ইরানকে কেন হারাতে পারবে না পশ্চিমারা

যতক্ষণ পর্যন্ত ধর্মীয় নেতৃত্ব তার আধ্যাত্মিক বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখে, ততক্ষণ সিস্টেমটি অভ্যন্তরীণভাবে সংহত এবং বাহ্যিক হুমকিগুলো প্রায়শই কেবল তার ভিত্তিগত বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে কাজ করে।

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমা বৈরিতা উপেক্ষা করে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপে দ্রুত বশীভূত দেশগুলোর বিপরীতে ইরান ইতিহাস, মতাদর্শ ও কৌশলগত অভিযোজনের ভিত্তিতে প্রতিরোধের এক অনন্য সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে।

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকেই ইরান নিজেকে মুসলিম বিশ্বে পাশ্চাত্যবিরোধী মনোভাবের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এই বৈপ্লবিক পরিচয় কেবল বাহ্যিক হুমকির সময় অভ্যন্তরীণ ঐক্য জাগিয়ে তোলে না; বরং ইরানকে সাম্রাজ্যবাদের শিকার হিসেবে তুলে ধরেছে এবং গ্লোবাল সাউথজুড়ে সহানুভূতি অর্জন করেছে।

পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা ও বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে ইরানকে যত বেশি চাপ দিয়েছে এই আখ্যান তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে। এই গতিশীলতা ইরানকে অস্থিতিশীলতা ও সরকার পরিবর্তন প্রচেষ্টার মুখে অনন্য স্থিতিস্থাপকতা দিয়েছে।

ইরান মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও পারস্য উপসাগরের মধ্যে বিশাল, পর্বতময় এবং কৌশলগতভাবে অবস্থিত। এই ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ঐতিহাসিকভাবে ইরানকে আক্রমণ করা কঠিন এবং দখল করা আরো কঠিন করে তুলেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট থেকে শুরু আধুনিক কালের আক্রমণকারীদের কাছে ইরানের ভূখণ্ড দীর্ঘস্থায়ী সামরিক অভিযানের জন্য দুঃস্বপ্ন হিসাবে দেখা দিয়েছে। হরমুজ প্রণালীর উপর ইরানের নিয়ন্ত্রণ, একটি গুরুত্বপূর্ণ নাজুক বিন্দু। এ পথে বিশ্বের তেল সরবরাহের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রবাহিত হয়। ইরানের যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহকে হুমকির মুখে ফেলে। শত্রুরাও সেটি মনে রাখতে বাধ্য হয়। এই ভৌগোলিক সুবিধা ইরানকে আঞ্চলিকভাবে শক্তি প্রদর্শন এবং বৃহত্তর পশ্চিমা হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের সক্ষমতা দেয়।

ইরানের অবস্থান তাকে একটি অপরিহার্য ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা দিয়েছে যা গুরুতর বৈশ্বিক পরিণতি ছাড়া কোনো সামরিক শক্তিই সরিয়ে নিতে পারে না। ইরানের সামরিক মতবাদ অসম যুদ্ধের ওপর জোর দেয়ার জন্য বিকশিত, যা যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্য সরাসরি সংঘর্ষকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে। ইরান অপ্রচলিত সক্ষমতা বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে ইরাক ও সিরিয়ার মিলিশিয়া পর্যন্ত বিরাট অঞ্চলজুড়ে প্রক্সি বাহিনীকে আরান সর্বাত্মক সমর্থন করে যা প্রচলিত যুদ্ধের সূত্রপাত ছাড়াই পশ্চিমা স্বার্থে আঘাত হানতে সক্ষম। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ঘাঁটি ও মিত্রদের ওপর আঘাত হানতে সক্ষম শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি তৈরি করেছে ইরান। ড্রোন এবং সাইবার ক্ষমতা যেকোনো সামরিক হিসাব-নিকাশকে আরো জটিল করে তুলেছে। ইরানের কৌশল সরাসরি বিজয় না হলেও যুদ্ধের ব্যয় এত বেশি বাড়িয়ে দেয় যে, যেকোনো পশ্চিমা দেশ এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখবে। ইসরাইলের নুয়ে পড়া এর একটি উদাহরণ। এই পদ্ধতি এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা বিমান হামলা বা সরকার পরিবর্তন অভিযানের মাধ্যমে পূর্বাবস্থায় ফেরানো যাবে না। পশ্চিমারা বুঝতে পেরেছে, ইরানের সাথে যেকোনো ধরনের সঙ্ঘাত দীর্ঘায়িত হবে, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে এবং রাজনৈতিকভাবে বিষাক্ত হয়ে উঠবে।

ইরানের রাজনৈতিক কাঠামো অনেক গভীরে প্রোথিত এবং বাইরে থেকে তা ভেঙে ফেলা কঠিন। ধর্মতান্ত্রিক শাসন এবং নির্বাচনী রাজনীতির অনন্য মিশ্রণ একটি জটিল ব্যবস্থা তৈরি করে যেখানে বৈধতা ধর্মীয় কর্তৃত্ব এবং জনপ্রিয় অংশগ্রহণ উভয়ই থেকে নেয়া হয়। স্বয়ং ট্রাম্পও ইরানের শাসক শ্রেণীর নির্বাচন প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক বলেছেন।

সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সর্বজনস্বীকৃত নেতা প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী এবং তার কর্তৃত্ব রেভুল্যুশনারি গার্ড ও মিলিশিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা সমর্থিত। এসব শক্তি শুধু সামরিক নয়, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণভাবে বিকশিত হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। রাষ্ট্রকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা প্রায়ই এটিকে শক্তিশালী করে, কারণ বিরোধী দলগুলো বিদেশী প্রতিপক্ষের সাথে জোটবদ্ধ হলেও শেষ পর্যন্ত সুবিধা অর্জন করতে পারে না। কয়েক দশকের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে আঘাত করেছে, তবে তা ইরানকে আরো আত্মনির্ভরশীল করে তুলেছে। দেশটি একটি প্রতিরোধ অর্থনীতি গড়ে তুলেছে, স্থানীয় উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং বাণিজ্যকে বৈচিত্র্যময় করেছে। এটি অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতার একটি স্তর তৈরি করেছে যাতে অনেক পশ্চিমা অর্থনীতিবিদও বিভ্রান্তিতে পড়েছে। পশ্চিমা বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে ইরান চীন, রাশিয়া ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বিকল্প জোট তৈরি করতে পেরেছে। এতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা খর্ব হয়েছে। তা ছাড়া, ইরানের রয়েছে বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ। যা কূটনৈতিক আলোচনায় তাকে সুবিধা দেয়। অর্থনৈতিক যুদ্ধে বিধ্বস্ত অন্য নিষিদ্ধ দেশগুলোর বিপরীতে ইরান টিকে থাকার উপায় খুঁজে পায় এবং এমনকি পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে তার আদর্শিক লড়াইয়ের প্রমাণ হিসেবে অর্থনৈতিক কষ্টকে কাজে লাগায়। সীমান্তের বাইরে ইরানের প্রভাব পশ্চিমাদের পরাজিত করতে না পারার আরেকটি কারণ।

সাবধানে গড়ে তোলা জোট ও প্রক্সি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইরান ইয়েমেন থেকে লেবানন পর্যন্ত প্রসার ঘটিয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলো কেবল আদেশ গ্রহণ করে না, আদর্শিক অনুষঙ্গ ও কৌশলগত উদ্দেশ্যও শেয়ার করে। এই আঞ্চলিক প্রভাব ইরানকে সরাসরি সংঘর্ষ ছাড়াই প্রতিপক্ষের উপর আঘাত হানার সক্ষমতা দিয়েছে, যা যেকোনো পশ্চিমা প্রতিক্রিয়াকে জটিল করে তোলে। তা ছাড়া, ইরান নিজেকে এই অঞ্চলজুড়ে শিয়া স¤প্রদায়ের রক্ষক হিসেবে তার অবস্থান মজবুত করেছে। বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে তার বৈধতা আরো গভীরতর হয়েছে। এই প্রভাবকে মোকাবেলা করার পশ্চিমা প্রচেষ্টা প্রায়শই ব্যর্থ হয়েছে, কারণ তারা এর অন্তর্নিহিত সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধনকে ভুল বোঝে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা প্রতিটি আঞ্চলিক সঙ্কটে ইরানের হাত অনুভব করে। কিন্তু স্থানীয়দের অনেকের কাছেই ইরান রৌদ্রোজ্জ্বল আরব রাজতন্ত্র ও পশ্চিমা হস্তক্ষেপের বিপরীত ভারসাম্যের প্রতিনিধিত্বকারী দেশ। সামরিক, ধর্মীয়, মতাদর্শগত এই বহুস্তরের প্রভাব ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি সঙ্ঘাতে কেন্দ্রীয় খেলোয়াড় করে তুলেছে।

পশ্চিমা তথ্য প্রচারণার ব্যর্থতা ইরানের প্রতিরোধের আরেকটি উপেক্ষিত কারণ। ফার্সি ভাষার মিডিয়া এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক বিনিয়োগ সত্তে¡ও পশ্চিমা বিবরণগুলো প্রায়শই ইরানি জনগণকে অনুরণিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইরানিরা অত্যন্ত শিক্ষিত এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং অনেকে ১৯৫৩ সালের সিআইএ সমর্থিত অভ্যুত্থান এবং শাহ আমলের নৃশংস সরকারকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে পশ্চিমা শক্তির ভূমিকার কথা মনে রেখেছে। এসব ঐতিহাসিক ক্ষতচিহ্ন বিদেশী কারসাজির বিরুদ্ধে প্রতিরোধী একটি জাতীয় চেতনার জন্ম দিয়েছে। সরকারি সেন্সরশিপ তথ্যকে সীমাবদ্ধ করে কিন্তু অনেক ইরানি এখনো বিদেশী প্রচারণার পরিবর্তে স্থানীয় উৎস এবং সাংস্কৃতিকভাবে প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্তকে অগ্রাধিকার দেয়।

যে দেশে সাংস্কৃতিক গর্ব ও বিপ্লবী আদর্শ গভীর, সেখানে পশ্চিমা সফট পাওয়ারের অনুপ্রবেশ সীমিত। ইরানের নেতারা জানেন, ভিন্নমত বিদ্যমান থাকলেও শুধু বাহ্যিক বার্তার মাধ্যমে তা সহজে পশ্চিমাপন্থী মনোভাবে রূপান্তরিত হয় না। এ অঞ্চলে পশ্চিমা সামরিক ব্যর্থতা ইরানের অবস্থানকে বরং আরো সুদৃঢ় করেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যাহারের ফলে একটি শক্তিশূন্যতা তৈরি হয়েছে যা তেহরানের জন্য তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যের।

পশ্চিমারা যখন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন, বাজেটের সীমাবদ্ধতা এবং যুদ্ধের ক্লান্তির সাথে লড়াই করছে, তখন ইরান কৌশল অবলম্বনের জায়গা অর্জন করেছে।

ইরানের শহীদী চেতনা ও আত্মত্যাগের সংস্কৃতি একটি মনস্তাত্তি¡ক ভূমিকা পালন করে যা মোকাবেলায় পশ্চিমা সমাজ হিমশিম খায়। এই সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য জনসাধারণের স্থিতিস্থাপকতাকে শক্তিশালী করে এবং পশ্চিমা মনস্তাত্তি¡ক ক্রিয়াকলাপকে জটিল করে তোলে। পশ্চিমা সমাজ স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যে অগ্রাধিকার দিলেও ইরান সহিষ্ণুতা এবং কষ্ট থেকে শক্তি অর্জন করে। এই পার্থক্য বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল একটি সরকার নয়; বরং বিদেশী আধিপত্য ও অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে কয়েক শতাব্দীর সম্মিলিত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গঠিত একটি জনগোষ্ঠী।

প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানও ইরানের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতার স্তম্ভ হয়ে উঠছে। নিষেধাজ্ঞা ও বিচ্ছিন্নতা সত্তে¡ও ইরান ন্যানো প্রযুক্তি, পারমাণবিক গবেষণা, মহাকাশ, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া, বিশ্বজয়ী চলচ্চিত্র এবং ওষুধের মতো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই অর্জনগুলো ব্যবহারিক এবং প্রতীকী উভয় কার্য সম্পাদন করে। তারা বিদেশী প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা হ্রাস করে এবং সঙ্কেত দেয় যে, ইরান চাপের মধ্যে উন্নতি করতে পারে। বৈজ্ঞানিক বিকাশ প্রায়শই জাতীয় গর্বের সাথে যুক্ত হয় এবং প্রতিরোধের একটি রূপ হিসেবে দেখা হয়। বিশেষত পারমাণবিক কর্মসূচি বিতর্কিত হলেও স্থানীয়ভাবে সার্বভৌমত্ব ও আধুনিকীকরণের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সত্তে¡ও ইরানের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার সক্ষমতা তার মনস্তাত্তি¡ক প্রান্তকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ইরানের প্রযুক্তিগত উচ্চাকাক্সক্ষা সীমাবদ্ধ করার পশ্চিমাদের প্রচেষ্টা কেবল ব্যর্থই হয়নি’ বরং প্রায়শই বিপরীত প্রভাব তৈরি করেছে।

ইরানে মতাদর্শ এবং রাষ্ট্রনীতি উভয়ই ক্ষেত্রেই ধর্মের ভূমিকা অনন্য ও অত্যন্ত স্থিতিশীল। ইসলামী প্রজাতন্ত্র কেবল ধর্মীয় নেতাদের রাষ্ট্র নয়; বরং এমন এক ব্যবস্থা যেখানে শাসনের সাথে ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব নিহিত। এই ফিউশন একটি নৈতিক বৈধত দেয়, যা ধর্মনিরপেক্ষ বা জাতীয়তাবাদী শাসকদের পক্ষে প্রতিলিপি করা কঠিন।

যতক্ষণ পর্যন্ত ধর্মীয় নেতৃত্ব তার আধ্যাত্মিক বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখে, ততক্ষণ সিস্টেমটি অভ্যন্তরীণভাবে সংহত এবং বাহ্যিক হুমকিগুলো প্রায়শই কেবল তার ভিত্তিগত বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে কাজ করে।

পরিশেষে, বৈশ্বিক কূটনীতিতে ইরানের অভিযোজন ক্ষমতা নিশ্চিত করে যে দেশটি কখনোই পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নয়। পশ্চিমা গণমাধ্যম ইরানকে আন্তর্জাতিকভাবে ছোট করার পরিভাষা ব্যবহার করলেও দেশটি চীন, রাশিয়া, সিরিয়া ও মধ্য এশিয়ার উদীয়মান শক্তির সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এই সম্পর্কগুলো বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন সরবরাহ করে। তদুপরি, ইরান পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বিভাজনকে কাজে লাগাতে শিখেছে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আলাদাভাবে ইউরোপের সাথে জড়িত হয়েছে। বৈশ্বিক শক্তি নতুনভাবে সঞ্চালিত হওয়ায় ইরান নিজেকে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে একটি প্রধান সেতু হিসেবে অবস্থান করছে। আঞ্চলিক সংস্থায় এর অংশগ্রহণ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে জড়িত হওয়ার ইচ্ছা এটিকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে। ইরানের প্রক্সিগুলো ক্রমাগত নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে, বহুত্বকে আলিঙ্গন করে নিজকে একক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া এড়াতে পেরেছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ব্যবস্থায়, ইরানের কৌশলগত ধৈর্য এবং কূটনৈতিক কৌশল নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা প্রচেষ্টা সত্তে¡ও কেবল টিকে থাকারই নয়, বিশ্ব মঞ্চে কেন্দ্রীয় অভিনেতা হিসেবে থাকার উপকরণ ও সরঞ্জামের অধিকারী হয়েছে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার