স্যাটেলাইট ও মেগা কনস্টেলেশনের যুগে, চীনের স্পেস প্রোগ্রাম দুরন্ত অগ্রগতি করেছে। সম্প্রতি ইসরাইল-ইরান যুদ্ধে ইরানের নেতৃত্ব এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা অনেকের নজরে আসেনি। ইরান এক স্ট্র্যাটেজিক পদক্ষেপ নিয়ে পুরো দেশের জিপিএস সিস্টেম বন্ধ করে চীনের বেইডো স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়েছে। এটা শুধু প্রযুক্তি আপগ্রেড নয়, একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কেতও। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতেও ইরানের কাজে প্রয়োজন হবে। আবারো, কোনো আক্রমণ শুরু করার আগে বা আক্রান্ত হলে সংযোজনটি নিজে থেকেই একটিভ হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে। বহু বছর ধরে, জিপিএস যেটা মার্কিন সামরিক বাহিনী তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করে আসছে, সেটিই স্যাটেলাইট নেভিগেশনের মূল ভিত্তি হিসেবে বিশ্বব্যাপী অবস্থান নির্ধারণ, পথনির্দেশনা আর সময়ের জন্য কাজ করে আসছে। কিন্তু ইরানের মতো দেশগুলো, যারা ওয়াশিংটনের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে, তারা মার্কিন অবকাঠামোর ওপর নির্ভর করা মানে ঝুঁকির সাথে বসবাস করা। সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকি থেকে শুরু করে নজরদারি আর সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতাও এখানে রয়েছে। বাস্তবে দেখা গেছে, ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনা বাড়ার সময় সাইবার যুদ্ধ এবং ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের হুমকি বেড়ে গেছে। কোনো দেশ বিশেষ করে ইরান কী এমন কোনো সিস্টেমে নির্ভর করতে পারবে যেটা তার শত্রুরা বিঘ্নিত করতে পারে? দ্বিতীয়ত, চীনের বেইডো শুধু প্রযুক্তিগত সুবিধাই দেয় না, বরং ভূ-রাজনৈতিক সঙ্গও জড়িত। তৃতীয়ত, এটা ইরানের একটি বড় পরিকল্পনার অংশ, যেখানে পশ্চিমা আধিপত্যের ওপর নির্ভরতা ভাঙা যায়।
বেইডো,BeiDou Navigation Satellite System (BDS) নামেও পরিচিত, এটি চীনের একক ও স্বাধীনভাবে পরিচালিত গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম। বিগ ডিপার অ্যাস্টেরিজমের নামকে বেইডোতে নেয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনী জিপিএসজি গাইডেড স্ট্রাইকের মাধ্যমে প্রচুর দাপট দেখিয়েছিল, সেটি দেখে চীনা সেনা কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের নিজস্ব সিস্টেম দরকার। আবার ১৯৯৬ সালের তাইওয়ান প্রণালী সঙ্কট একই বিষয়ের তাগিদ দিলো অর্থাৎ চীনের নিজস্ব স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম দরকার। তাইওয়ান প্রণালীতে জিপিএস ও বেইডোর অনেক সঙ্ঘাত বেইডোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে।
বেইডোর লক্ষ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস, রাশিয়ার গ্লোনাস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যালিলিওর মতো বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীদের সঠিক অবস্থান এবং সময় সম্পর্কিত নিখুঁত তথ্যের খুঁটিনাটি তন্ন তন্ন করে খুব কম সময়ে সংগ্রহ করা। সংক্ষেপে বেইডোর বিকাশ তিনটি পর্যায়ে অগ্রসরমান : বেইডো-১ আঞ্চলিক পরিষেবা সরবরাহ করে, বেইডো-২ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে প্রসারিত এবং বেইডো-৩ বিশ্বব্যাপী বিবিধ কভারেজ দক্ষতার সাথে প্রদান করে। ২০২০ সালের জুলাইয়ে এটি পুরোপুরি কার্যকর হয়। সিস্টেমটি উপগ্রহের একটি হাইব্রিড নক্ষত্রমণ্ডল ব্যবহার করে জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (জিইও), জিওসিক্রোনাস অরবিট (আইজিএসও) এবং মিডিয়াম আর্থ অরবিট (এমইও) নিয়ে বিস্তৃত এবং শক্তিশালী কভারেজ নিশ্চিত করে। সিস্টেমের গ্লোবাল বেসিক ওপেন পরিষেবাটি বিশ্বব্যাপী সব ব্যবহারকারীর জন্য অবাধে উপলব্ধ, মৌলিক অবস্থান, নেভিগেশন এবং টাইমিং (পিএনটি), রিয়েল টাইম তথ্য সরবরাহ করার ক্ষমতাসম্পন্ন; এর বাইরে, বেইডো অনন্যভাবে সংক্ষিপ্ত বার্তা ও যোগাযোগ পরিষেবা দিয়ে থাকে। ব্যবহারকারীরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পাঠ্য বার্তা আদান-প্রদান করতে পারে। এটি এমন এক বৈশিষ্ট্য যা সাধারণত অন্যান্য গ্লোবাল নেভিগেশন সিস্টেমে পাওয়া যায় না। এটি নির্ভুলতা বাড়ানোর জন্য প্রশস্ত অঞ্চলে উপগ্রহভিত্তিক বর্ধন এবং স্থলবর্ধনসহ বর্ধিত সিস্টেম পরিষেবাও সরবরাহ করে থাকে। অতিরিক্তভাবে, বেইডো উচ্চ-নির্ভুলতা অ্যাপ্লিকেশন এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধার (এসএআর) পরিষেবার জন্য সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট পজিশনিং (পিপিপি-Precise Point Positioning) সমর্থন করে পরিবহন, কৃষি, দুর্যোগ, ত্রাণ এবং জননিরাপত্তার মতো বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক ও বাণিজ্যিক খাতে বহুমুখী কর্ম সম্পাদন করে থাকে, যা এক কথায় অনন্য।
নির্ভুলতার ক্ষেত্রে, বেইডো বিশ্বব্যাপী পাবলিক সার্ভিস মাত্র ২০ ন্যানোসেকেন্ডের মধ্যে সময়-নির্ভুলতা এবং প্রতি সেকেন্ডে ০.২ মিটারের মধ্যে বেগ-নির্ভুলতার সাথে আনুভূমিকভাবে ৩.৬ মিটার এবং ১০ মিটারের মধ্যে উল্লম্ব-অবস্থানের নির্ভুলতা অর্জন করেছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, এর কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে, যথাক্রমে প্রায় ২.৬ মিটার এবং ৫ মিটারের আনুভূমিক এবং উল্লম্ব অবস্থান। অনুমোদিত বা সামরিক-গ্রেড অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য বেইডো উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চতর নির্ভুলতার সাথে কাজ করে, পোস্ট-প্রসেসিংয়ের সাথে সেন্টিমিটার-স্তর বা এমনকি মিলিমিটার-স্তরের নির্ভুলতা পর্যন্ত এটি অন্যান্য উন্নত জিএনএসএসের সাথে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলকভাবে দক্ষতা অর্জন করেছে। বেইডোর সামরিক প্রয়োগ চীনের কাছে এর কৌশলগত গুরুত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি চীনের সামরিক বাহিনীকে একটি স্বাধীন এবং সুরক্ষিত অবস্থান, নেভিগেশন এবং সময়, রিয়েল টাইম সক্ষমতা দেয়। এই প্রযুক্ত জিপিএসের মতো বৈদেশিক নিয়ন্ত্রিত সিস্টেমের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করেছে, কেননা, জিপিএস সঙ্ঘাতের সময় কাজ করে না এবং কাজ করলেও মান অবনমিত থাকে।
অস্ত্রের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু, সামরিক যান ও বিমানের নেভিগেশন এবং নিরাপদ যোগাযোগের জন্য এটি অত্যাবশ্যক। চীন তার সামরিক-গ্রেড পিএনটি তথ্যভাণ্ডারে অ্যাক্সেস দিয়ে থাকে তার অংশীদারদের। বিশেষত বেইডোকে পাকিস্তান ও ইরানের সামরিক ব্যবহারের জন্য সক্রিয় রাখা হয়েছে। এটি এই দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব গাইডেড যুদ্ধাস্ত্র, জাহাজ এবং বিমানে ব্যবহারের যথার্থতা বাড়িয়ে তুলতে সক্ষমতা দিয়েছে, যার ফলে সামরিক আন্তঃক্রিয়াযোগ্যতা জোরদার হয়ে চীনের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব প্রসারিত হয়েছে। সামরিক যোগাযোগ এবং নির্ভুলতা-গাইডেড যুদ্ধাস্ত্র ব্যবস্থায় বেইডোকে সংহতকরণ করা হয়েছে। তৃতীয় কোনো শক্তি বেইডো থেকে তথ্য চুরি বা হ্যাক করতে পারে না। বর্তমানে এটিকে চীনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে গণ্য করা হয়েছে এবং এর বিস্তৃত সামরিক-বেসামরিক ফিউশন কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পরিণত করা হয়েছে।
জিপিএস বৃহত্তর নজরদারিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। যদিও জিপিএস সিগন্যালগুলো নিজেরাই তথ্য ফাঁস করে না, জিপিএস স্মার্টফোন, ড্রোন, সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে এমন ডিভাইসগুলো অন্যান্য উপায়ে যেমন সেলুলার নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট, ডেডিকেটেড যোগাযোগ লিঙ্ক-এর মাধ্যমে ডেটা প্রেরণ করতে পারে। যদি এই ডিভাইসগুলো ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হয় বা শোষিত হয়, তখন অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্যের সাথে অবস্থানরত ও মিশ্রিত থাকায় ডেটা পৃথক করা ঝক্কিঝামেলা পূর্ণ। এটিকে ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেমের দুর্বলতা বলা যায়, সরাসরি জিপিএস ফাঁস নয়।
ইরান ও হরমুজ প্রণালীসহ উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে জিপিএস জ্যামিং ও স্পুফিংয়ের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। যদিও এসব ঘটনার উৎস সর্বদা নিশ্চিতভাবে কাউকে দায়ী করা হয় না, ইরানের বিরুদ্ধে তার আশপাশের জাহাজ এবং বিমানের জন্য জিপিএস সঙ্কেত ব্যাহত করার অভিযোগ করা হয়েছে। ইরানের জন্য, উদ্বেগটি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার তথ্য ফাঁস করার বিষয়ে নয়; বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপযোগিতা নিয়ন্ত্রণ করছে যার ওপর ইরানের সামরিক ও অর্থনীতি নির্ভর করে। প্রয়োজনে জিপিএস অ্যাক্সেস বন্ধ বা হ্রাস করার ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি কৌশলগত লিভারেজ পয়েন্ট। তাই চটজলদি এই জিপিএস থেকে মুক্তি খুঁজতে চেয়েছে ইরান।
ইরান তার ভূখণ্ডজুড়ে ইউএস গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয়ার এবং চীনের বেইডো স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমের সংযুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়ার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক এবং কৌশলগত পদক্ষেপ। এই পরিবর্তনটি মূলত ভূ-রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা হ্রাস করা, তার জাতীয় নিরাপত্তা এবং কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বাড়ানোর আকাক্সক্ষাকে বাড়িয়ে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যা জিপিএস বিকাশ ও পরিচালনা করে, সঙ্ঘাত বা তীব্র উত্তেজনার সময় নির্দিষ্ট অঞ্চলে বা নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের জন্য তার সঙ্কেতগুলো বেছে বেছে বর্জন বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাখে। ইরানের জন্য এটি একটি গুরুতর দুর্বলতা, বিশেষত তার সামরিক ও সমালোচনামূলক অবকাঠামোর জন্য। জিপিএসের ওপর নির্ভর করার অর্থ সঙ্কটের সময় গুরুত্বপূর্ণ নেভিগেশন এবং সময় পরিষেবাগুলোর ওপর সম্ভাব্যভাবে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়া। তদুপরি, ইরান সামরিক অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সর্বোচ্চ নির্ভুল জিপিএস সঙ্কেত অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ও বিধিনিষেধের মুখোমুখি হয়েছে।
বেইডোকে গ্রহণ করার মাধ্যমে ইরান একটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর গ্লোবাল নেভিগেশন সিস্টেমে প্রবেশাধিকার অর্জন করেছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। চীন খোলাখুলিভাবে সামরিক উদ্দেশ্যে বেইডোতে প্রবেশাধিকার নির্দিষ্ট অংশীদারদের সাথে ভাগ করে নিয়েছে, বিশেষত পাকিস্তান এবং উল্লেখযোগ্যভাবে ইরান। ইরানকে তার নিজস্ব সামরিক যোগাযোগ, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের জন্য গাইডেন্স সিস্টেম এবং সামগ্রিক প্রতিরক্ষা অবকাঠামোতে একীভূত করতে সক্ষমতা দিয়েছে। এই সহযোগিতা ইরানকে তার অস্ত্র ব্যবস্থার নির্ভুলতা এবং নির্ভরযোগ্যতা উন্নত করতে সহায়তা করেছে। এই পদক্ষেপটি চীনের সাথে ইরানের বৃহত্তর কৌশলগত অংশীদারত্বের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ২৫ বছরের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্বের মতো চুক্তির মাধ্যমে গভীরতর হয়েছে। এই জোটে অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা রয়েছে। বেইডোকে একীভূত করে ইরান পশ্চিমাব্যবস্থা থেকে দূরে তাদের প্রযুক্তিগত নির্ভরতাকে বৈচিত্র্যময় করতে চাইছে, এমন দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান নেটওয়ার্কের মধ্যে তার অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে। এটি কেবল ইরানের সামরিক সক্ষমতাকেই জোরদার করবে না; বরং বেইডোর বিশ্বব্যাপী পদচিহ্ন এবং প্রভাবকেও প্রসারিত করবে। জিপিএসের দীর্ঘকালীন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে এবং মহাকাশভিত্তিক নেভিগেশনে সম্ভাব্যভাবে আরো বহুমুখী ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করে চীনের কৌশলগত স্বার্থকেও রক্ষিত করবে। ইরানের জন্য, এটি একটি অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থা, ডিজিটাল স্বাধীনতা এবং স্বনির্ভরতা যার গুরুত্ব আকাশচুম্বী।
ইরানের জিপিএস অ্যাক্সেস নিষ্ক্রিয় করার প্রেরণা, আরো সঠিকভাবে এটির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করা এবং বেইডোতে সংযুক্ত হওয়া সরাসরি অর্থে জিপিএস ডেটা ফাঁস করার বিষয়ে নয়, এটি কৌশলগত স্বাধীনতা অর্জন করা। ইরান নিশ্চিত করতে চায় যে, তার গুরুত্বপূর্ণ নেভিগেশন এবং টাইমিং অবকাঠামো এমন কোনো প্রতিপক্ষের কাছে নতজানু না হোক যা সঙ্ঘাতের সময় পরিষেবা প্রদান অস্বীকার বা হ্রাস করতে পারে, যার ফলে তার জাতীয় সুরক্ষা এবং সামরিক সক্ষমতা বিপদগ্রস্ত হয়। বেইডোতে যোগদান একটি কৌশলগত অংশীদার যেটি চীন নিয়ন্ত্রিত একটি শক্তিশালী বিকল্পব্যবস্থা যা মূলত সামরিক-গ্রেড অ্যাক্সেস দিচ্ছে। ইরানের এই অবস্থান পাল্টানোতে পেন্টাগন বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কেননা ইরানের ইলেকট্রনিক যুদ্ধকৌশলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য হাত করা এখন আর সহজ কোনো বিষয় নয়।
লেখক : অবসর প্রাপ্ত যুগ্মসচিব, গ্রন্থকার
[email protected]