প্রবল প্রতাপশালী হাসিনার করুণ পরিণতি অল্প কিছু দিন আগেও কেউ ধারণা করেনি। ক্ষমতার এমন উগ্র দাপট এ অঞ্চলে কোনো শাসককে কয়েক শ’ বছরে চর্চা করতে দেখা যায়নি। প্রতিদিন তিনি গণমাধ্যমে এসে প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি দিয়ে দম্ভ প্রকাশ করতেন। কাউকে পানিতে চুবিয়ে মারতেন, কাউকে টুপ করে চুবিয়ে উঠিয়ে আবার জীবন ভিক্ষা দিতেন। সেই হাসিনা এখন এতটাই ক্ষমতাহীন অসহায় তুচ্ছ হয়েছেন, বাংলাদেশের একজন ভিখারিও তার চেয়ে বেশি ক্ষমতা ও সম্মান ভোগ করেন।
সাধারণ মানুষের কাছে এখন তিনি শুধু একজন নরঘাতক রক্তপিপাসু পিশাচ। তিনি যেমন মানুষের প্রতি নির্মমতা দেখিয়েছেন, মানুষ এখন তার প্রতি তেমনি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছেন। বিচারের রায়ের পর তাকে নিয়ে জনপরিসরে উপহাসের বন্যা বইছে। রায় ঘোষণার দিন ছিল তার বিয়েবার্ষিকী, এ নিয়ে ট্রলের শেষ নেই। শ্রমিক লীগের এক নেতা প্রকাশ্যে মিডিয়ায় এসে তাকে অশ্লীল গালি দিয়েছেন। জনতা তাকে রাস্তায় আটক করে হাসিনার বিরুদ্ধে কিছু বলতে বললে তিনি স্বেচ্ছায় হাসিনাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেন। এতে তার কোনো গ্লানি নেই। দেড় দশকের হাসিনার শাসনে জাতি যে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য অপমান-লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে, এটি তারই বহিঃপ্রকাশ। পালিয়ে থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে। হাসিনার বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে দেয়া কর্মসূচিতে একটি মিছিলও তারা করতে পারেনি। আট দিনের আন্দোলনে তারা সারা দেশে ৪২টি যানবাহনে আগুন দিয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ছিল অ্যাম্বুলেন্স। তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে দগ্ধ হয়ে দুই চালক প্রাণ হারিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত প্রতিবাদ বিক্ষোভ করলেই তাকে নাশকতা বলে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হতো। যদিও সেগুলো নাশকতা ছিল না। আজকে হাসিনার জন্য কিছু চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে, যা সত্যিকারের নাশকতা।
হাসিনার রাজনৈতিক জীবন শঠতা- প্রতারণা আর বিশ্বাসঘাতকতার উদাহরণে ঠাসা। যারাই তার উপকার করেছেন তাকেই তিনি নির্মম ও নিষ্ঠুর আঘাত করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া তাকে ভারত থেকে সসম্মানে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। তার পরপরই জিয়া হত্যার শিকার হন। পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত জিয়া ও তার পরিবারের প্রতি চরম শত্রুতা চালিয়ে গেছেন হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়ে পাকিস্তানের ভাতা খাওয়া হাসিনা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াকে বলেছেন পাকিস্তানের চর। জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরপরই হাসিনা বলেছিলেন, এক দিনের জন্যও তাকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না। জ্বালাও-পোড়াও করে বাংলাদেশকে অস্থির করে রেখেছিলেন। হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তার বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন হয়ে ওঠে সন্ত্রাসী মাফিয়াগোষ্ঠী। সত্যিকার অর্থে, খালেদা জিয়া এক দিনের জন্যও শান্তিতে দেশ শাসন করতে পারেননি প্রথমবার। আওয়ামী লীগ তখন ১৭৬ দিন হরতাল পালন করে।
