বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদের দেশ, একই সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, নদীভাঙন, খরা- এসব তো আছেই। এর সাথে যোগ হয়েছে ভূমিকম্প। ইদানীং দাবানল, মাটিধসে নিচে নেমে যাওয়া- ইত্যাদিও ঘটছে। এর সাথে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের আশঙ্কাও আছে।
এবার রোজার শেষ দিকে হঠাৎ টিভির খবরে জানা গেল, ‘সুন্দরবনে আবার আগুন লেগেছে’। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে গুলিশ্যাখালীতে আগুন লাগে। কলমতেজীতেও আগুন লেগেছে। বনের প্রায় ২০ জায়গায় আগুন ধরেছে। আগুনে চার একর জমি পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি গাড়ি, বন বিভাগ ও বিটিআরটি মিলে আগুন নেভায়। অনেক গাছপালা পুড়ে গেছে। বনজসম্পদের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবনে বারবার আগুন লাগার পেছনে মানুষের হাত আছে কি-না তদন্ত করে দেখা দরকার। কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবেই আগুন লাগানো হচ্ছে। এতে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি প্রচুর। আগে আগুন লাগেনি। এখন কেন লাগল- এটি অনেকের গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে।
টিভিতে আগুন লাগার ছবি ও খবর দেখে অনেকে আতঙ্কিত। বাংলাদেশে দাবানল লাগার কোনো ঘটনা নেই। সুন্দরবন বাংলাদেশের অপরিমেয় সম্পদ। এখানে আগুন লাগবে কেন- এটিই হচ্ছে কথা। বাংলাদেশ উষ্ণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে, আগুন লেগে যাবে এখন। সাধারণত শুষ্ক ডালপালায় ঘর্ষণ লেগে আগুন লাগে। একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে দাবানলের আগুন লেগেছে। এতে ২৪ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত। এর আগে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় বারবার দাবানলে পুড়ছে। কারণ ক্যালিফোর্নিয়ার আবহাওয়া শুষ্ক ও উষ্ণ। এতে একটুতেই আগুন লেগে যায়। এতে চলচ্চিত্র নগরী হলিউডেরও বিরাট ক্ষতি হয়েছে। বিলাসীদের অনেক ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরের অপর পাড়ে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ায়ও ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। উত্তর মেরু সংলগ্ন অঞ্চলে আগুন লেগেছে। ইউরোপেও আগুন লাগে বারবার। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ দাবানল থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ যাবত দাবানলের কোনো ঘটনা নেই এ দেশে। তাই সুন্দরবনে আগুন লাগা রহস্যজনক। অস্ট্রেলিয়ার আগুনের ধোঁয়া ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া পার হয়ে বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছিল কয়েক বছর আগে। তার পরও বাংলাদেশে দাবানল সৃষ্টি হয়নি। এর কারণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো শুষ্ক নয় আমাদের বাংলাদেশ। ওইসব দেশের মাটি যেমন শুষ্ক, বাতাসও তেমনি বেয়াড়া। দমকা বাতাস দাবানলের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। ওইসব দেশের শহরের অনেক লোককে সরাতে হয়েছে। কেবল খামারই পোড়েনি, অনেক শহরও পুড়েছে। বিত্তবান মুহূর্তের মধ্যে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ধ্বংসলীলায় চারদিক ছেয়ে গেছে। কিন্তু দরিদ্র বাংলাদেশের দাবানলে কোনো ক্ষতি হয়নি। এ জন্যই সুন্দরবনে আগুন লাগা নিয়ে প্রশ্ন। বারবার আগুনে সুন্দরবন পুড়বে কেন? সুন্দরবন বাংলাদেশের অপূর্ব প্রাকৃতিক সম্পদ। এই বনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণ। এ ছাড়াও এটি বহু বিচিত্র প্রাণী ও উদ্ভিদের বাসস্থান। আগুন বেশি লাগলে বনজসম্পদের সাথে পুরো জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
কিছু দিন আগে আর্জেন্টিনার একটি খবর বেরিয়েছে পত্র-পত্রিকায়। একটি শহরের একাংশ ধসে গেছে। টেলিভিশনে এর ছবি দেখে আঁতকে উঠতে হয়। মানুষ দেখেছে হঠাৎ করে রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘর অনেক নিচের দিকে নেমে গেছে। মাটি দেবে যাওয়া একটি খারাপ লক্ষণ। আল্লাহ তায়ালা অনেক অবাধ্য জাতির খারাপ পরিণতি হিসেবে এসবের উল্লেখ করেছেন পবিত্র কুরআন মাজিদে। অনেক জাতিকে ধুলায়ও মিশিয়ে দিয়েছেন। অনেককে মাটিচাপা দিয়েছেন। অনেক শহর মাটির নিচে দাবিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য আমাদের ভয় করা উচিত তার মহাশাস্তিকে। এটি সাধারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়। অনেক নবীর কথা না শোনায় এমনটি হয়েছে; যার নিদর্শনসমূহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অবস্থিত। আমাদের দেশে বেশ কয়েক বছর আগে দিনাজপুর অঞ্চলে একটি নদী হারিয়ে গিয়েছিল। একদিন সকালে মানুষ দেখল- হঠাৎ করে ওই নদী জেগে উঠেছে। এ থেকে শিক্ষণীয় আছে। বলা নেই, কওয়া নেই; হঠাৎ করে নদী উঠল কোত্থেকে?
সীতাকুণ্ডে প্রাচীন আগ্নেয়গিরি আছে। জাপানের ফুজি পর্বতমালা এমনি একটি মৃত আগ্নেয়গিরি। অপর দিকে, সীতাকুণ্ডের এক হাজার ২০০ ফুট উঁচু চন্দ্রনাথ পাহাড় দর্শনীয় স্থান। আল্লাহ না করুন, যদি এই আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠে, তাহলে মানুষের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। মানুষের হাতে কিছু নেই। সৃষ্টিকর্তার দয়ার উপরে আমাদের নির্ভর করতে হবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো যায়। অন্যথায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে, আমরা মোকাবেলা করতে পারব না।
দাবানল, মাটি দেবে যাওয়া এবং প্রাচীন আগ্নেয়গিরি- এগুলো সাধারণ ব্যাপার নয়। কারণ, প্রাকৃতিক না অতিপ্রাকৃতিক শক্তি এর পেছনে সক্রিয়- তা বলা হয়নি। এ জন্য সতর্কতা প্রয়োজন আমাদের। দিন দিন এগুলোর আশঙ্কা বাড়ছে। তাই যতদূর সম্ভব, প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার একমাত্র রাস্তা আল ইসলামের দিকে ফিরে আসতে হবে। না হয় যেকোনো সময় এসব দুর্যোগের শিকার হতে পারি আমরা। গতানুগতিক দুর্যোগের সাথে এসব দুর্যোগ যোগ হয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এসব মনে রাখতে হবে।



