বাকশাল কি ফ্যাসিবাদ হয়ে বিদায় নিলো

দুর্ভাবনার বিষয় হলো, ফ্যাসিবাদের বীজ হাসিনা দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন। এদেরই একজন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা সাদিক। তিনি সরকার উৎখাতে পরিকল্পনা নিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে আটক হয়েছেন। এ ধরনের আরো কত সাদিক আড়ালে আবডালে কোথাও বেড়ে উঠছে কারো জানা নেই। এরা যেকোনো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারে। তা হবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য আরেকটি বিপর্র্যয়কর অধ্যায়।

শেখ মুজিবের দুঃশাসন অবসানের পর ভাবা হয়েছিল আওয়ামী লীগ চিরতরে বিদায় নিয়েছে। ১৫ আগস্ট তিনি যখন সপরিবারে হত্যার শিকার হন তখন কোথাও সামান্য প্রতিরোধ দেখা যায়নি। তাকে রক্ষায় গঠিত রক্ষীবাহিনীর ৪০ হাজার সদস্য পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সবাই একচোটে হওয়া হয়ে যায়। সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে মুজিব যে একদলীয় বাকশাল গঠন করেন, তাদের সবার নৈতিক মনোবল এতটাই নিচে নেমেছিল যে, টুঁ শব্দটি করার কেউ সাহস করেনি। সারা দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে সে সময় খুশির বন্যা বয়ে যায়। শহরে মিষ্টির দোকানগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। মুজিবের হত্যাকে বর্বরতার অবসান হিসেবে দেখে মানুষ। ১৫ আগস্ট নাজাত দিবস হিসেবে কবুল করেছিল জাতি।

বিরোধীদের ৩০ হাজার সদস্যকে হত্যা করে মুজিব দেশকে নরক বানিয়েছিল। দুর্নীতি লুটপাট করে দুর্ভিক্ষ লাগিয়ে আরো কয়েক লাখ লোকের করুণ মৃত্যুর কারণ ঘটিয়েছিল। তার কন্যা হাসিনা বিচারবহিভর্ূত হত্যা, গুম ও গুপ্ত কারাগার বানিয়ে লুটপাট করে দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে বাবার মডেল অনুসরণ করেছেন। মুজিবকে সামরিক বাহিনীর একটি অংশ হত্যা করলেও হাসিনা এই বাহিনীর একটি অংশের সহায়তায় ভারতে পালিয়ে বেঁচেছেন। মুজিবকে উৎখাত করে দেশ মুক্ত করতে সামরিক বাহিনী সক্রিয় হয়, জনগণ ছিল দর্শক। এবার হাসিনাকে উৎখাত করেছে ছাত্র-জনতা। সেনাবাহিনী ছিল নিষ্ক্রিয়। তবে হাসিনার অনুগত সামরিক বাহিনীর ক্ষুদ্র একটি অংশ প্রতিবাদী জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নাজাত দিবসকে হাসিনা শোক দিবস বানিয়ে মানুষের সেন্টিমেন্টকে প্রতারিত করে ক্ষমতায় ফেরেন। পঁচাত্তরের খলনায়ক মুজিবকে মহানায়ক বানিয়ে ফিরিয়ে এনেছিল। তিনি ঠিকই মুজিবের নারকীয় শাসন বাকশাল-২ মানুষকে উপহার দিয়েছেন। এটি সম্ভব হয় ১৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়া অপরাধী চক্রের দীর্ঘ ষড়যন্ত্র চক্রান্তের মাধ্যমে ফিরে আসার মাধ্যমে।

হাসিনা পালানোর পর আবারো শুরু হয়েছে পুরোনো খেলা, ফ্যাসিবাদের সেই চিহ্নগুলোকে ‘মহান’ প্রদর্শন করে জাতির চোখে ধুলা দেয়ার চক্রান্ত চলছে। বাকশাল-৩ ফিরে আসে কিনা সেই দুশ্চিন্তা তাড়া করছে তাই ছাত্র-জনতাকে। দেশবাসী ভীত মুজিবীয় শাসনের পুনরাবির্ভাবের আশঙ্কায়। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট মুজিব পতনের সুবিধা জাতি ভোগ করলেও সেনা অভ্যুত্থানের সেই নায়কদের হাসিনা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করলে কেউ তাদের পক্ষে দাঁড়ায়নি। মেজর বজলুল হুদার কারাগারে মৃত্যু নিয়ে খোদ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর জল্পনা আছে। এবার জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র সমাজ। আন্দোলনের নেতারা সবাই পরিচিত মুখ। হাসিনা কিংবা তার ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কেউ জনগণের চোখে ধুলা দিয়ে ক্ষমতা করায়ত্ত করতে পারলে এই ছাত্র নেতৃত্ব একই ধরনের নিষ্ঠুর পরিণতির শিকার হবে এটা নিশ্চিত। তাদের আত্মীয়স্বজনদেরও ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আত্মীয়স্বজনদের মতো নির্মূল করা হবে।