এর বিপরীতে হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ দূরে থাক, মামলা করে বিচার করার উদ্যোগও নেননি খালেদা জিয়া; বরং তার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় মাতলামি করে রাস্তায় মানুষ হত্যা করে বিএনপি সরকারের উদারতা ব্যবহার করে বিচার এড়িয়ে বিদেশ চলে যায়। এ দিকে তার প্রতিদান হিসেবে খালেদা জিয়া পেয়েছেন এতিমের অর্থ মেরে দেয়ার দণ্ড। অথচ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো সেই অর্থ আছে। খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হয়েছে। তাকে চিকিৎসা নিতে দেয়া হয়নি। তারেক রহমানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন হাসিনা। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের পা ধরে সালাম করেন। উদ্দেশ্য হাসিলের পর শুরু হয় দলটির ওপর সীমাহীন নির্যাতন। দলটির প্রথম সারির নেতাদের বিচারিক হত্যা করে সাফ করে দেন। এভাবে যার থেকেই তিনি সুবিধা নিয়েছেন, তারই বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন। যখনই কোনো অঙ্গীকার করতেন, সেটি তিনি ভঙ্গ করতেন। পরপর তিনটি অবৈধ নির্বাচনের প্রতিটিতে তিনি রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতাই করেছেন। তিনি যা বলতেন তা করতেন না, যা করতেন তা বলতেন না।
তিনি মানুষের সব ধরনের অধিকার অস্বীকার করেছিলেন। প্রতিকার পাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মানুষের সাধ্য ছিল না তাকে বৈধ উপায়ে পদচ্যুত করার। তার পরিচিত বিরোধীরা কেউ তাকে হঠাতে পারেনি। আবাবিল পাখির মতো তৃতীয় পক্ষ অলৌকিকভাবে রাস্তায় নেমে এসেছিল। তারা সিসাঢালা প্রাচীরের মতো দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। হাসিনার বাহিনী বলেছিল- একটি মারলে একটি যায়, বাকিডি যায় না। অর্থাৎ- রাস্তায় নামা আবাবিল জীবনের ভয়ে ভীত ছিল না। গত বছরের জুলাই থেকে হাসিনার ওপর প্রকৃতির প্রতিশোধ একে একে ঝরে পড়ছে। রাজনৈতিক জীবনে একের পর এক যেসব পাপ তিনি করেছেন, সেগুলো নেমে আসছে তার ওপর। তিনি যেমন বিরোধীদের অধিকারহীন করেছেন, তেমনি প্রকৃতিও এখন তাকে অধিকার শূন্য করে দিয়েছে। তার জন্য কোনো দরজাই এখন খোলা নেই।
অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়ে তাতে নিজেই পড়লেন হাসিনা
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুন্যালের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনাল একদিন হাসিনার ফাঁসি দেবে’। হাসিনা পার্শ্ববর্তী দেশের ইন্ধনে ২০০৯ সালে এ আদালত সৃষ্টি করেন। দেশপ্রেমিক নেতৃত্বকে বিচারের নাটক করে নিধন করা এর লক্ষ্য ছিল। সালাহউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় সালাহউদ্দিন কাদের ছিলেন পাকিস্তানে। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি সেই সময় যাদের সাথে বসবাস করছিলেন তাদের ঢাকায় আনার চেষ্টা চালান। তাদের মধ্যে দেশটির উচ্চ আদালতের বিচারকসহ সম্মানিত ব্যক্তিরা ছিলেন। সরকার তাদের কাউকে তার মামলার সাক্ষী হিসেবে আসতে দেয়নি। যেই অপরাধের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, সেই অপরাধের দায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর আজ সালাহউদ্দিন কাদেরের সেই বক্তব্য সত্য হলো। হাসিনা অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়ে তিনি নিজেই তাতে কবরস্থ হয়েছেন।
