আমলাতন্ত্রের বিপদ আপদ

আমলাতন্ত্রের কেন সংস্কার হলো না- অনেকেই এ নিয়ে আক্ষেপ করেন। আমার কাছে এই আক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য মনে হয়। কারণ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই। প্রশাসন সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যথাযথ করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অনেক ভালো কিছু হতে পারবে। ভবিষ্যৎ আমলাতন্ত্রকে যদি আমরা প্রকৃত অর্থেই স্বচ্ছ দেখতে চাই তাহলে পরে পৃথিবীব্যাপী অনুসৃত সাতটি গুণের অধিকারী হতে হবে। এগুলো হচ্ছে সততা, নৈতিকতা, নিরপেক্ষতা, জবাবদিহিতা, নিঃস্বার্থতা, স্বচ্ছতা ও নেতৃত্ব। তথাকথিত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বুলিতে কাজ হবে না। প্রকৃত অর্থে আমলাতন্ত্রকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। আর সেই সৎ ও সুন্দর প্রতিশ্রুতির প্রত্যাশা আগামী সরকারের কাছে

বঙ্কিমচন্দ্রকে সিভিল সার্ভিসের মৌখিক পরীক্ষায় ইংরেজ কর্মকর্তা জিজ্ঞাসা করেছিল, Can you tell me what is the defference between Apod and Bipod। বঙ্কিম উত্তর করেছিলেন, You British people conquered our motherland, this is Bipod. And being an English man you are asking me to differentiate Apod and Bipod. Actually this is Apod.। আপদ বিপদ সম্পর্কে বিষয়টি খোলাসা করে নিলাম আগেই। যাতে সত্যিকার অর্থেই আমলাদের বিপদ আপদ সম্পর্কে আমরা অবহিত হতে পারি।

বাংলা ভাষায় গৃহীত আমলা শব্দটি উচ্চারণ করলেই একটু শ্লেষাত্মক অনুভব আসে। মজার বিষয়, শব্দটির উৎপত্তি বা ব্যুৎপত্তিও শ্লেষাত্মক। আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘ব্যুরোক্র্যাসি’। শব্দটির মূল উৎপত্তি ফরাসি ভাষা থেকে। ফরাসি ব্যুরো (bureau) শব্দের অর্থ অফিস বা দফতর। আর গ্রিক শব্দ ক্রাটোস (kratos) অর্থ শাসন। এজন্য কেউ কেউ ব্যুরোক্র্যাসির বাংলা করেন দফতরশাহি। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্য সময়ে ফরাসি অর্থনীতিবিদ ‘জ্যাকুইস ক্ল্যদে ম্যারি ভিনসেন্ট দ্য গোউর্ন্য’ প্রথম এই শব্দের প্রচলন করেন। এর প্রথম প্রয়োগ ব্যঙ্গ তথা ভণ্ডামি অর্থে। এক বন্ধুর কাছে চিঠি লিখতে গিয়ে ব্যঙ্গ করে তিনি লেখেন, ‘ফ্রান্সে আমাদের এমন এক রোগ দেখা দিয়েছে, যা আমাদের সর্বনাশ করে ফেলতে পারে; এই রোগের নাম ‘ব্যুরো-মানিয়া’ অর্থাৎ দাফতরিক উন্মাদনা। কখনো কখনো তিনি ‘ব্যুরোক্র্যাসি’ শিরোনামে চতুর্থ বা পঞ্চম ধরনের সরকারব্যবস্থার কথাও উদ্ভাবন করতেন। আমাদের দেশে আমলাতন্ত্রকে এভাবে নেতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, তার একটি মৌলিক ‘যৌক্তিকতা’ পাওয়া গেল! আমরা সবাই জানি আমলাতন্ত্র বলতে আমরা এমন একদল মানুষকে বুঝি যারা দেশ জাতি রাষ্ট্রে স্থায়ী শাসক বা প্রশাসক বলে চিহ্নিত। শাসকরা দুই ধরনের- রাজনৈতিক আমলা বা প্রশাসক। আর স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত আমলা। রাজনৈতিক আমলারা একটি নির্দিষ্ট সময়কালীন নির্বাচনের পর দেশ শাসনের অধিকার লাভ করেন। তারা অস্থায়ী। এরা দায়িত্ব বিভাজনের মাধ্যমে সরকারের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তিত হলেও আমলা প্রশাসকদের অদলবদল হয় না। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ধারাবাহিকতা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সংরক্ষিত হয়। আমলাদের নীতিনির্ধারক বা policy maker হিসেবেও অভিহিত করা হয়। সভ্যতার একটি পর্যায় থেকে আমলারা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে থাকেন। জনগণের মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হন, আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে তারা দেশকে পরিচালনা করেন।

মনীষী ম্যাক্স ওয়েবারকে আমলাতন্ত্রের জনক বলা হয়। আমলাতন্ত্রের গঠন, প্রকৃতি ও করণীয় সম্পর্কে তিনি মূল্যবান পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, পদ সোপানের ভিত্তিতে গঠিত স্থায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের পদবিন্যাস, নিয়োগ এবং পদায়ন যেকোনো বিবেচনা- যেমন পৃষ্ঠপোষকতা বা তদ্রুপ ব্যবস্থার চেয়ে মেধা ও যৌক্তিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ওয়েবার যথার্থভাবেই আমলা এবং নির্বাচিত আমলাদের মধ্যে দ্ব›দ্ব ও টানাপড়েনের বিষয়টি উল্লেখ করেন। নির্বাচিত কর্মকর্তারা অর্থাৎ ক্ষমতাসীন রাজনীতিকরা তাদের ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার কারণে, দুর্নীতি ও দলপ্রীতির কারণে আমলাদের কর্তৃত্ব হ্রাস করতে চান। আমলারা সচরাচর কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন করে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমলাতন্ত্রকে রাজনীতিবিদরা এবং নাগরিকসাধারণ নেতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। এক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য একটি পরিচিত বদনাম। আমলারা সাধারণত নিয়ম কানুন খুঁটিয়েখাটিয়ে দেখেন। সে কারণে কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে বেশ বিলম্ব হয়। আবার দেখা যায় দুর্নীতি বা ঘুষের মাধ্যমে সেই জটিল কুটিল সমস্যাটিই সহজ সরল হয়ে দাঁড়ায়। আমলাতন্ত্রের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি সবসময়ই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণভাবে অধীত হয়ে আসছে। মিশেল ক্রুজিয়া তার বিখ্যাত গ্রন্থ The Bureaucratic Phenomenon-এ উপরের স্তরে অবস্থানরত এবং নিম্ন পর্যায়ে অবস্থানরত আমলাদের মনোভাবগত পার্থক্যের ওপর জোর দিয়েছেন। আমলারা স্বভাবগতভাবেই Most obedient servant হতে অভ্যস্ত। তারা পেশাগতভাবে এবং আমলাতন্ত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন পছন্দ করেন। ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চান। এ কারণে তারা কোনো প্রকার সঙ্ঘাতে না গিয়ে বরং আইন ও বিধির প্রতি শক্তভাবে এঁটে থাকেন। অন্যদিকে এক ধরনের আমলা আছেন যারা স্বভাবতই উচ্চাভিলাষী। তারা রীতিসিদ্ধ ও ধরাবাঁধা কাজকর্মে তাদের সেই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাধা বলে মনে করেন। সাধারণত তারা উপায়কে লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করেন। এজন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা দৃঢ় ও প্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন। আমলাতন্ত্রের গতানুগতিক বিশ্লেষণে তাদের আইন ও বিধি ব্যবস্থার প্রতি অনুগত থাকতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ যেহেতু একটি রাষ্ট্র সুতরাং তার একটি স্থায়ী আমলা বাহিনী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অন্যত্র যেমন এখানেও তেমন আমলাতন্ত্রই দেশকে পরিচালনা করে। সংবিধানে আমলাদের সম্পর্কে শুধুমাত্র একটি লাইন রয়েছে। অনুচ্ছেদ ২১ এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ পরবর্তী ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের কথা নিশ্চিতকরণের নিশ্চয়তা দেয়া হলেও জনগণ সাক্ষী দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীতে কোনো রাজনৈতিক দলই তা করেনি। সুতরাং বিচার বিভাগ হতে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহীকরণের বিষয়টি সব সময়ই অসমাপ্ত রয়ে গেছে। আশার কথা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পূর্ণ পৃথকীকরণের পথে অনেক ধাপ এগিয়েছে। কাজটা শুরু করেছিলেন ১/১১-এর তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। আশা করা যায় যে, আগামী নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই কথিত পৃথকীকরণের সুফল জনগণ লাভ করবে।

তত্ত¡ কথার পর এবার বাস্তবতায় আসা যাক। আমলাতন্ত্রের ভূগোল-ইতিহাস আলোচনা করলে আসল কথা বলা হবে না। আমরা সবাই স্বীকার করি যে, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের একটি ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার রয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হামজা আলাভির বিশ্লেষণে পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক আমলে’ আমলাতন্ত্রের রাজত্ব অক্ষুণœ ছিল। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার সুযোগে আমলাতন্ত্র দেশটির মালিক মোখতার হয়ে বসেছে। অবশেষে দেশটি ধ্বংসস্ত‚পের প্রান্তসীমায় উপনীত হয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা কাঠামো প্রায় অটুট রয়েছে। প্রায় বলার কারণ এই যে, পাকিস্তানে আমলাতন্ত্র যেমন নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, বাংলাদেশ আমলে তা আদৌ ঘটেনি। বরং রাজনৈতিক এলিটরা তাদের দুর্নীতির বদনাম এবং দলীয় কর্তৃত্ব দ্বারা আমলাতন্ত্রকে তাদের হাতের মুঠোয় নেয়ার চেষ্টা করেছে। ১৯৭২-৭৫ সালে এই চর্চা শুরু হয়।

শফিউল আজম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মুখ্যসচিব ছিলেন। সেই ডাকসাইটে আমলা মুজিব আমলে পরিত্যক্ত হন। সে সময়ে মুজিব নগরীয়-অমুজিব নগরীয় বিভাজন তুলে আমলাতন্ত্রকে কোণঠাসা করা হয়। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে চাকরিরত ছিলেন তারা স্বভাবতই হীনম্মন্যতায় ভোগতেন। বড় বড় আমলারা ছোট ছোট মুক্তিযোদ্ধা আমলার ভয়ে তটস্থ থাকতেন। কখন না যেন চাকরি চলে যায়। সেখানে আমলাতন্ত্রের একটি সেটাপ ছিল বটে কিন্তু কর্তৃত্ব করতেন শেখ মুজিবের একজন ভগ্নিপতি। বাকশাল ঘোষণার প্রাক্কালে তিনি উচ্চ কর্তৃত্বে পৌঁছেছিলেন। বাকশাল ব্যবস্থায় আমলা ও সেনাবাহিনী কর্মকর্তা সবার জন্য বাকশালে যোগদান বাধ্যতামূলক ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বলা যায় আমলাদের প্রাধান্য ফিরে আসে। বিশেষত জিয়াউর রহমানের শাসনকালে একটি সৎ অভিজ্ঞ ও পেশাগত উৎকর্ষতায় আমলাতন্ত্র সরকার কাঠামো এবং আমলাতন্ত্রের মূল কাঠামোতে ফিরে আসে। এরশাদের সময়কালে আমলাতন্ত্রের সে অভিযাত্রা অব্যাহত থাকে। তবে সে আমলাতন্ত্র জিয়া আমলের মতো স্বচ্ছ ছিল না। এরশাদ আমলাতন্ত্রে দুর্নীতিকে স্বাভাবিক মনে করে নেন। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে আমলাতন্ত্রের সুনাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। বিগত ১৭ বছরে আওয়ামী দুঃশাসনে তার ধস নামে। আমলাতন্ত্রের সব ইতিবাচক গুণগুলো ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়। তদস্থলে একটি বশংবদ দলীয় আনুগত্যের আমলাতন্ত্র ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ায়।

এই আমলাতন্ত্রকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। একটি ক্ষুদ্র অংশ পেশাদারত্ব, সৎ ও সাহস নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। তাদের অধিকাংশই এসব গুণাবলির কারণে রাষ্ট্রযন্ত্রের রোষানলে পড়েন। অধিকাংশকেই ওএসডি করা হয়। (বাস্তব অভিজ্ঞতার জন্য দেখুন, আবদুর রশীদ, ওএসডির আমলনামা)। অনেককেই চাকরিচ্যুত করা হয়। সামান্য অংশ যারা এর পরও আমলাতন্ত্রে রয়ে যান তারা গুরুত্বহীন এবং নিষ্কর্মা জায়গায় পদায়ন পান। আমলাতন্ত্রের দ্বিতীয় অংশে ছিলেন এমন সব আমলারা যারা রাজনৈতিক আমলাদের সাথে মানিয়ে চলে যথারীতি সুযোগ সুবিধা নেন। তবে তারা আমলা চরিত্র বজায় রাখার চেষ্টা করেন। গতানুগতিকভাবে তাদের পেশাদার আমলা বলা যায়। তৃতীয় অংশের আমলারা ছিলেন অতি উৎসাহী। আওয়ামী লীগারদের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার। তারা রাজনীতির ভাষায় কথা বলতেন। তারা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি ও নেতাপ্রীতির নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এখন স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থার কারণে এবং গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী স্বাধীন পরিবেশের কারণে গণমাধ্যমে এদের কুকীর্তি প্রকাশিত হচ্ছে। কেউ কেউ বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় অনেকে আশা করেছিলেন যে অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে আমলাতন্ত্রের চরিত্রের পরিবর্তন হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম যে, আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য বজায় রয়েছে। বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈশিষ্ট্যের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার বাড়াবাড়িও হয়েছে। তবে উপরোক্ত তিন অংশের আমলার যে বিবরণী দেয়া হয়েছে তা এখনো অব্যাহত আছে। এই সময়ে এক ধরনের আমলারা অতি উৎসাহী হয়ে ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা রীতিমতো আনুগত্যের এবং বিশ^স্ততার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। এজন্যই অন্য রাজনৈতিক দলগুলো আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ৫৪ বছরের সময়কালে কখনো বা আমলার প্রাধান্য বজায় থেকেছে, আবার কখনো না। কিন্তু একটি বিষয় খুবই সাধারণ যে সবকিছুর জন্য আমলাতন্ত্রকে দায়ী করার প্রবণতা প্রবল। একজন সাধারণ নাগরিক থেকে শীর্ষ রাজনীতিক- সবাই আমলাতন্ত্রের নিন্দায় মুখর। ভাবখানা এই যে, সবই কেষ্ট ব্যাটার দোষ। যত দোষ সব নন্দ ঘোষ। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অন্যায়-অনাচারকে আমলাতন্ত্রের ঘাড়ে তুলে দিতে চেয়েছে। আমলাদের একাংশ যে সৎ, সাহসী ও নিষ্ঠাবান- এটুকুর স্বীকৃতি দিতে রাজনীতিকরা নারাজ।

আমলাতন্ত্রের কেন সংস্কার হলো না- অনেকেই এ নিয়ে আক্ষেপ করেন। আমার কাছে এই আক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য মনে হয়। কারণ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে আলাদিনের চেরাগ নেই। প্রশাসন সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যথাযথ করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অনেক ভালো কিছু হতে পারবে। ভবিষ্যৎ আমলাতন্ত্রকে যদি আমরা প্রকৃত অর্থেই স্বচ্ছ দেখতে চাই তাহলে পরে পৃথিবীব্যাপী অনুসৃত সাতটি গুণের অধিকারী হতে হবে। এগুলো হচ্ছে সততা, নৈতিকতা, নিরপেক্ষতা, জবাবদিহিতা, নিঃস্বার্থতা, স্বচ্ছতা ও নেতৃত্ব। তথাকথিত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বুলিতে কাজ হবে না। প্রকৃত অর্থে আমলাতন্ত্রকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। আর সেই সৎ ও সুন্দর প্রতিশ্রুতির প্রত্যাশা আগামী সরকারের কাছে।

লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]