মুজিবের জীবনাবসান এবং হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে বিস্তর তফাত আছে। যারা মুজিবের আশ্রয়ে নানা অপরাধ করেছেন জনগণের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে থাকতে পারেননি। হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় আসতে তাই দীর্ঘ ২১ বছর লেগেছে। এদিকে হাসিনার অনুপস্থিতিতে তার পুরো প্রশাসন ও ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। বড় বড় অপরাধী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেলেও সক্রিয় রয়েছে। তাদের কাছে রয়েছে লুটপাট করে নেয়া বিপুল অর্থ। এরা ইতোমধ্যে সংগঠিত হয়ে ভার্চুয়াল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে, দেশের ভেতরে অন্তর্ঘাত চালিয়ে সরকার পরিবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে। দেশের প্রায় সব মিডিয়াও তাদের পক্ষে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর মুজিব বাহিনীর সবাই একসাথে ক্ষমতাবৃত্ত থেকে ছিটকে পড়ে। বাকশালের পক্ষ হয়ে কেউ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অন্যদিকে হাসিনার সেটআপ দিয়ে দেশ এখনো চলছে। তাই আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী যেকোনো সময় পাশার দান উল্টে দিতে পারে।

ফ্যাসিবাদীদের ভরসা বত্রিশ নম্বর

জুলাই বিপ্লবীরা সারা দেশে মুজিবের শত শত মূর্তি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঠাগারে তৈরি করা হয়েছিল হাজার হাজার মুজিব কর্নার। এগুলোকে অন্তর্বর্তী সরকার সরিয়ে নিয়েছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে মুজিবের বাড়িটিও গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিপ্লবীরা। ফ্যাসিবাদী চক্রের আশা তারা এই বাড়িটিকে কেন্দ্র নতুন করে মুজিববন্দনা শুরু করবে। বাড়িটি ভাঙার পরপর চক্রটির মিলিত মায়াকান্না অশ্রুপাত দেখা গেছে। এরা রক্ষীবাহিনীর নির্বিচার মানুষ হত্যায় শোকগ্রস্ত হয় না, হাসিনার গণহত্যায় কোনো দুঃখপ্রকাশ করেনি। এবার মানুষ এদের শনাক্ত করতে পেরেছে। তাই এদের মায়াকান্না মানুষকে প্রতারিত করতে পারছে না।

এবার ১৫ আগস্ট ঘিরে ফ্যাসিবাদী চক্র আওয়ামী লীগকে লাইমলাইটে আনার উদ্যোগ নেয়। অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নার নেতৃত্বে ‘মঞ্চ ৭১’ গঠন করা হয়। এ দিন তারা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পদযাত্রা করে আওয়ামী রাজনীতি নরমালাইজ করার সূচনা করবেন আশা করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবীরা এ ব্যাপারে পুরোপুরি সতর্ক ছিল। তাদের সম্মিলিত শক্তি রাজপথে অবস্থান নেয়ায় পান্নার সাথে যুক্ত হওয়া দুষ্টচক্র পদযাত্রা করার সাহস পায়নি। তবে ভার্চুয়াল জগতে ১৫ আগস্ট তারা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুজিবকে নিয়ে শোকের কৃত্রিম আবহের পেছনে তাদের পুরো মাফিয়া চেইন সক্রিয় করে। এ যাত্রায় সফল হলেও এর নেপথ্যে আওয়ামী লীগের দেদার অর্থ খরচের খবরও ফাঁস হয়ে গেছে। তাই তাদের ফেনায়িত হাইপের বেলুন ফুটো হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগের একটি বিশাল সুশীলসমাজ আছে। এই চক্রের কেউ ১৫ আগস্ট উপলক্ষে রাস্তায় নামতে সাহস পায়নি। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রাশেদা কে চৌধুরী ও জাফর ইকবাল এই শ্রেণীর। যারা মৌলবাদের অর্থনীতির নামের উদ্ভট তত্তে¡র জনক ইসলামোফোব আবুল বারাকাতের কারামুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বারাকাত যখন দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছিল তখন এরা চুপ ছিল। শেখ হাসিনার গুম, খুন মানুষ হত্যা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিল। হাসিনা পালানোর পর এসব খুনি সন্ত্রাসী যখন জনতার রোষের শিকার হচ্ছে, আদালতে কাঠগড়ায় সামান্য লাঞ্ছিত হচ্ছে, তখন আবার এদের পক্ষ হয়ে সোচ্চার হচ্ছে। এরা রাজনীতি নিরপেক্ষ হিসেবে জাতির সামনে হাজির থাকে। এরা উন্নত বুদ্ধির, উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন এমন প্রচারণা চালানো হয়। শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিসেবী সবমিলিয়ে এরা সংখ্যায় কয়েক শ’। নিজস্ব কার্যক্ষেত্রে এরা আইকনিক ফিগার হয়ে বসে আছে। বিপদের সময় আওয়ামী লীগ পেছনে থেকে এদের সামনে ঢেলে দেয়। এবার এদের আর সামনে আনতে পারছে না আওয়ামী লীগ। এরা ইতোমধ্যে তাদের পুরো সামাজিক পুঁজি শেষ করে ফেলেছেন। রাজাকার শব্দটি নিয়ে হাসিনার কটাক্ষের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন ‘আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিলো তখন জাফর ইকবাল ছাত্রদের বিরুদ্ধে হাসিনার লাইনে গিয়ে বক্তব্য দিয়ে পুরো জাতির বিরাগভাজন হন। প্রকাশনা সংস্থাগুলো তার বই বিক্রি নিষিদ্ধ করে, ছাত্ররা ক্যাম্পাসে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এই শ্রেণীর সুশীল নিরপেক্ষ সব আওয়ামী পান্ডার মুখোশ জুলাইয়ে খুলে যায়। ফলে এদের কারো কাছে সেই নৈতিক সাহস নেই ১৫ আগস্টে ৩২ নম্বরে গিয়ে মায়াকান্না কাঁদবেন। তাই একজন রিকশাওয়ালা, একজন অপরিচিত নারী ও দাড়িটুপি নিয়ে একজন পাগড়িওয়ালা মিলিয়ে দিনভর মাত্র তিনজনকে মুজিবের বাসভবনে ফুল দেয়ার জন্য পাওয়া গেল।

সেলিব্রেটিদের দিয়ে ভার্চুয়াল জগতে ১৫ আগস্ট নিয়ে কোরাস ওঠানোর বিষম চেষ্টা হয়েছে। যারা এই কোরাসে অংশ নিয়েছেন এরাও তাদের সামাজিক পুঁজি শেষ করে ফেলেছেন। উদাহরণ দিলে আমরা বুঝব কেন তারা আর হাসিনার পক্ষে সাড়া জাগাতে পারবেন না। অন্য অনেকের সাথে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান মুজিবের জন্য ভার্চুয়াল মিডিয়ায় কাতর হয়েছেন। চঞ্চল হাসিনার একনিষ্ঠ খাদেম, ফ্যাসিবাদের দালাল।

ভারত-পাকিস্তান খেলায় দর্শকদের তিনি অত্যন্ত বাজে কটাক্ষ করে বিতর্কিত হন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘একাত্তরে যারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল এবং তাদের বংশধররা এখন ভারতের পরাজয়ে খুশি। তারাই ভারতবিরোধী। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল তারা ভারতের পক্ষে।’ এমন তীব্র সাম্প্রদায়িক মন্তব্যে তার আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে।

সাকিব বাংলাদেশের খেলার জগতে সবচেয়ে বড় তারকা। অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে তিনি করেননি এমন কোনো অন্যায় নেই। প্রথমে তিনি ক্রিকেট জুয়াড়িদের সাথে হাত মিলিয়ে নিজের ও দেশের সর্বনাশ করেছেন। শেয়ার কারসাজি করে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন। সামান্য কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ মেরে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি লুটিপাটের ছয়টি বড় অভিযোগ রয়েছে। আদালত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছেন। এই নৈতিকতা বিবর্জিত সাকিবকে দলে টেনে হাসিনা তার শেষ সময়ে ইমেজ বৃদ্ধি করতে চেয়েছেন। তিনিও সংসদ সদস্য হওয়ার লোভে মুজিব কোট চড়িয়েছেন।

সামাজিক মাধ্যমে মুজিবের জন্য শোক প্রদর্শন করে ভার্চুয়াল জগতে ঢেউ তুলতে যারা চেয়েছেন তাদের প্রায় সবার রেকর্ড একই।

মুজিব ডাইনেস্টির সূর্যাস্ত

মুজিবের রাজনীতিতে স্থির আদর্শ ছিল না। যৌবনে তিনি যার পক্ষে ছিলেন প্রৌঢ়ত্বে নিয়েছেন তার বিরুদ্ধে অবস্থান। তার চাওয়াটা পরিষ্কার ছিল না। তিনি মানুষের আবেগ নিয়ে অগ্রসর হয়েছেন। শক্তি প্রয়োগ ও গুণ্ডামি অবলম্বন করা রাজনীতি তার জীবনে নির্মম পরিণতি ডেকে এনেছে। হাসিনাও একই পথের পথিক, তার পুরো রাজনৈতিক জীবনে কোনো আদর্শ ছিল না। বরাবরই তিনি মুখে এক কথা বলেছেন, কাজ করেছেন ভিন্ন। তার দীর্ঘ দুঃশাসন শেষ হয়েছে গণহত্যা দিয়ে। পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও রাজনীতিতে ফেরার কোনো পথ তার জন্য খোলা নেই।

তিনি এখন পর্যন্ত ন্যূনতম অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। কোনো অন্যায় স্বীকার করেননি। তিনি দেশবাসীর কাছে বারবার জানতে চান তার কী অপরাধ! দীর্ঘ সাড়ে পনের বছরের দুঃশাসন বাদ দিলেও জুলাই বিপ্লবের দেড় হাজার হত্যা ও ২০ হাজারের বেশি মানুষের গুরুতর আহত হওয়ার দায় কে নেবে? অন্য দিকে তিনি যদি দায় স্বীকার করেন তাহলে তাকে অনিবার্যভাবে ফাঁসির দড়ি গলায় নিতে হবে। এক কানাগলিতে তিনি আটকে গেছেন। তার রাজনৈতিক কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

তার পুত্র ও কন্যা আগে থেকেই বিতর্কিত। সজীব ওয়াজেদ জয় একের পর এক বিদেশী নারী বিয়ে করে চলেছেন। তার স্বীকৃত কোনো পেশা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ধনকুবেরের মতো জীবনযাপন করেন। রাজকীয় হালতে তিনি বিলাসী জীবন কাটান। দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে অশোভন মন্তব্য করে বিরাগভাজন হয়েছেন। তার সন্তানরা সবাই বিদেশী, তাদের ধর্মীয় পরিচয় অস্পষ্ট। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে তদবিরের জোরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক নিয়োগ করা হয়। কোনো ধরনের অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা ছাড়া ভুয়া সনদ ব্যবহার করে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে ওই পদে তাকে বসিয়ে দেয়া হয়। ক্ষমতা হারালে পুতুলের চাকরিও নট হয়েছে। তারও আর কোনো সম্ভাবনা নেই।

শেখ রেহানার তিন সন্তানের মধ্যে দু’জন দুর্নীতি ও অপকর্মের জন্য বিতর্কিত। টিউলিপ ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে তার পদ হারিয়েছেন দুর্নীতির অভিযোগে। তার ভাই রেদয়ান মুজিব ববির বিরুদ্ধেও আদালতে দুর্নীতির মামলা চলছে। ববিও জয়ের মতো বিদেশী বিয়ে করেছেন। বিপুল সম্পত্তির মালিক। রাজনীতিতে এরা কারো গ্রহণযোগ্য হওয়ার সুযোগ নেই। ব্যারিস্টার তাপসদের মতো কয়েক ডজন আত্মীয়স্বজন রয়েছে যারা হাসিনার আমলে দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এখন পালিয়ে গেলেও এদের মধ্যে থেকে কেউ বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হতেও পারেন। তবে তারাও হাসিনার মতো প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারেন। এ ছাড়া দুর্ভাবনার বিষয় হলো, ফ্যাসিবাদের বীজ হাসিনা দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন। এদেরই একজন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা সাদিক। তিনি সরকার উৎখাতে পরিকল্পনা নিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে আটক হয়েছেন। এ ধরনের আরো কত সাদিক আড়ালে আবডালে কোথাও বেড়ে উঠছে কারো জানা নেই। এরা যেকোনো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারে। তা হবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য আরেকটি বিপর্র্যয়কর অধ্যায়।