মানুষের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের সর্বোচ্চ নজির সৃষ্টি করেছেন হাসিনা। সালাহউদ্দিন কাদেরকে হত্যার পর তার ছেলেকে গুম করে দেয়া হয়। একই ধরনের ব্যবহার দেখা গেল গোলাম আযম ও মীর কাসেম আলীর সন্তানদের নিয়েও। হুম্মাম কাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলেও ব্রিগেডিয়ার আযমি ও ব্যারিস্টার আরমানকে আয়নাঘরের গুপ্ত প্রকোষ্ঠে আটক রাখা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে যাদের তিনি ফাঁসিয়েছিলেন প্রত্যেকের পরিবারের প্রতি তিনি সর্বোচ্চ নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেছেন। তাদের জানাজা পড়তে বাধা দেয়া, পরিবারের অমতে দাফন এবং পরিবারের সদস্যদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছিল। এই নৃশংসতা প্রকৃতির তরফ থেকে এখন হাসিনার ওপর নেমে এসেছে। তার জন্য কোথাও কোনো আশ্রয় নেই, করুণা নেই। তার রায়কে ঘিরে দেশে কোনো ধরনের শক্তি প্রদর্শন করতে না পারায় ভারতের কাছেও তিনি গুরুত্ব হারিয়েছেন। তিনি এখন সমাহিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা একটি লাশ। সৎকার করা না হলে পচে গন্ধ বের হবে। দিন যত যাবে- গন্ধ তত বাড়বে। ভারত এই দুর্গন্ধ কতদিন নাকে রুমাল দিয়ে ঠেকাতে পারবে, এখন তার অপেক্ষা।
২০১৩ সালে হাসিনা ভারতের সাথে একটি বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি করেন। সেই চুক্তির লক্ষ্য ছিল- চাওয়া অনুযায়ী লোকদের ভারতের হাতে তুলে দেয়া। অনুপচেটিয়াসহ তাদের নিশানা করা ব্যক্তিদের চুক্তিবলে অনায়াসে ভারত নিয়ে গেছে। জঙ্গিসংক্রান্ত হাসিনা-ভারতের যে বয়ান তার পক্ষে স্বার্থ উদ্ধার করা হয়েছে এর মাধ্যমে। এখন এই চুক্তি হাসিনার গলার ফাঁস হয়েছে। আদালত তার বিরুদ্ধে দণ্ড দেয়ার পর, ওই চুক্তি বলে ভারতের কাছে তাকে ফেরত না দেয়ার আর কোনো সুযোগ অবশিষ্ট নেই, গায়ের জোর প্রদর্শন করা ছাড়া। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনা ও তার সহযোগী আসাদুজ্জামানকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্য করেছে, এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশে আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞা। এ দিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন ঠাণ্ডায় জমে হিম হয়ে আছে। তারাও একটি বিবৃতি দিয়েছে; কিন্তু তাতে তারা কী বলেছে কিছুই স্পষ্ট বোঝা যায়নি। তবে এখন তাদের একটি কথা পরিষ্কার- তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ চায়। হাসিনার পালানোর পর তারা এই একটি শব্দ জপে যাচ্ছে। যদিও এর আগে তারা নির্বাচনের ব্যাপারে যখনই কথা বলেছে, এটিকে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে হাসিনাকে ব্লাঙ্ক চেক দিয়ে গেছে। বিবৃতির ভাষা প্রয়োগে পরিষ্কার বোঝা গেছে, ভারত তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। হাসিনাকে তারা যে রক্ষা করতে পারবে না, বিবৃতির ভাষার মধ্যে সেই টোন আছে।
আদালত হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সম্পদ জব্দের আদেশ, একই সাথে জুলাই পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারকে। বর্ষা-বিপ্লবে ২০ হাজারের বেশি মানুষ গুরুতর আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন। বেঁচে থাকা এই যোদ্ধারা সাহায্য পাওয়ার বেশি ভাগীদার। এদের সহায়তায় সরকারের বড় ধরনের অর্থ ব্যয় হবে। এ দিকে হাসিনা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। প্রাথমিকভাবে দেশে থাকা হাসিনার সম্পদ জব্দ করে এদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কাজটি শুরু হতে পারে। হাসিনা নিজেই যুদ্ধাপরাধ মামলাকে কেন্দ্র করে তার বিরোধীদের সম্পদ কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন। ক্ষমতায় থাকলে ইতোমধ্যে সেটি হয়তো তিনি বাস্তবায়ন করে ফেলতেন। তার সহযোগী মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এ নিয়ে সুর তুলেছিল।
এ জন্য হাসিনার আমলে একটি বিশাল তদন্ত প্রতিবেদন হাজির করা হয়। ট্রাইবুন্যালে হাজির করা ৯ হাজার ৫৫৭ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ১২৭টি প্রতিষ্ঠানকে চিন্নিত করা হয়। তাদের মতে, এসব প্রতিষ্ঠান ধর্মের নাম ব্যবহার করে কার্যক্রম চালায়। আসলে এগুলো ছিল ইসলামী ব্যাংক ও ইবনে সিনার মতো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এমনকি সংবাদ প্রতিষ্ঠান দৈনিক সংগ্রামও এতে ছিল। এর মধ্যে ছিল ৪৩টি এনজিও, ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১০টি হাসপাতাল-ক্লিনিক। মূলত এগুলো চালাত জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত রাজনীতিকদের কেউ কেউ। এ সবগুলো ছিল বিভিন্ন ব্যক্তির উদ্যোগ। এর দ্বারা দেশ, দেশের জনগণ ও অর্থনীতি উপকৃত হচ্ছিল। প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে হাসিনার সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়ে দিলেন আদালত। টুঙ্গীপাড়ায় তার বিশাল সাম্রাজ্য এখন জুলাইতে আত্মদানকারীদের জন্য যাচ্ছে, তিনি যাদের একসময় রাজাকারের সন্তান বলে উপহাস করছিলেন।
বাম ও মিডিয়াপাড়ায় নীরব বেদনা
রায় ঘোষণার পর বামপাড়ায় নীরবতা নেমে এসেছে। সিপিবি-বাসদের নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিএনপি-জামায়াতের লোকদের যখন ঝুলিয়ে দিচ্ছিল, তখন এরাই গরম গরম বিবৃতি দিয়ে সেগুলোকে স্বাগত জানাত। বাংলাদেশে হসিনার আশ্রয়ে থাকা বিভিন্ন সেক্টরে এদের সদস্য একসাথে রোল তুলত। আরো কিভাবে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি নিশ্চিহ্ন করা যায় তার রূপরেখা তুলে ধরত। মিডিয়ায় থাকা তাদের এই বিশাল বাহিনী এখন কোনোভাবে তাদের অন্তরের ব্যথা প্রকাশ করতে পারছে না। তবে গুজব ছড়াতে ভারতীয়দের সাথে তারা সক্রিয় রয়েছে। হাসিনা পালানোর পর থেকে সংবাদ প্রতিষ্ঠান বিবিসি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে। ক্রমাগত তারা প্রতিবেদন করে যাচ্ছে যাতে দলটিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক রাখা যায়। হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পরও আইনি প্রক্রিয়ায় হাসিনা কিভাবে বেঁচে যেতে পারেন, তার স্বপ্ন বুনতে তারা সাহায্য করছে। বিবিসি বলছে, এটি বিচারের শেষ ধাপ নয়। জামায়াতের কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ‘হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রমাণিত হলে’ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের দাবির মুখে আইন সংশোধন করে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ করে দেয়া হয়। এই সুযোগ নিয়ে কাদের মোল্লার শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
মামলা চলাকালে আইন পরিবর্তন করে শাস্তির বিধান বাড়িয়ে কাউকে দণ্ডিত করে তার রায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে তার দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ সভ্য পৃথিবীতে নেই। এই নিষ্ঠুরতা ও বেআইনি কাজকে জান্নাতুন তানভী লিখিত বিবিসি সংবাদে হাসিনার শাস্তি কমার বা খালাস পাওয়ার সুযোগ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি পাওয়ার আইনি নজিরকে এই প্রতিবেদনে হাসিনার জন্য একটি আশার আলো হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেয়ার সময় আদালত তার বিরুদ্ধে দেয়া দণ্ডকে ‘মিসকারেজ অব জাস্টিস’ বলে মন্তব্য করেছিল। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, তাহলে কি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাসিনার বিরুদ্ধে দেয়া এই রায় মিজকারেজ অব জাস্টিস? এই প্রশ্ন সংবাদপ্রতিষ্ঠানকে করা উচিত। বাংলাদেশের মূল ধারার মিডিয়া হাসিনার পক্ষে নামার সাহস করছে না। তবে তলে তলে তাদের করা হা-হুতাশ প্রকাশ হয়ে পড়ছে।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত



