বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান দেখছি, আমি উদ্বিগ্ন।’ এরপর সব মিডিয়া একযোগে এ বিষয়ে খবর ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করছে। টিভি স্টেশন এতদিনে একটি উপযুক্ত টপিক পেয়েছে। ধুমছে এ নিয়ে টকশোর আয়োজন করছে। হাসিনা পালানোর এক বছরে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে প্রথম আলো মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকারটি নেয়। সাক্ষাৎকারের মূল বিষয়টি ছিল- রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থা। মির্জা ফখরুলের জবাবটিও পত্রিকাটির প্রত্যাশা অনুযায়ী মিলেছে। এখন সবাই দক্ষিণপন্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এজন্য বাংলাদেশের মানুষ অনেকটাই কাঠগড়ায় দাঁড়ানো। ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে তারা বিষম এক অন্যায় করছেন। তবে মিডিয়ার আলোচনার কোথাও মানুষের ডানপন্থার প্রতি ঝোঁকার আসল কারণটি সেভাবে উল্লেখ নেই।
ডানপন্থার উত্থান যেভাবে হলো
২০১৬ সালে কল্যাণপুরে জাহাজবাড়িতে ৯ তরুণকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়িতে আটকে রাখার পর পুলিশের বিশেষ শাখা- সোয়াত ও সিটিটিসি গিয়ে তাদের গুলি করে হত্যা করে। এরা সবাই ছিল ইসলামী ভাবধারায় বিশ্বাসী। কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ ছাড়া তাদের আটক ও হত্যার পর পরিবারগুলোকে কোনো মামলা করা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মামলা করবে কী, তাদের সন্তানরা জঙ্গি- সেজন্য উল্টো পরিবারকে ভীষণ চাপে পড়ে যেতে হয়েছে। আওয়ামী সরকারের সময়ে তাদের বঞ্চিত-নিগৃহীত হয়ে তৃতীয় শ্রেণীর জীবনযাপন করতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পর পুলিশের তৎকালীন আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ বিষয়ে মামলা হয়।
মামলার শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ওই ৯ তরুণকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে বহু আগে। কেউ কেউ ডিবি হেফাজতে ছিলেন দুই-তিন মাস ধরে। সেখান থেকে তাদের ধরে নিয়ে রাতে ওই বাসায় জড়ো করা হয়। পরে রাতের বেলা ব্লক রেইডের কথা বলে সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই হাজির হন। সেই লোকদের গুলি করে হত্যা করে জঙ্গি হত্যা করা হয়েছে বলে তারা প্রচার করেন। তাজুল মন্তব্য করেন, একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য ইসলামিক ভাবধারার মানুষদের জঙ্গি নাম দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জাহাজবাড়িতে হত্যার শিকার তরুণরা সমাজের মধ্যবিত্ত থেকে আসা।
পরের বছর ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ডে একটি জঙ্গি ঘটনার মঞ্চায়ন করা হয়। একটি বাড়িকে ঘিরে ফেলা হয়। সেখানে স্থানীয় পুলিশ, র্যাব, পুলিশের বিভিন্ন বিশেষ টিম অংশগ্রহণ করে। চট্টগ্রাম থেকে হাজির হয় পুলিশের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বাড়ির আশপাশে কাউকে ঘেঁষতে দেয়া হয়নি। পরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। পাঁচ জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর ছড়ানো হয়। বাস্তবে আত্মঘাতী হামলায় যারা মারা গেছে তারা কেউ ওই বাড়ির বাসিন্দা ছিলেন না। বাইরে থেকে তাদের ধরে সেখানে জড়ো করা হয়েছিল। তার আগে সেখান থেকে বের করে নেয়া হয়েছিল আসল বাসিন্দাদের। পাশের এক দোকানি দেখতে পান, একটি দেহের নিচের অংশ এক খাদে পড়ে আছে। সেটি পুলিশের দাবি করা স্থানীয় বাসিন্দার দেহ নয়। একই দাবি করেন বাড়ির মালিক। তিনি জানান, মারা যাওয়া ব্যক্তিরা পুলিশের দাবি করা তার বাড়ির ভাড়াটিয়া নন। পরে জানা যায়, এরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে আনা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। এদের বানানো হয়েছিল জঙ্গি দমনের ঘুঁটি। হোলে আর্টিসান হামলায় জড়িত আটজনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। তাদের চারজন ২০১৬ সালে হোলে আর্টিসানে হামলার আগে থেকে ডিবি হেফাজতে ছিল। ওই ঘটনার পর জঙ্গিবাদের নাম করে সমাজের উচ্চ শ্রেণীকে নিশানা করা হয়। আমেরিকার অনন্ত যুদ্ধের সমর্থনে হাসিনা দেশে জঙ্গিবাদ এনেছিলেন। ওই কার্ডের ব্যবহার সমাজের সব শ্রেণীকে আক্রান্ত করেছিল। মানুষ জেনেছিল, ধর্মীয় পরিচিতির কারণেই তারা সরকারের কোপানলে পড়ছেন।
হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে বাংলাদেশকে ইসলামী জঙ্গিদের উর্বর ভূমি- এটি দেখানো দরকার ছিল। এর প্রথম প্রদর্শনী হয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। সেদিন ৬৩ জেলায় একসাথে ৫০০ স্থানে বোমা হামলা হয়। জেএমবি ওই হামলা ঘটায়। ওই সময় বেগম জিয়া চীন সফরে ছিলেন। ওই হামলায় বাংলাদেশের শত্রুরা এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে। তারা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে, সেটি প্রমাণ করেছে। বেগম জিয়ার চীন সফরকেও ব্যর্থ করে দিতে পেরেছিল। গুরুত্বপূর্ণ সূচি বাদ রেখে তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছিলেন। তখন সরকার পূর্বমুখী কূটনীতির জোর উদ্যোগ নিয়েছিল। জঙ্গি হামলার ঘটনা দিয়ে শুরুতে ওই সম্ভাবনাময়ী কূটনৈতিক উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দেয়া গেছে। ২০ বছর পর এখন চীনের সাথে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে হচ্ছে।
২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে হাসিনা তার সাড়ে ১৫ বছরের মেয়াদে শত শত জঙ্গি ঘটনা মঞ্চস্থ করেছে। এগুলো সব সরকারি উদ্যোগে একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার আওতায় হয়েছে। সাবেক আইজিপি শহীদুল হক বই লিখে তা স্বীকার করেছেন। প্রথমে তারা ইসলামী রাজনীতিকে নিশানা করে। পরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে দমনের জন্যও একই জঙ্গি কার্ড ব্যবহার করে। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমগোত্রীয় আরেকটি শব্দ ‘নাশকতা’ হাসিনা সরকার বিপুল ব্যবহার করেছে। এই নাশকতা করার জন্য বিএনপির প্রায় সব নেতাকর্মী মামলা খেয়েছেন। বেগম জিয়াও বাদ যাননি। ধীরে ধীরে এর আওতা আরো বাড়তে থাকে। জঙ্গি নাটকে প্রাণ হারানো বহু ব্যক্তির পরিচয় বের করলে দেখতে পাবেন, এদের সাথে ইসলামী রাজনীতির কোনো সম্পর্ক ছিল না। দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ট্যাক্সিচালকÑ এই শ্রেণীর খেটেখাওয়া মানুষ ভুক্তভোগী হয়ে গেছেন। আবার দেখবেন, এরা কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মীয় পরিচয়ের নয়। ভুক্তভোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে, মুসলমান হওয়ার কারণে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার তারা হয়েছেন। বিগত হাসিনার শাসনে বাংলাদেশের একটি পাড়া-মহল্লাও বাদ নেই যেখানে কোনো না কোনো মাত্রায় একজন লোক তার মুসলমান পরিচয়ের কারণে বঞ্চনার শিকার হননি। এরাই এখন জেগে উঠেছেন। এদের ডানপন্থী বলে গালি দিলে অন্যায় হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাও ভিক্টিম হয়েছেন মুসলমান হওয়ার কারণে। সাধারণভাবে দেশের মানুষকে দমন করার জন্য জঙ্গি তকমা দেয়া হতো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এর নাম ছিল ‘শিবির’। হাসিনা ক্ষমতায় আসার অল্প কিছু দিনের মধ্যে ছাত্রদল ও শিবিরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উৎখাত করা হয়েছে। এরপর দমন-পীড়নের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল ‘শিবির’ পরিচিতি। কাউকে অধিকারহীন করার জন্য শিবির বানিয়ে দেয়া হতো। এরপর তার আর আইনগত অধিকার পাওয়ার সুযোগ ছিল না। শিক্ষকরা ভুলেও শিবির পরিচয়ের কাউকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসতেন না। পুলিশ তাদের পীড়ন করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকত। হাসিনা পরিবেশটাই এমন বানিয়ে নিয়েছিলেন। কেউ যদি শিবিরকে দয়া দেখাত, তার অবস্থা হতো তার চেয়ে খারাপ। মূলত এই পীড়নও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গেছে। কেউ নামাজ পড়লে, সালাম দিলে, ভালো ব্যবহার করলে তাকে শিবির তকমা দিয়ে দেয়া হতো। এরপর তাকেও নির্যাতন-বঞ্চনা কিংবা হত্যাযোগ্য করা যেত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯০ শতাংশ ছাত্র এই অন্যায্য ব্যবস্থার জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। এখন তারা জেগে উঠছে। এটিকে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডানপন্থার উত্থান বলে কলঙ্কিত করতে পারি না।
এর চূড়ান্ত নজির ছিল বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ। ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেনÑ ১. সাতচল্লিশের দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ছয় মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিয়েছিল। ২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েক বছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চায় না, সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড় লাখ কিউবিক মিটার পানি দেবো?
ভারত সফরে গিয়ে ফেনী নদীর পানি দিয়ে এলে আবরার এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ফেসবুকে। যেখানে তিস্তার পানি প্রাপ্তি নিয়ে হাসিনা মোদির সামনে একটি কথাও বলতে পারেননি। দেশের প্রতি ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হওয়াকে বুয়েটের ছাত্রলীগ অপরাধ গণ্য করেছে। তার ওপর সে একজন নামাজি ছিল, তার দাড়িও ছিল। আবরারের ধর্মীয় মনোভাব, সাথে ভারতের সমালোচনা তাকে শিবির বানিয়ে দেয়। তাকে যখন মুসলমান হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেখানে তার বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মের ছাত্ররাও অংশ নিয়েছিল।
অর্থাৎ- সংখ্যাগুরু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের একজনকে তার ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণে হত্যাযোগ্য করা হচ্ছে। রাতভর পিটিয়ে তাকে হত্যা করার অভিযানে কয়েকজন হিন্দু ছাত্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। হাসিনার শাসনের এটি আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল। যেখানে সংখ্যালঘুদের দিয়ে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে হত্যা, খুন ও জঘন্যভাবে দমানো হয়েছে। এ কাজে পুলিশের ব্যবহার তিনি করেছেন। বনজ কুমার, বিপ্লব ও প্রদীপের মতো নরপশুদের এ কাজে দেখা গেছে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের প্রায় সব মানুষ এদের অত্যাচারে মানসিক পীড়নের শিকার হয়েছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন, কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এরা অধিক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং মুসলমানদের ওপর চড়াও হতে পারছে।
আবরার ফাহাদ হত্যাকে কেন্দ্র করে পুরো দেশ ফুঁসে উঠেছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ড্রেস রিহার্সেল ২০১৯ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসে হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সব ছাত্র-শিক্ষক ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এতে যোগ দেয় ছাত্রদের অভিভাবকরা এবং সাবেক ছাত্ররাও। জনতার ঐক্যবদ্ধ হুঙ্কারে সেদিন ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ পালিয়ে যায়। ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সেদিন ওই ঘটনাকে কেউ,একজন শিবির হত্যা হিসেবে নেয়নি। তারা এটিকে নিয়েছে একজন বাংলাদেশী মুসলমান হত্যা হিসেবে। তারা দেখতে পেয়েছে, ধর্মীয় পরিচয় কিভাবে তাদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। সংখ্যাগুরু হওয়া অপরাধ হয়ে যাচ্ছে, এ জন্য তাদের ওপর পীড়ন নেমে আসছে, সেটি তারা ঠেকাতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে যারা ধর্ম মানে না, তারাও আক্রান্ত হবে। কারণ তাদের পিতৃ প্রদত্ত নামটি মুসলমান। আপনি যতই ধর্মনিরপেক্ষ হোন, এমনকি ধর্ম যদি একেবারে না-ও পালন করেন, তাহলেও আপনাকে এ জন্য মূল্য চুকাতে হবে। বাংলাদেশের সমাজে হাসিনা-পরবর্তী তার একটি বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে।
ভারতের পরিচয়বাদী হয়ে ওঠা ও আমাদের ডানপন্থা
ভারত ক্রমেই একটি অসহিষ্ণু ধর্মীয় কর্তৃত্ববাদের উত্থান হয়েছে। সেখানে সংখ্যলঘুরা ক্রমাগত কোণঠাসা হয়ে উৎখাতের মুখে পড়েছে। গুজরাটে মুসলিম নিধনের জন্য অভিযুক্ত নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা নিয়েছেন। এরপর দেশের মধ্যে উগ্রতা আরো বেড়েছে। গো-রক্ষার নামে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। বুলডোজার দিয়ে মুসলমানদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এগুলো চলছে পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়।
বাংলাদেশকে নিশানা বানানো হয়েছে। হাসিনা পালানোর পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত পুরোপুরি শত্রুতার নীতি গ্রহণ করেছে। সীমান্তে প্রতিনিয়ত হত্যা চালানোর পর এখন নেয়া হয়েছে বাংলাভাষীদের ধরে এনে পুশইন করার প্রকল্প। রোহিঙ্গাদেরও তারা এ দেশে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন নাগরিক আইন করে পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতের বাংলাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশের জন্য তাদের একমাত্র পছন্দ হাসিনা। অথচ তিনি বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন। মানবাধিকার চরম লঙ্ঘন করেছেন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুপ্ত কারাগার বানিয়ে দেশটিকে এক নরকে পরিণত করেছেন। অন্যদিকে, হাসিনার প্রাণের বন্ধু মোদি। তিনি স্বাধীনতর সুবর্ণজয়ন্তীতে তাকে অতিথি করে ঢাকায় আনেন। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয় হেফাজতে ইসলাম। তাদের কর্মসূচিকে নিষ্ঠুরভাবে দমানো হয়েছে। এ উপলক্ষে হাসিনার বিভিন্ন বাহিনী ও দলীয় লোকরা মসজিদে ঢুকে মানুষের ওপর হামলা করেছে। মোদির আগমনের প্রতিবাদ করায় ১৭ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। মুসলমানদের প্রাণের চেয়ে নরেন্দ্র মোদির সম্মান-মর্যাদা হাসিনার কাছে বেশি। ওই প্রতিবাদ বিক্ষোভের কারণে প্রায় সব আলেম-ওলামা নেতাকে হাসিনা কারাবন্দী করে।
বাংলাদেশের গণমানুষ বিগত হাসিনা শাসনে চরম নিরাপত্তাহীনতা টের পেয়েছে। তারা দেখেছে পাশে এমন এক শত্রু প্রস্তুত হয়ে আছে, যেকোনো সময় তাদের অস্তিত্ব বিনাশ করতে পারে। এর কারণ যে তাদের ধর্মীয় পরিচয়, সেটি তাদের বুঝতে বাকি নেই। এরই প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের আচরণ, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনতার অংশগ্রহণ ও জরিপের ফলাফলে। সামাজিক মাধ্যমে এদের ব্যাপক উপস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে- বাংলাদেশের সমাজে এই সচেতন মানুষ যাদের ডানপন্থী বলা হচ্ছে- তাদের সমর্থন ভবিষ্যতে ব্যাপক বাড়বে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হলে এরাই প্রধান ফ্যাক্টর হবে আগামীতে। এ অবস্থায় মিডিয়ার উচিত নয় তাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ। তাদের উচিত হবে, যে কারণে তারা ডানপন্থার দিকে ঝুঁকছে তা নিয়ে কাজ করা। তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দায়িত্ব পালন করা।