গণ-অভ্যুত্থানে একই সমতলে দুই শহীদ

কোটা আন্দোলনের প্রথম ও প্রধান শহীদ আবু সাঈদের তার আত্মোৎসর্গের প্রাক্কালে প্রেরণা হিসেবে তাই শহীদ ড. জোহাকে ‘ভীষণ দরকার’ মনে হয়েছিল।

আশ্চর্যজনক মিল খুঁজে পাই উনসত্তরের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক প্রথম শহীদ শিক্ষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (তৎকালীন রিডার) ও প্রক্টর ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা আর ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের প্রথম ও প্রধান শহীদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদের আত্মোৎসর্গের মধ্যে।

পাকিস্তানে স্বৈরশাসকের বিদায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশে বঞ্চনা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রের এ মর্মান্তিক মৃত্যু যেন একই সূত্রে গাঁথা, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ঢাল স্বরূপ দাঁড়িয়ে বুক পেতে নিলেন গুলি, যেমনটি ড. জোহা উত্তাল গণ-অভ্যুত্থানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ক্যাম্পাসের বাইরে আসার সময় ইপিআর ও বালুচ ক্যাপ্টেনের তোপে পড়লে তাদের বলেছিলেন, ‘স্টপ, আই অ্যাম টেকিং ব্যাক দেম টু দ্য ক্যাম্পাস’। স্বৈরশাসক আইয়ুব-মোনায়েম খানের পাকিস্তানি ইপিআর-সেনাবাহিনী তার কথায় কর্ণপাত না করে তাকে শুধু গুলি নয়, লুটিয়ে পড়া শিক্ষাবিদকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারে। প্রকারান্তরে স্বাধীন বাংলাদেশে নন্দিত নরকের বিজিবি পুলিশ বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের কাছে ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাঁড়ানো মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমম্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী, দরিদ্র বয়স্ক বাবা-মা পরিবারের একমাত্র আশা-ভরসার সম্বলকে সরাসরি উপর্যুপরি গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তানি হত্যাকারীরা ড. জোহার লাশ নিজেদের গাড়িতে তুলে নিয়ে রাজশাহীর নগর ভবনে বেশ কিছুক্ষণ ফেলে রাখে, তারপর হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পক্ষান্তরে মুহুর্মুহু গুলিতে আবু সাঈদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সহযোদ্ধা শিক্ষার্থীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান, সেখানে তার প্রাণপ্রদীপ নিভে যায়। সাঈদের ঘাতকদের কার্যকলাপ ও ভূমিকার বিষয়টি বিগত এক বছর ধরে বিচারাধীন।

৫৫ বছরের ব্যবধানে ড. জোহা ও সাঈদের শহীদ হওয়ার দু’টি ঘটনা দেশ কেন্দ্র থেকে বেশ দূরে। রংপুরের ছাত্র আবু সাঈদ রাজশাহীর শিক্ষক ড. জোহার চিন্তা-চেতনা, অন্যায় ও বৈষম্যের প্রতিবাদ প্রতিরোধ প্রশ্নে একই সমতলে ছিলেন। আত্মত্যাগের যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিলেন, সেটি পুরো দেশবাসীর হৃদয় স্পর্শ করেছে। আবু সাঈদ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে আন্দোলনকে বেগবান করতে, ১৬ জুলাই তার নিহত হওয়ার আগের দিন অর্থাৎ- ১৫ জুলাই ২০২৪, ড. জোহাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন- ‘স্যার (মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা)! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিল সবাই তো মরে গেছে। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা।

আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত। (সহপাঠী ও দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে) আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেঁচে আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন। ন্যায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের। (সূত্র : ডেস্ক, কালবেলা- ‘মৃত্যুর আগে লেখা আবু সাঈদের ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল’ সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০২৪)

সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে দেশের জনগণকে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ, ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যু- এ দু’টি হত্যাকাণ্ডে আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে ওঠে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে, সান্ধ্য আইন জারি করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের হামলায় বহু ছাত্র আহত হন। বিক্ষোভের পর ওই দিন সন্ধ্যায় রাবির কলাভবনে বাংলা বিভাগে ছাত্র-শিক্ষকদের যৌথসভায় ড. মাজহারুল ইসলাম, ড. কাজী আবদুল মান্নান, ড. কসিম উদদীন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক হাবিবুর রহমান শেলী, (পরবর্তীকালে প্রধান বিচারপতি ও প্রধান উপদেষ্টা) সফর আলী আকন্দ, ড. আবদুল খালেকসহ ছাত্রনেতা আবু সাঈদ (পরবর্তীকালে অধ্যাপক ও সরকারের তথ্যমন্ত্রী) প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সবার সামনে ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত শার্ট দেখিয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে প্রক্টর ড. জোহা বলেন, ‘আহত ছাত্রদের পবিত্র রক্তের স্পর্শে আমি উজ্জীবিত। এরপর আর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলি হয়, সেই গুলি কোনো ছাত্রের গায়ে লাগার আগে আমার বুকে বিঁধবে।’ কথা রেখেছিলেন তিনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার চেষ্টা করেন। আন্দোলনকারী ছাত্ররা ক্যাম্পাসের বাইরে এসে মিছিল বের করলে অনেক ছাত্রের জীবননাশের আশঙ্কা থাকায় প্রক্টর শামসুজ্জোহা নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সেনাসদস্যদের কাছে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও তিনি ইপিআর আর পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনীর অফিসারদের অনুরোধ করেছিলেন তার ছাত্রদের ওপর গুলি না চালানোর জন্য। বলেছিলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’ অন্যদিকে, ছাত্রদের বোঝাচ্ছিলেন ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং বারবার আশ্বাস দিচ্ছিলেন- ‘আমি বলছি গুলিবর্ষণ হবে না। আর যদি গুলি করা হয় তবে কোনো ছাত্রের গায়ে লাগার আগে তা আমার গায়ে লাগবে।’

সত্যিই তিনি তা-ই করেছিলেন। ছাত্রদের উদ্দেশে চালানো গুলি তিনি নিজ বুকে পেতে নিয়েছিলেন। পাকিস্তানি সামরিক অফিসার বালুচ লে মো খাদেম শাহ ক্ষুব্ধ হয়ে শুধু গুলি করে ক্ষান্ত হয়নি, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল জাতির মহান এই অভিভাবককে।

ড. জোহার লাশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত প্রশ্নে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভিসি মুহম্মদ শামস উল হকের (১৯১১-২০০৬; শিক্ষাবিদ, পরবর্তীকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সাথে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের সহযোগী তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খানের (১৮৯৯-৭১) টেলিফোনে তীব্র বাগি¦তণ্ডা হয়। অবশেষে তার লাশ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এনে সেখানে দাফন করা হয়। প্রসঙ্গত যে, ড. জোহার লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন তৎকালীন রাজশাহীতে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজ উদ্দীন আহমেদ (বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব, ইতিহাসবেত্তা , ২০২২ সালে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত)।

ড. শামসুজ্জোহার জন্ম মে ১, ১৯৩৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায়। বাঁকুড়া জিলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন এবং বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে প্রথম শ্রেণীতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হন। এ সময় ভাষা আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৩ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে স্নাতক সম্পন্ন করার পর তিনি রসায়নবিদ ড. মোকাররম হোসেন খন্দকারের তত্ত¡াবধানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য গবেষণা শুরু করেন। গবেষণার বিষয় ছিল ‘বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে ক্রোমাইট খনিজের জারণ প্রক্রিয়া’ যা পরবর্তীকালে ১৯৫৪ সালে লন্ডনের রসায়ন শিল্প পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ অব সায়েন্স, টেকনোলজিতে অ্যান্ড মেডিসিনে অধ্যয়ন করেন এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৫৫ সালের শেষের দিকে শামসুজ্জোহা পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স কারখানায় সহযোগী কারখানা পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হন। একই বছর ১৪ ডিসেম্বর তিনি যুক্তরাজ্যের সাউথ ওয়েলসে রয়্যাল অর্ডিন্যান্স কারখানায় বিস্ফোরক দ্রব্যের ওপর প্রশিক্ষণ লাভের জন্য যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে ওয়াহ ক্যান্টনমেন্টে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে রয়াল অর্ডিন্যান্স থেকে ইস্তফা নিয়ে জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে এবং একই বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের লেকচারার পদে যোগদান করেন। সেখানে অধ্যাপনাকালে তিনি বৃত্তি নিয়ে পুনরায় লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজে চলে যান। সেখান থেকে পিএইচডি ও ডিআইসি ডিগ্রি লাভ করে ১৯৬৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে পুনরায় অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে তাকে রিডার পদে উন্নীত করা হয়। তিনি ১৯৬৫ সালে শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষক এবং ১৯৬৬ সালে প্রাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন।

উনসত্তরের ১৮ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক শহীদ শামসুজ্জোহাকে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়। জোহার মৃত্যু তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল এবং এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী, যা দেশকে স্বাধীন করতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিল। দেশ স্বাধীনের পর তার অবদানের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাকে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সম্মানে ভূষিত করা হয়। তার মৃত্যুর পরপর তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার নামানুসারে নবনির্মিত আবাসিক হলের নামকরণ করেন ‘শহীদ শামসুজ্জোহা হল’। ড. জোহা যে জায়গাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন সেখানে ভিসি আমানুল্লাহর সময়ে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়।

নাটোরে তার নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ প্রতি বছর জোহা সিম্পোজিয়াম পালন করে থাকে। তার নামানুসারে নির্মিত আবাসিক হল শহীদ শামসুজ্জোহা হলের মূল ফটকের পাশে একটি স্মৃতি স্মারক স্ফুলিঙ্গ নির্মাণ করা হয় ২০১২ সালে। ড. জোহাকে ২০০৮ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক যথার্থই লিখেছেন- ‘ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি একজন শিক্ষকের কতটুকু দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকা উচিত, ড. জোহা জীবন দিয়ে সেটি নির্ধারণ করে গেছেন।’ এ পৃথিবীতে অনেক মহান শিক্ষক শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু নিজ ছাত্রদের রক্ষা করতে ছাত্রদের দিকে আসা গুলি নিজ বুকে পেতে নিয়েছেন- এমন ইতিহাস বিরল। দুঃখজনক হলেও সত্য, জাতীয় আন্দোলনে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করলেও এখনো তার বীরত্বগাঁথা সেই ইতিহাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

প্রতি বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এই দিনটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করে। এছাড়া দেশের শিক্ষকসমাজ জোহার মৃত্যু দিবসকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা করলে শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয় ও আদর্শহীনতার এ যুগে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ সব শিক্ষকের জন্য একজন আদর্শ শিক্ষকের আলোকবর্তিকা হতে পারে। স্মর্তব্য যে, ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি দার্শনিক শিক্ষাবিদ ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন (১৮৮৮-১৯৭৫) জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর সারা ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। যে জাতি বীরের সম্মান দিতে জানে না, সে জাতিতে বীরের জন্ম হবে না। যে শিক্ষক নিজ ছাত্রদের রক্ষা করার জন্য বুকে গুলি পেতে নিয়েছিলেন তিনি কি শুধু গুটিকয়েক ছাত্রের শিক্ষক? না। তিনি পুরো ছাত্রসমাজের শিক্ষক ও অভিভাবক। কোটা আন্দোলনের প্রথম ও প্রধান শহীদ আবু সাঈদের তার আত্মোৎসর্গের প্রাক্কালে প্রেরণা হিসেবে তাই শহীদ ড. জোহাকে ‘ভীষণ দরকার’ মনে হয়েছিল।

লেখক : সাবেক সচিব এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান