয়া মুখে কুলুপ এঁটে ছিল। উল্টো জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে ভিত্তিহীন খবর রচনা করে ভীতি ছড়িয়েছিল। অথচ এগুলো দেশের জন্য সত্যিকার হুমকি ছিল না। বিডিআর কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরও মিডিয়া অনেকটাই নিশ্চুপ। ডেইলি খবর হিসেবেও এটি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি। প্রথম আলোর কথাই ধরা যাক। পত্রিকাটি এ খবর প্রকাশে যেন বিব্রত। একটি খবর তারা করেছে দায়সারার জন্য। প্রথম পাতায় মাঝমাঝি দিয়েছে। এমনভাবে এটি প্রদর্শিত হয়েছে যেন এটি একটি সাধারণ হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া উপলক্ষে ফজলুর রহমান যতটুকু কথা বলেছেন, সেটিও বিস্তারিত উল্লেখ করেনি পত্রিকাটি।
ডে-ইভেন্ট হিসেবে কাভার করার পরদিন থেকে প্রথম আলো আবার চুপ। এ নিয়ে কোনো সম্পাদকীয় দেখা গেল না, উপ-সম্পাদকীয়ও নেই। সমকাল খবরটি দিয়েছে, পত্রিকার প্রথম পাতার একেবারে নিচে। তাদের কাছে এ খবরের গুরুত্ব আরো কম। এরাই মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা নিয়ে পাতার পর পাতা সংবাদ ও মতামত দিয়ে পত্রিকা রাঙিয়ে ফেলে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মিডিয়ার একই প্রবণতা দেখা যায়।
স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এদের বাড়তি আগ্রহ যে কৃত্রিম সেটি বিডিআর হত্যার মতো গুরুতর ইভেন্টগুলোয় কাভারেজ আড়াল করে দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণ হয়। দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজও এদের সাথে রয়েছে। হাসিনার সময়ে জনপরিসরেও বিডিআর হত্যা নিয়ে তাদের কোনো শোক প্রকাশ কিংবা দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। এই পুরো গোষ্ঠীর মনোভাব হাসিনা ও তার নিয়ন্ত্রিত দুষ্টচক্রের সাথে মিলে যায়। বিডিআর তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাই এই পুরো গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না।
বৃহত্তর জনগণ দেশকে স্বাধীন ও ভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপমুক্ত দেখতে চায়। এ বিষয়ে তারা সচেতন। দুর্ভাগ্য হলো, ক্ষমতার সাথে জড়িত ডিপ স্টেট, মিডিয়া ও সুশীল সম্প্রদায়ের অবস্থান ঠিক বিপরীতে। এরা এমন এক অদ্ভুত স্বাধীনতা চায় যেখানে প্রতিবেশী দেশের হস্তক্ষেপ অপছন্দনীয় নয়। নিজ দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হতে দেখলেও তাদের চেতনা জাগে না। এ নিয়ে তাদের ন্যূনতম উদ্বেগও নেই। হাসিনা পালানোর পর জনগণ জেগে উঠেছে। বিডিআর হত্যা ও একে কেন্দ্র করে পূর্বাপর ঘটনায় বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চিহ্নিত হয়েছে। এখন দরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে বসে থাকা চিহ্নিত শত্রুদের অকার্যকর করে দেয়া, যাতে দেশপ্রেমিক বাহিনীকে আর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে না হয়।
মনে রাখতে হবে, পিলখানা গণহত্যা সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। এটি জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যা, হেফাজতের শাপলা গণহত্যার চেয়েও বড় ঘটনা। এটি হাসিনার ২৫০ বিলিয়ন ডলার পাচারের চেয়ে বড় একটি ঘটনা। মূলত এর দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার ঘৃণ্য অপচেষ্টা হয়েছে। ফজলুর রহমান কমিশন ভারতীয় সংশ্লিষ্টতার জোরালো তথ্য তুলে এনেছে। এখন এ গণহত্যার সাথে ভারতের যুক্ত থাকার বিষয় সরকারিভাবে ঘোষণা করা হলে কার্যত ভারত শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ যদি এটিকে সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারে, তাহলে এর দ্বারা এ অঞ্চলের রাজনীতি বদলে যাবে। প্রতিনিয়ত হস্তক্ষেপ করে অস্থিতিশীল করে রাখার ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোর যে অভিযোগ, সেটি খাতা-কলমে প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে এর মাধ্যমে মেরুদণ্ড খাড়া করে দাঁড়াবে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির গতিপথই বদলে দেবে বিডিআর হত্যা নিয়ে প্রকাশ হওয়া কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের প্রভাব।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত



