এরদোগানের বাজিমাত, শান্তির পথে পিকেকে

আঞ্চলিক ভূরাজনীতি পিকেকের অবস্থান আরো জটিল করে তুলেছে। বিশেষত তুরস্কের পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক জোট ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কারণে সিরিয়া ও ইরাকের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে দলটির সমর্থনের ভিত্তি হ্রাস পাওয়ার পর।

মো: বজলুর রশীদ
মো: বজলুর রশীদ |নয়া দিগন্ত

প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে চলা সন্ত্রাসবাদ অবসানের প্রচেষ্টায় তুরস্ক একটি জটিল ও ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। পিকেকের অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্ত তুরস্কের জন্য একটি নতুন এবং প্রতিশ্রুতিশীল যুগের দ্বার উন্মোচন করেছে। যদিও এ প্রক্রিয়ার সূচনা হয় ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) নেতা দেভলেত বাহচেলির আহ্বানের মধ্য দিয়ে। বাহেলির আহ্বানের পর দু’পক্ষ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে মাত্র সাত মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ফল পাওয়া গেছে, যা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের লড়াইয়ের ইতিহাসে অনন্য ঘটনা। ২০০৯ সালের, বিশেষ করে ২০১৩-১৫ সালের প্রচেষ্টা বিবেচনায় নিলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে তীব্র লড়াইয়ের সময়কালে তুরস্ক যে দ্রুত ফল পেয়েছে তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে সঙ্ঘাতের পর কুর্দি রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। পিকেকে সম্প্রতি শান্তি উদ্যোগের অংশ হিসেবে দল ভেঙে দেয়া এবং নিরস্ত্রীকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। অসংখ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দীর্ঘতম অভ্যুত্থানের সম্ভাব্য সমাপ্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং নতুন সংলাপ ও রাজনৈতিক রূপান্তরের মঞ্চ তৈরি করেছে।

পিকেকের পরিচয়

কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে পিকেকে একটি কুর্দি রাজনৈতিক সংগঠন। প্রাথমিকভাবে তুরস্কের কুর্দি জনগণের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রান্তিককরণের প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭০ দশকের গোড়ার দিকে এই জঙ্গি দল প্রতিষ্ঠিত হয়। পিকেকে কুর্দি স্বায়ত্তশাসন এবং অধিকারের পক্ষে কাজ শুরু করে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মতাদর্শ নিয়ে। নেতৃত্ব দেন আবদুল্লহ ওচালান। পিকেকে তুর্কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সঙ্ঘাত শুরু করে এবং তুরস্কের অভ্যন্তরে কুর্দিদের বৃহত্তর অধিকার সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক উদ্যোগও নেয়। পিকেকের কার্যকলাপ অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করে, বিশেষত তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কারণে। গোষ্ঠীটি তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সহিংস সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ফলে উভয়পক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পেক্ষাপটে দীর্ঘস্থায়ী সঙ্ঘাত দেখা দিয়েছে। পিকেকের শিকড় রয়েছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গতিশীলতায়, যেখানে বিভিন্ন কারণে এ সংগঠনের উত্থান ও বিবর্তন হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শেষের কালপর্যায় তুরস্কের জন্য বিশেষ বেদনাদায়ক ছিল। কারণ এটি অভ্যন্তরীণ কলহের মুখোমুখি হয় এবং পিকেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে জনগণের অর্থনৈতিক সমস্যা ইত্যাদি কাজে লাগাতে শুরু করে। এ অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক, ফলে বড় ধরনের অসন্তোষ দেখা দেয়। পিকেকে সেটিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী মতাদর্শ প্রচারে পুঁজি করার চেষ্টা করে। কুর্দিরা তুরস্কের বৃহত্তম সংখ্যালঘু। বিশ্বে মোট কুর্দি জনসংখ্যা প্রায় চার কোটি। তুরস্কে রয়েছে দেড় কোটি থেকে দুই কোটি, ইরানে ৯০ লাখ থেকে এক কোটি ২০ লাখ, ইরাকে ৬০ থেকে ৮৫ লাখ এবং সিরিয়ায় ২০ থেকে ৩৬ লাখ। আদমশুমারি না হওয়ায় সঠিক সংখ্যা জানা যায় না।

এরদোগানের কৃতিত্ব

সাম্প্রতিক তুরস্কের সরকারি বক্তব্য এবং গণমাধ্যমের খবরে পিকেকের নিরস্ত্রীকরণ ও বিলুপ্তি ঘোষণার প্রক্রিয়ার পেছনে মূল চালিকা হিসেবে রাষ্ট্রপতি এরদোগানের নেতৃত্বের ওপর যথেষ্ট জোর দেয়া হয়।

এরদোগানের সাথে কুর্দিদের সম্পর্কে অনেক রাজনৈতিক জটিলতা রয়েছে। তিনি একসময় তাদের অধিকার সমর্থন করে ভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ২০১৩ সালে পিকেকের সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু ২০১৫ সালে আলোচনা ভেঙে পড়ে এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে কুর্দিপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। কুর্দিরা তুরস্কের অভ্যন্তরে মারাত্মক নাশকতা শুরু করলে তুর্কিরা কুর্দি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এরদোগানের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার প্রশাসনের অধীনে বাস্তবায়িত নীতি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা ‘সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্কের’ পথ প্রশস্ত করেছে। সরকারের মুখপাত্ররা বলছেন, এরদোগানের অবিচলিত নেতৃত্ব এবং এমএইচপি নেতা দেভলেত বাহচেলির মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরিতে সহায়তা করেছে। এটিও স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে, পিকেকের নিরস্ত্রীকরণকে কোনো একক ব্যক্তির অর্জনের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি, বহুমাত্রিক কৌশলের পরিণতি হিসেবে চিত্রিত করা দরকার। কয়েক দশকের বিকশিত সন্ত্রাসবিরোধী নীতি, আন্তঃদলীয় সংলাপ এবং বৃহত্তর প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টাকেও প্রতিফলিত করে, যা সম্মিলিতভাবে পিকেকের বিলুপ্তি ও অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, এ সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, ‘উগ্রবাদমুক্ত তুরস্ক’ গঠনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে। ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এ কে) পার্টির মুখপাত্র ওমর সেলিক জানিয়েছেন, ‘উগ্রবাদ পুরোপুরি নিঃশেষ হলে একটি নতুন যুগের সূচনা হবে।’

অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্তের কারণ

পিকেকের অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্তের পেছনে চতুর্মুখী কারণ কাজ করেছে। এসব কারণ সামরিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ফ্যাক্টর হচ্ছে তুরস্কের নতুন ‘নিরাপত্তা মতবাদ’ ও ‘সমন্বিত সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল’- যা ২০১৫ সালের পর তৈরি করা হয়েছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তুরস্ক পিকেকের কর্মক্ষেত্র এবং অপারেশনাল সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে সঙ্কুচিত করে ফেলেছে। উত্তর ইরাকে ব্যাপক ও নিরবচ্ছিন্ন অভিযানের ফলে সংগঠনটির চলাফেরার স্বাধীনতা পর্যন্ত ধ্বংস হয়েছে এবং ওই অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি হ্রাস পেয়েছে। সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের মাধ্যমে পিকেকের সহযোগী সংগঠন ওয়াইপিজির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় তুরস্কের ড্রোন হামলা এবং সংগঠনের সিনিয়র ক্যাডারদের নিষ্ক্রিয় করা পিকেকের ওপর একটি ভারি মনস্তাত্তি¡ক ও অপারেশনাল চাপ তৈরি হয়েছে। ইরাকে পিকেকেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং তুরস্কের সাথে উত্তর ইরাকি প্রশাসনের সহযোগিতাও পিকেকের আঞ্চলিক উপস্থিতিকে অনেকাংশে অসম্ভব করে তোলে। আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক গতিশীলতাও পিকেকের বিরুদ্ধে চলে গেছে। সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন, ওই অঞ্চল থেকে ইরানের সেনা প্রত্যাহার এবং মার্কিন সামরিক উপস্থিতি অবসানের প্রবণতা পিকেকের পক্ষে দাঁড়ানোর ভিত্তি ভেঙে দিয়েছে। হামাস-ইসরাইল সঙ্ঘাত এবং গাজায় মানবিক সঙ্কটে সৃষ্ট পরিবেশের ফলে উঠে আসা নতুন আঞ্চলিক সংমিশ্রণ পিকেকের সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব করে তুলেছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট, পিকেকের অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্ত জরুরি ছিল। স্থানীয় নির্বাচনে স্থায়ী সাফল্য অর্জনে পিকেকে-সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক আন্দোলনের ব্যর্থতা কুর্দি রাজনীতিতে দুষ্টচক্র তৈরি করেছে এবং পিকেকের উপস্থিতি একটি কৌশলগত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে কুর্দি ভোটারদের ক্লান্তি এবং ‘দিয়ারবাকির মাদার্স’-এর মতো সামাজিক আন্দোলনে সৃষ্ট প্রতিরোধ কুর্দি সমাজে পিকেকের সমর্থনকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। কারাবন্দী পিকেকের নেতা আবদুল্লাহ ওচালান অস্ত্র সমর্পণের আহ্বানে বলেছেন, এ সংগঠনের অস্তিত্ব অব্যাহত রাখার আর কোনো কারণ নেই।

১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, সংস্থাটি আশির দশকে সশস্ত্র সংগ্রামকে চ্যালেঞ্জ করার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করলে বছরের পর বছর ধরে এ সঙ্ঘাতে হাজার হাজার মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক, উত্তর সিরিয়া, ইরাক ও এর বাইরেও গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনের ইতিহাসের বেশির ভাগই কুর্দি নেতা আবদুল্লাহ ওচালানের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব। এত দিনের আন্দোলনের পুনর্মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বৈঠকে বসে লাভের চেয়ে কুর্দিদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি বলে উপলব্ধি করেন পিকেকে নেতারা। ফলে তারা সংগঠন বিলুপ্তির ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পথে হাঁটেন। এই দীর্ঘ সঙ্ঘাতে অন্তত ৪০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা

উত্তর ইরাকে অনুষ্ঠিত পার্টি কংগ্রেসে পিকেকের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। সরকারি বিবৃতি অনুসারে দলটি ঘোষণা করেছে যে, গণতান্ত্রিক রাজনীতির দিকে অভিজ্ঞ ও রূপান্তরমূলক যাত্রার মাধ্যমে তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম তার ‘ঐতিহাসিক মিশনে’ পৌঁছেছে। শান্তি আলোচনার জন্য একটি আইনিকাঠামোর শর্তসহ ১ মার্চ ঘোষিত একতরফা যুদ্ধবিরতি এই সিদ্ধান্তের পথ আরো প্রশস্ত করেছে। এই ঘোষণা ঘিরে আশাবাদ সত্তে¡ও, শারীরিক নিরস্ত্রীকরণ কিভাবে এগিয়ে যাবে তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়ে গেছে। অস্ত্রের নিষ্পত্তি এবং হাজার হাজার যোদ্ধার ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেক কিছু সমাধানের পথে রয়েছে।

চ্যালেঞ্জ ও এগিয়ে যাওয়ার পথ

পিকেকের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি আঞ্চলিক ইতিহাসের আশাব্যঞ্জক সন্ধিক্ষণের প্রতিনিধিত্ব করলেও সামনের পথ জটিলতায় ভরা। যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি মানা হয়েছে এবং শান্তি প্রক্রিয়ার সমর্থনে আইনিকাঠামোর প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের জন্য জরুরি। তুরস্ক ও পিকেকের মধ্যে অতীতের শান্তি উদ্যোগগুলো রাজনৈতিক, সামাজিক ও যৌক্তিক চ্যালেঞ্জের কারণে হোঁচট খেয়েছিল। এই প্রক্রিয়া যত এগোবে, ততই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় সংস্থার সতর্ক নজরদারি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অভিযোগের সমাধান করা যায় এবং সাবেক জঙ্গিদের নিরাপত্তা ও সামাজিক একীভূতকরণ নিশ্চিত করা যায়।

পিকেকের সমাপ্তি

দ্বাদশ কংগ্রেসে পিকেকের বিলুপ্তি এবং অস্ত্র সমর্পণ করে গণতান্ত্রিক রাজনীতির দিকে অগ্রসর হওয়া আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু সমালোচনামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার। প্রথমত, নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে সুস্থ ও নিরীক্ষণযোগ্য পদ্ধতিতে। এ প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু হবে উত্তর ইরাকের ইরবিল ও সুলাইমানিয়া অঞ্চলে স্থাপিত অস্ত্র সংগ্রহ কেন্দ্র। ইরাকি কর্তৃপক্ষের সাথে একত্রে তুরস্ক এ প্রক্রিয়াটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং অস্ত্রের সম্পূর্ণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, পিকেকের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা এবং এর সামরিক শাখাসহ সব সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে ফেলা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়নি এমন সংগঠনের সদস্যদের সামাজিকভাবে সংহত করা। তৃতীয়ত, সংস্থার সিনিয়র ক্যাডারদের তৃতীয় দেশে বসতি স্থাপনের সম্ভাবনা বিবেচনা করা।

বিশ্বজুড়ে পর্যবেক্ষকরা এখন দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত সত্যিকারের পুনর্মিলন এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করে কি না। এটি একইভাবে সমস্যাসঙ্কুল অঞ্চলগুলোতে সঙ্ঘাত সমাধানের একটি মডেল হতে পারে।

আঞ্চলিক ভূরাজনীতি পিকেকের অবস্থান আরো জটিল করে তুলেছে। বিশেষত তুরস্কের পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক জোট ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কারণে সিরিয়া ও ইরাকের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে দলটির সমর্থনের ভিত্তি হ্রাস পাওয়ার পর। এসব পরিবর্তন সত্তে¡ও পিকেকে রাজনৈতিক, সামরিক ও সামাজিক ইস্যুগুলোর একটি জটিল জালে আবদ্ধ, যা এটিকে কুর্দি অধিকার, জাতীয় পরিচয় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কিত আলোচনায় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার