জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার

বোর্ড চ্যালেঞ্জ ফি কমানো, ফরম ফিলাপের খরচ পুনর্বিবেচনা, নিয়মিত পরীক্ষা আয়োজন, দ্রুত ফল প্রকাশ এবং খাতা মূল্যায়নে মানদণ্ড নির্ণয় করা দরকার। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় দ্রুত, কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাইসুল ইসলাম রিফাত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ দিনের অব্যবস্থাপনা, সেশনজট, ফল প্রকাশে বিলম্ব, খাতা মূল্যায়নে অবহেলা এবং অযৌক্তিক আর্থিক চাপ শিক্ষার্থীদের হতাশা ও ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রথমত, শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা ও ফল প্রকাশে বিলম্বে। নির্ধারিত সময়ের বহু পর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ফল পেতে তিন মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করলে আরো তিন মাসের বেশি সময় লেগে যায়। তা ছাড়া ২০২৫ সালে এসে ২০২৩ সালের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ২০২৪ সালে যে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল তা দিতে হবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এ পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক সময়সূচি পিছিয়ে দেয়, চাকরির সুযোগ নষ্ট করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সাথে এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয়ত, বোর্ড চ্যালেঞ্জ বা পুনর্মূল্যায়ন ফি প্রতি বিষয়ে এক হাজার ২০০ টাকা, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অযৌক্তিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরম ফিলাপেও অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়। এমনকি মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলেও শিক্ষার্থীদের হাজার টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়। অনলাইনে সবকিছু পরিচালনার যুগে খরচ কমার পরিবর্তে বাড়তে থাকা অগ্রহণযোগ্য।

তৃতীয়ত, খাতা মূল্যায়নের মান নিয়েও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। অনেক শিক্ষার্থী সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি চতুর্থ বর্ষের ফলে পাস করেছেন ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। দেখা যায়, একটি কলেজের কোনো বিভাগের ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী অকৃতকার্য হয়েছেন শুধু একটি বিষয়ে। সব বিষয়ে পাস করলেও একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া সন্দেজনক। অনেকের দাবি, শতভাগ পাস করার আত্মবিশ্বাস তবু অকৃতকার্য দেখাচ্ছে, যা পুনর্যাচাই করতে গুনতে হবে এক হাজার ২০০ টাকা। তা ছাড়া তৃতীয় বর্ষের ফলে দেখা যায়, অকৃতকার্য বিষয়ে এক হাজার ২০০ টাকায় পুনর্মূল্যায়নের আবেদনের পর ‘এ প্লাস’ গ্রেড এসেছে। অনেকের ‘এ গ্রেড’ এসেছে। এ রকম অসংখ্য শিক্ষার্থীর প্রমাণ রয়েছে। তাহলে ভুলটা কোথায়? দোষটাইবা কাদের? যদি কর্তৃপক্ষের ভুল হয় তাহলে এত টাকা দিয়ে আবেদন করা শিক্ষার্থীদের ওপর অযথা চাপ নয়? অনেকে টাকার অভাবে পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করতে না পারলে এক বছর পিছিয়ে যান। তাই খাতা দেখায় পেশাদারিত্ব, মনোযোগ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।

এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সংস্কার সময়ের দাবি। বোর্ড চ্যালেঞ্জ ফি কমানো, ফরম ফিলাপের খরচ পুনর্বিবেচনা, নিয়মিত পরীক্ষা আয়োজন, দ্রুত ফল প্রকাশ এবং খাতা মূল্যায়নে মানদণ্ড নির্ণয় করা দরকার। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় দ্রুত, কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