অদম্য বাংলাদেশ, একে রুখবে কে

দেশ একদিন ঠিকই এমনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে যে, সারা বিশ্ব চমকে গিয়ে বলবে ‘এটিই কি বাংলাদেশ! এ তো এক অদম্য বাংলাদেশ, একে রুখবে কে?’

অষ্টাদশ শতাব্দী (১৭০১-৯৯) শেষ। আজকের বিশ্বের উন্নত দেশ জাপান তখনো অর্থনৈতিকভাবে জরাজীর্ণ এক দীপপুঞ্জের জনগোষ্ঠী। রাজা একজন আছেন। নিজের ভোগ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে মশগুল। এ দিকে হাজারটা গোত্র-গোষ্ঠী-জাতি-উপজাতি নামের জনগুচ্ছ একেক জন সর্দার-মাতব্বরের অধীনে থেকে পরস্পরের সাথে দ্ব›দ্ব-সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ-প্রাণহানিতে লিপ্ত। এসব যেন নিত্যদিনের ঘটনা। কোথায় মারামারি, কোথায় রক্তে ভেসে গেল, কোথায় কে অতিরিক্ত মদ্যপানে রাস্তায় পড়ে পড়ে বমি আর আবর্জনায় জনপদ নোঙরা করে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে, সে দিকে রাজা বা তার অন্য কোনো প্রতিনিধি কারো কোনো খবর নেই।

এমনিভাবে অষ্টাদশ শতাব্দী কেটে উনবিংশ শতাব্দীতে পা রাখল। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের মতো বিশ্বের উপনিবেশবাদী দেশগুলো নিজ নিজ উপনিবেশগুলো থেকে সম্পদ এনে নিজ দেশে বেশ উন্নয়ন ঘটাচ্ছিল। আবার দেশগুলোর নাগরিকরাও উপনিবেশগুলোতে গিয়ে চাকরি ও ব্যবসায়-বাণিজ্য করে ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি করেও নিজ নিজ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলছিল। এমনি এক অবস্থায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ১৮৬৮ সালের এক সুন্দর সকালে সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের উপকূলে ধোঁয়া তুলে ভিড়ল মালবোঝাই এক ব্রিটিশ জাহাজ। কাকতালীয়ভাবে সে সময় জাপানের সিংহাসনে বসেন মাতসুহিতা নামে এক সম্রাট মেইজি। জাপানের ইতিহাসে প্রথম সম্রাট, এর আগে ছিলেন রাজা। সিংহাসনে বসে তারুণ্যদ্দীপ্ত এই সম্রাট দারুণ ক্ষিপ্রতার সাথে মনোযোগ দেন বিশৃঙ্খলা ও হানাহানি দূর করে রাষ্ট্র বিনির্মাণে। পাশাপাশি সমাজ পুনর্গঠনে। জনগণের উদ্দেশে তিনি বললেন, প্রিয় জাপানবাসী, যেখানে ব্রিটেন এ দেশের মানুষের ব্যবহারের জন্য নানা পণ্য উৎপন্ন করে তাদের তৈরি জাহাজ দিয়ে সেগুলো আমাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে, সেখানে আমরা ছুরি আর তরবারি দিয়ে গোত্রে-গোত্রে, মানুষে-মানুষে হানাহানি আর খুন-খারাবিতে মেতে আছি। একবার চিন্তা করুন, এসব বাদ দিয়ে ব্রিটেনের মতো সে একই কাজ কি আমরা করতে পারি না? আমাদের শরীরে কি সেই রক্ত-মাংস-মগজ নেই? আমরা কেন একজন আরেকজনকে খুন করব? আমরা কি পরস্পরকে ভালোবাসতে পারি না? পারি না খারাপ কাজ ছেড়ে উন্নয়নমুখী কাজ করতে, পারি না নিজের ও জাতির উন্নতির জন্য কাজ করতে?

আমি আজ ঘোষণা করছি, হ্যাঁ, আমরাও পারি। যেমন আহŸান তেমনি কাজ শুরু। সম্রাট পুরো দেশের সব গোত্রপ্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে রাজ দরবারে ডাকলেন। তাদের সাফ বলে দিলেন, দেশ গড়ার প্রয়োজনে সবাইকে হানাহানি ছেড়ে কাজে নামতে হবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে যার যার হাতের অস্ত্র জমা দিয়ে যাকে যাকে যে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দেয়া হবে তিনি সে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। এর কোনো বিকল্প নেই। ব্যাস, এতেই কাজ হলো। যারা এতদিন ছিলেন সন্ত্রাসী আর সন্ত্রাসের গডফাদার, তারা খুব দ্রুত সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও অফিসার হয়ে রীতিমতো জাতীয় পুনর্গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইতিহাস বলে, ওই ঘটনাই পরবর্তী ৫০ বছরের মধ্যে জাপানকে ছিন্নভিন্ন দেশ থেকে বিশ্বের এক শীর্ষ শিল্পোন্নত দেশে এবং একই সাথে পরাশক্তিতে পরিণত করে। জাপানের সৌভাগ্য যে, এই ৫০ বছর সম্রাট মেইজিই বেঁচে থেকে দেশ গঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

অনুরূপ এক সুযোগ আমাদের জাতীয় জীবনেও এসেছে। সাত হাজার বছরের ইতিহাসে ৫ আগস্ট বাংলার জন্য এক বিরল ল্যান্ডমার্ক। হাসিনার অতিদানবীয় শাসনের কবলে পড়ে বাংলাদেশের মানুষ একপর্যায়ে ভাবতে শুরু করে, এ দুঃশাসন থেকে বুঝি আর মুক্তি নেই। ঠিক তখনি যেন স্বস্তির প্রহর নিয়ে আসে চব্বিশের ৫ আগস্ট। অলৌকিকভাবে ৫ আগস্ট সকালে কমপক্ষে এক কোটি ৫০ লাখ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার দখলে চলে যায় ঢাকা এবং এর আশপাশ। তখন উপায়ান্তর না দেখে বিন্দুমাত্র দেরি না করে ‘দে দৌড় বলে’ ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার বোন রেহানা কোনোরকমে এক কাপড়ে হেলিকপ্টারে উঠে পালান।

পাঁচ হাজার বছর আগে ফেরাউন নীলনদে ‘টুপ করে’ ডুবে গিয়েছিল। পলাতক হাসিনার দীর্ঘ দুঃশাসনে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের পুরো কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রায়। ১৮৬৮ সালে সম্রাট মেইজি যেমন দুঃসাহসী পদক্ষেপে জাপানে পরিবর্তন এনেছিলেন, তেমনি আমাদের জাতীয় জীবনেও অনুরূপ দৃঢ় বৈপ্লবিক পরিবর্তন অনিবার্য। এমন একটি অভাবিত শূন্যতায় কার মাথায় এলো যে, ‘ড. ইউনূসকে দায়িত্ব দিতে হবে?’ যাই হোক, ড. ইউনূসের মতো দুনিয়াজোড়া খ্যাতির অধিকারী সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মানুষটি যে ডুবন্তপ্রায় জাহাজটির হাল ধরতে রাজি হলেন, সে জন্য পুরো জাতি সেদিন আবেগে আপ্লুত হয়েছিল। কিন্তু তার কাজের উপযোগী যে সহযোদ্ধা টিম প্রয়োজন ছিল সেদিন তার বাছাই যথার্থ হয়নি। তারপরেও আশা জাগাচ্ছে। পলাতক শত্রুর সব অপচেষ্টা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিপ্লব-পরবর্তী গত দেড় বছরে প্রায় এক হাজার ৮০০ বিদ্রোহ প্রচেষ্টা, অবরোধ, ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘটসহ অপচেষ্টার কমতি করেনি পলাতক ফ্যাসিস্ট ও তার দোসররা।

