নভেম্বর বিপ্লবের মধ্যমণি জিয়াউর রহমান

’৭৫-২০২৫ সাল পর্যন্ত ৭ নভেম্বরের শিক্ষা হচ্ছে এই ষড়যন্ত্রকারী যত শক্তিশালীই হোক না কেন একটি ৭ নভেম্বর বিপ্লবের কাছে তা পরাজিত হতে বাধ্য। বিপ্লবের এই শাশ্বত মূল্যবোধের কারণে দ্রুত ধাবমান সময়ের মাঝে জনগণের অজ্ঞাত ইচ্ছাগুলো জয়ী হয়ে ওঠে।

ড. আবদুল লতিফ মাসুম
ড. আবদুল লতিফ মাসুম |নয়া দিগন্ত গ্রাফিক্স

এই জাতির আত্মজাগৃতির ইতিহাসে ৭ নভেম্বর ’৭৫ একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। জাতির রাজনৈতিক উন্নয়নের এই দিনটি একটি মাইলফলক। এই দিনে জাতি নতুন করে নিজের পরিচয়-নিজের স্বরূপকে আবিষ্কার করেছে। ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে আত্মপ্রতিষ্ঠায় বিজয়ী হয়েছে। এই বিজয়ের নায়ক ছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। তিনি বিপ্লবের অনুঘটক ছিলেন না। তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে সেই সময়ের ঘটনাবলি। ১৯৭৫ সালের আগস্ট পরবর্তীকালে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের পটভূমিতে ‘তৃতীয় ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে তার আবির্ভাব ঘটে। সাধারণ সৈনিক এবং সাধারণ মানুষের সাধারণ সদিচ্ছার প্রতিভূ হিসেবে তিনি ক্ষমতাসীন হন। এই জাতির প্রতি তার দায়দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ এবং সব মহলের আস্থা তাকে রাষ্ট্রব্যবস্থার ‘মধ্যমণি’তে পরিণত করে। তিনি যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় বরিত হন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ব্যাকরণে তা ছিল একটি অভাবনীয় ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সিপাহি বিপ্লব ছিল সমসাময়িক পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।

অতীতে বাংলার ইতিহাসে একজন গোপালের কথা জানা যায়, যাকে শাসক এলিট এবং জনগণ এক হয়ে ‘মাৎস্যন্যায়’ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা মুক্ত হওয়ার জন্য ক্ষমতায় বসিয়েছিল। জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রেও ওই একই মূল্যায়ন সত্য। সৈনিকরা শৃঙ্খলার ব্যারিকেড ভঙ্গ করে জীবনকে বাজি রেখে অভীষ্ট বিপ্লবকে যেভাবে সফল করেছিল, স্বাভাবিক সময়ে স্বাভাবিক নিয়মে তা কল্পনাও করা যায় না। এটি প্রথাগত অভ্যুত্থান নয়। এটি কোনো প্রতিবিপ্লবও নয়। মনীষী এরিস্টটল বিপ্লবের যে গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যা করেছেন, সে দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি অবশ্যই একটি বিপ্লব। জিয়াউর রহমান ছিলেন এই বিপ্লবের উৎসমূল, অনুপ্রেরণা ও অভিভাবক।

১৫ আগস্টের ঘটনাবলি পৃথিবীর এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছিল। তৎকালীন বৈশ্বিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্ট দ্বিমেরু বিশ্বের পশ্চিমা পাল্লা ভারী করে দিয়েছিল। পরাজিত সম্প্রসারণবাদী শক্তি প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল। ৩ নভেম্বরের প্রতিবিপ্লব ছিল ওই হারানো ভারসাম্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি ব্যর্থ ষড়যন্ত্র। প্রতিবিপ্লবের খবরে ভারতীয় প্রচার মাধ্যমে খুশির বন্যা বয়ে যায়। প্রতিবিপ্লবের নেতা খালেদ মোশাররফ দরকষাকষির একপর্যায়ে বৃহৎ প্রতিবেশী অনুকূল পররাষ্ট্রনীতি অনুসৃত হলে খোন্দকার মোশতাককেও মেনে নিতে রাজি হন (আলমা-১৯৯৭) বামপন্থী গবেষক Lifsults তার বহুল কথিত গ্রন্থ Unfinished Revolution এ স্বীকার করেছেন তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করার পরিকল্পনা খালেদের ছিল। আর ওই সময় মিছিলের বিষয়টি সবারই জানা কথা। ৩ নভেম্বর ’৭৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল ধানমন্ডির সেই ৩২ নম্বর পর্যন্ত যায়। যেই মিছিলের সংবাদটি সবকিছু তছনছ করে দেয়। সৈনিক এবং জনতার মধ্যে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ভারতীয় মদদে পতিত বাকশালের পুনঃপ্রত্যাবর্তন রুখে দেয় সৈনিক-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব।

Ziaur Rahman

শহীদ জিয়া কোনোভাবেই আগস্ট অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত ছিলেন না। এক অ্যাকাডেমিক সাক্ষাৎকারে তৎকালীন ঢাকা ব্রিগেড প্রধান ৩ নভেম্বর প্রতিবিপ্লবের মূলনায়ক কর্নেল শাফায়াত জামিল এই লেখককে এ কথা বলেন। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকার কারণে গোটা সেনাবাহিনীতে জিয়ার একটি ‘পপুলার ইমেজ’ ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জিয়াকে তার সেনাপ্রধানের ন্যায্য প্রাপ্ত পদ থেকে বঞ্চিত করা হলেও তিনি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পোষণ করেননি। জিয়া ছিলেন নিয়মতন্ত্রের প্রতি একান্তই অনুগত। আগস্ট অভ্যুত্থানের পর জিয়া সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের নিয়ামানুক্রম অনুসরণের কথা বলেন। সেনাপ্রধান নিযুক্তির পরও তিনি সুকঠিনভাবে Chain of Command ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। আগস্ট বিপ্লব থেকে উৎসারিত সিনিয়র বনাম জুনিয়র দ্বন্দ্বে জিয়া অফিসিয়াল এবং ফর্মাল অবস্থান গ্রহণ করেন। এতে উভয়পক্ষই অসন্তুষ্ট হন। খালেদ ২ নভেম্বর রাতে জুনিয়রদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণে আলটিমেটাম দিলে পরদিন সেনা সদরে সভা আহ্বানের প্রস্তাব করেন। খালেদ তা অগ্রাহ্য করেন এবং জিয়াকে বন্দী করেন। পরে তাকে পদচ্যুত করে খালেদ নিজে সেনাপ্রধান হন। এই অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলি এবং খালেদ মোশাররফের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা জানাজানি হলে সেনা-ছাউনিতে বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিপ্লবের বিস্তারিত বিবরণ এ পরিসরে সম্ভব নয়। (আগ্রহীরা দেখুন আলমা-আকসার ব্রাদার্স : ১৯৯৮/২০০০)

এ অবস্থায় জাসদের গোপন ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার’ লোকেরা কর্নেল তাহেরকে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানায়। কর্নেল তাহের এ অবস্থাকে তার স্বপ্নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটানোর মাহেন্দ্রক্ষণ বলে ধরে নেন। গবেষণাক্রমে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে, কর্নেল তাহের জিয়াকে উদ্ধার করার জন্য ওই বিপ্লবের অবতারণা করেননি। তিনি বরং তার বিপ্লবী সৈনিক সংস্থাকে ব্যবহার করে সাধারণ সৈনিকদের বিভ্রান্ত করে ছলে-বলে-কৌশলে তার উদ্দেশ্য সাধন করতে চেয়েছেন। তার পরিকল্পনা ছিল জিয়াকে এক বন্দিত্ব থেকে আরেক বন্দিত্বে নিয়ে আসা। সেনাবাহিনীর বিশ্বস্ত বাছাই করা কিছু এনসিও জিয়ার বন্দিত্ব মুক্তির জন্য যখন যায় তখন শত শত সাধারণ সৈনিক তাদের সহগমনের কারণে জিয়ার পুনঃবন্দিত্বের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এরা যখন এলিফ্যান্ট রোডে জিয়াবিহীনভাবে ফিরে আসে তখন ঘরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা তাহেরের প্রথম প্রশ্ন ছিল Where is zia? যখন শোনেন যে সাধারণ সৈনিকরা তাকে Second Field Regiment এ নিয়ে গেছে তখন তিনি ‘All lost, Everything lost’ বলে আহাজারি করতে থাকেন।

এরপর একজন চতুর বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার লোক আবার ফিরে যায় জিয়ার কাছে। তারা জিয়াকে বলে : স্যার, কর্নেল তাহের এ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। চলুন বাইরে গিয়ে তার সাথে দেখা করবেন। তখন বুদ্ধিমান দূরদর্শী জিয়া বলেন : একদিন অপমানিত হয়ে এখান থেকে তাকে চলে যেতে হয়েছে। যাও এখানে নিয়ে এসো তাকে। তিনি এখান থেকেই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবেন। এরপর রেডিও রেকর্ডিংয়ের নাম করে তারা জিয়াকে আরো একবার বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা চালায়। সেখানে উপস্থিত ব্রিগেডিয়ার আমিনুল হক উল্টো রেকর্ডিং ইউনিট সেনানিবাসে নিয়ে আসার পরামর্শ দিলে সেবারেও তাদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। এভাবে শহীদ মিনারে ভাষণ দেয়ার আবেদনও তিনি অগ্রাহ্য করেন। অবশেষে ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় রেডিওতে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার লোকেরা গোলযোগ সৃষ্টি করলে সেখানে জিয়া যান এবং সেই কথিত ১২ দফা দাবিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। এভাবে বারবার তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। যখন তাহেররা বুঝতে পারে জিয়ার কাঁধে বন্দুক রেখে তাদের উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব নয়, তখন তারা বন্দুকের নল ঘুরিয়ে দেয়। তারা জিয়াকে বিশ্বাসঘাতক বলে লিফলেট বিতরণ করে। তারা তাদের উত্থিত স্লোগান : ‘অফিসারের রক্ত চাই- সুবেদারের উপর অফিসার নাই।’ বাস্তবেই কার্যকর করতে শুরু করে। অনেক অফিসার এদের হাতে নিহত হন।

এ কথা সত্য যে, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা বিপ্লবের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু এরা সাধারণ সৈনিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও তাহেরপন্থী সৈনিকদের সংখ্যা স্বল্পতা এবং চরমপন্থী কর্যক্রম নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। তখন ট্রাকে ট্রাকে সৈনিক ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দেয়। ‘জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ’ ধ্বনি ছিল কমন। কোনো কোনো সৈনিক দল খোন্দকার মোশতাকের ছবিও বহন করে। এতেই বোঝা যায় তাহেরপন্থীরা শেষের দিকে তাদের ‘বিপ্লব’ ধরে রাখতে পারেনি। সাধারণ সৈনিকরা তাহেরের যে রাজনৈতিক চাতুর্যের শিকার হয়েছেন, অবিলম্বে তারা তা বুঝতে পারেন।

স্বাধীনতাযুদ্ধে যে কণ্ঠ গোটা জাতিকে উজ্জীবিত করেছিল সেই কণ্ঠ আবারো শোনা যায়। ‘আমি জিয়া বলছি’Ñ শিরোনামে রেডিও-টেলিভিশন সংক্ষিপ্ত ভাষণ বারবার প্রচার করতে থাকে। তার এই আহ্বানে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসা হাজার হাজার সৈনিক আবার ব্যারাকে ফিরে যায়। অবশ্য বেশ কিছু বিভ্রান্ত সৈনিক কর্নেল তাহেরের ফিরে না যাওয়ার আহ্বানে সাড়া দেয়। তারা অস্ত্র গুদাম লুট করে যে বিপুলসংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র বাইরে নিয়ে এসেছিল তা আশু বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা একেবারেই ভেঙে পড়ে। পলায়মান অফিসারদের ধরে ধরে জিয়া সংগঠিত করেন। সৈনিকদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন রাতের পর রাত ব্যারাকেই কাটিয়ে দেন। এ সময় মেজর জেনারেল মীর শওকত আলী জিয়াকে মূল্যবান সহায়তা দেন। জিয়ার অপরিসীম পরিশ্রম অকুতোভয় মনোভাবের কারণে অবশেষে আমাদের জাতীয় সেনাবাহিনী ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। তাই Marcus Franda মন্তব্য করেন : Zia saved Bangladesh Army from an impending doom (Franda-1998).

সৈনিকরা যে বিপ্লব করেছেন জনগণ ‘মিছিলের স্রোত আর উল্লাস দিয়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছে’। জনগণের যে উচ্ছ্বাস ও ভাবাবেগ ওই দিন প্রকাশিত হয় তা ছিল অভূতপূর্ব। ঈদের খুশিতে আনন্দে উদ্বেলিত হয় মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে সে দিন ঢাকা মহানগরবাসীর আনন্দ খুশিকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। মানুষের এত খুশি আমি জীবনেও দেখিনি। সে দিন জিয়ার আহ্বানে মানুষ শান্ত থেকেছে। সেই আইনহীনতার সময়টায় তেমন কোনো অপরাধ অরাজকতা ঘটেনি অন্তত সাধারণ মানুষের দ্বারা। জিয়ার প্রতি, জিয়ার আদর্শের প্রতি সাধারণ মানুষের এই সাধারণ সমর্থন ব্যক্ত হয়েছে বারবার- ১৯৭৮, ৭৯, ৯১, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে।

এই উপমহাদেশের সৈনিকরা সিপাহি বিপ্লব করেছিল ১৮৫৭ সালে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য। আর ১৯৭৫ সালে তারা আবার বিপ্লব করেছে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। তারা বিপ্লব করেছে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির জন্য। একটি পেশাগত সেনাবাহিনীর জন্য এটি ছিল একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। সৈনিকদের বিপ্লব আর জনতার সংহতির মধ্য দিয়ে যে ইস্পাতকঠিন জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছিল তা আমাদের স্বাধীনত-সার্বভৌমত্বের ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে। ৭ নভেম্বর পঁচাত্তর প্রমাণ করেছে, এই জাতির হাজার বছরের লালিত ইতিহাস ও জীবনবোধ ষড়যন্ত্রের চোরাবালিতে হারিয়ে যায়নি। পাকিস্তানিদের ধর্ম আর আমাদের ধর্ম এক হলেও আমরা স্বতন্ত্র। ওপার বাংলার ভাষা এবং এপার বাংলার ভাষা এক হলেও আমরা স্বকীয় সত্তায় দীপ্তমান।

৭ নভেম্বর আমাদের জাতীয়তাবাদের ইতিহাসেও একটি মিলনমোহনা। এই নদী গতিপথে যেমন অতিক্রম করে পাহাড় বন-বাদাড় সমতলভূমি তেমনি ১৯০৫, ১৯৪০, ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৭৫ অতিক্রম করে নির্ণীত হয়েছে এই জাতির কাক্সিক্ষত পরিচয়। এই পরিচিতির নাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। ৭ নভেম্বর পঁচাত্তরের পথ ও পাথেয়কে অনুসরণ করে জিয়া এই জাতিকে নতুন প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত করেন- এর নাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। স্বাধীনতার প্রতি আমাদের ভালোবাসা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমাদের মমত্ব, সার্বভৌমত্বের প্রতি আনুগত্য, আল্লাহর প্রতি আমাদের গভীর আস্থা ও বিশ্বাস লালিত সংস্কৃতির সতত অনুশীলন ঘটিয়ে জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের অবিনাশী চেতনার আলোকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম হন। ’৭৫-২০২৫ সাল পর্যন্ত ৭ নভেম্বরের শিক্ষা হচ্ছে এই ষড়যন্ত্রকারী যত শক্তিশালীই হোক না কেন একটি ৭ নভেম্বর বিপ্লবের কাছে তা পরাজিত হতে বাধ্য। বিপ্লবের এই শাশ্বত মূল্যবোধের কারণে দ্রুত ধাবমান সময়ের মাঝে জনগণের অজ্ঞাত ইচ্ছাগুলো জয়ী হয়ে ওঠে।

লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]