এত অন্তর্ঘাত প্রচেষ্টার মুখে স্বল্পকালীন এ সরকার অনেক আগেই ভেঙে পড়ার কথা, তাও ঘটেনি। কিন্তু কাজের গতি আশানুরূপ হয়নি। অনেকে বলেন, এটি বিপ্লব। তাই বিপ্লব-পরবর্তী একটি বৈপ্লবিক সরকার গঠন করে বিপ্লবী সব সিদ্ধান্ত দ্বারা দ্রুতগতিতে ফ্যাসিবাদের বিচার ও প্রায় পুরো রাষ্ট্র কোষাগার বিদেশে পাচারের মতো অমার্জনীয় অপরাধগুলোর মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটকারীদের সব সম্পদ অপ্রচলিত পন্থায় বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার ভরতে হতো। বিপ্লবী আদেশ জারি করে এবং বিপ্লবী পন্থায় অন্তর্ঘাতমূলক সব প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে হতো। দুর্ভাগ্য, আমরা তা করতে পারিনি। আমরা সম্রাট মেইজির মতো বিপ্লবী পথে হাঁটতে সাহস পাইনি। এটি বিপ্লব না, গণ-অভ্যুত্থান, দেশ সংবিধান দিয়ে পরিচালিত হবে নাকি বিপ্লবী ডিক্রি জারি করে চলবে- এ তর্কে অযথা সময় নষ্ট করেছি। ড. ইউনূসকে বিপ্লবী হতে দেইনি, রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাহস জোগাতে পারিনি। তিনিও যা করতে পারতেন তা করেননি। তাই যা হওয়ার তাই হয়েছে। যে কাজ আমরা বিপ্লবী পথে এই এক-দুই বছরে করে ফেলতে পারতাম, সেটি হয়তো আগামী অনেক বছরেও পারব না। কারো তো ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয় ছিল না, এটি ছিল পুরো জাতির সম্মিলিত উত্তরণের ব্যাপার। তবে আমরা একেবারে যে পারিনি, তাও নয়। এত প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মধ্যেও সাংবিধানিক পথ অনুসরণ করেও আমাদের রফতানি আয় এবং রিজার্ভ বেড়েছে। অর্থনীতি বেশ গতিশীল হয়েছে।

মধ্যযুগে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে আরব থেকে বহু ওলি-আউলিয়া শত শত অনুসারীর বহর নিয়ে এ দেশে আসেন। ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি তারা এখানকার দারিদ্র্যক্লিষ্ট প্রায় পেশাহীন স্থানীয়দের নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে কঠোর পরিশ্রম করে বনজঙ্গল-জলাভূমি পরিষ্কার করে বাংলাকে চমৎকার চাষ উপযোগী সবুজ শ্যামলিমায় ভরে তোলেন। এর ফলে এ দেশ হয়ে উঠে ধন-ধান্যে-পুষ্পে ভরা, গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের এক উৎসভূমি। ভারতবর্ষের এক চতুর্থাংশ খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো এ বাংলাতে। এ কারণে বাংলার নাম হয়ে উঠে ভারতবর্ষের শস্যভাণ্ডার।

আমাদের এও অজানা নয়, কিভাবে সুলতানি আমলে প্রজাদরদি শাসনে এ দেশ উন্নতির এমন উচ্চতায় পৌঁছেছিল, বাংলার সম্পদের পরিমাণ বিশ্ব জিডিপির অর্ধেকে দাঁড়িয়েছিল। ঢাকাই মসলিন ছাড়া রোম-গ্রিক-ইউরোপীয় বা আরব রাজপরিবারে বিয়ে-শাদিই হতো না। বিশ্বখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতার চমৎকার বর্ণনায় উঠে আসে সে সুলতানি আমলের বাংলার রাজধানী সোনারগাঁ ছিল বিভিন্ন দেশের বণিকদের এক মিলনক্ষেত্র। বাহারি বণিক নাওয়ের ভিড়ে এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা যেন ছিল সর্বদা উৎসবমুখর। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, এত ভিড়ের কারণ হলো- সোনারগাঁ বাজারে জিনিসপত্র ছিল খুব সস্তা।

আমাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি সুলতান সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ প্রথমবারের মতো এই বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন আজ থেকে সাত-আট শ’ বছর আগে। সে স্বাধীনতা রক্ষাও করেছিলেন অসংখ্য বহিঃআক্রমণ রুখে দিয়ে। এই স্বাধীন সুলতানি আমলে বাংলা ভাষাকে প্রথমবারের মতো ‘রাষ্ট্রভাষা’র মর্যাদাও দেয়া হয়। ফলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলার পরিচর্যা ও উন্নয়ন ঘটে। তাই তো আমরা মহাকবি আলাওলের মতো কবি-সাহিত্যিক পেয়েছি।

সুলতানি আমলের বহু পরের কথা। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীনচেতা বারো ভূঁইয়া নেতা ঈসা খাঁ রাজপুত বীর মানসিংয়ের নেতৃত্বে আসা বিরাট মুঘল বাহিনীকে পরাজিত করে এ বাংলার স্বাধীনতার ঝাণ্ডা সমুন্নত রেখেছিলেন। তারও পরে স্বাধীন বাংলার ইতিহাসের নায়ক নবাব সিরাজউদদৌলা মোহন লাল আর মিরমদনকে সাথে নিয়ে এ বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে কিভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে যুদ্ধ করেও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছেন, তা আজো এ দেশের মানুষের মুখেমুখে ঘুরে ফিরে। এর পরের ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রাম আমাদের আরো সাহসী করে তোলে।

১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের দুই পুত্রের করুণ মৃত্যুর পরও ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টায় তার অসীম বীরত্বগাঁথা আজ ইতিহাস হয়ে আছে। অসংখ্য মানুষের অবিরাম আত্মত্যাগের লড়াইয়ে পরাক্রমশালী ব্রিটিশদের এই মাটি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। ইংরেজদের দোর্দণ্ড শাসনের মধ্যেও শেরেবাংলার সাহসী ভূমিকায় বাংলায় জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করে চাষিবান্ধব ‘প্রজাস্বত্ব আইন’ করে জমির ওপর কৃষকদের মালিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি যে বাঙালির জীবনে কত বড় অর্জন তা ইতিহাস ঘাটলে বোঝা যায়। আবার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ আটকাতে না পারায় পূর্ববঙ্গের মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে নবাব সলিমুল্লাহ ৬০০ একর ব্যক্তিগত সম্পত্তি দানের শর্তে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছিলেন।

বাংলার পরের ইতিহাস অবশ্য খুব কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে আন্দোলনে নামতে হয় বাঙালিদের। প্রাণ দিতে হয় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারকে। তারপর ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে আসাদ, মতিউরসহ অনেকে শাহাদতবরণ করেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক ক্র্যাকডাউনের প্রতিউত্তরে ২৬ মার্চ এক অসম সাহসী বাঙালি মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দুর্ধর্ষ সেক্টর কমান্ডারদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর দুর্বার প্রতিরোধ, অসংখ্য মানুষের প্রাণ বিসর্জন আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে।

স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ থেকে ’৭৫, শেখ মুজিবের একদলীয় বাকশালী শাসনে নির্বাচন কলুষিত করা, চারটি বাদে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া, রক্ষীবাহিনী ব্যবহার করে নির্যাতন, গুম, খুন ও সর্বশেষে ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুতে এক অসহনীয় অবস্থা সৃষ্টি হয়। এরপর ১৯৮৩ থেকে ‘৯০, এরশাদের একনায়কতান্ত্রিক সামরিক শাসন আবারো গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠায়। সর্বশেষে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে ক্ষমতায় এসে হাসিনা এক নারকীয় অবস্থা সৃষ্টি করে। জনতার রুদ্ররোষে ফ্যাসিবাদের সব প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লে হাসিনা ও তার দোসররা প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

ফ্যাসিবাদের এহেন পতনে সাহসী জুলাইযোদ্ধাদের গড়ে তোলা এ বিরল ইতিহাস আর একবার আমাদের জাতিকে বিশ্বদরবারে এক গৌরবের আসনে বসিয়েছে। তাদের রক্তস্নাত পথে এ জাতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে ইনশা আল্লাহ। দেশ একদিন ঠিকই এমনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে যে, সারা বিশ্ব চমকে গিয়ে বলবে ‘এটিই কি বাংলাদেশ! এ তো এক অদম্য বাংলাদেশ, একে রুখবে কে?’

লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড