অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখার কৌশল

অন্তর্বর্তী সরকারের বিপক্ষে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের এসব বক্তব্য ছোট করে দেখার উপায় নেই। গণ-অভ্যুত্থানের সূচনায় যে সামগ্রিক ঐক্য ও সংহতি অন্তর্বর্তী সরকারকে সমৃদ্ধ করেছিল, আজ তার বিপরীত চিত্র বিদ্যমান। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, সরকার বড় ধরনের আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে। তবে আশার কথা এই যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস এখনো রাজনৈতিক দলের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে আছেন। রাজনৈতিক দলের উত্থিত অনাস্থা ও অবিশ্বাসের প্রতিকারে সরকারপ্রধান কী করতে পারেন অথবা তার পক্ষ থেকে কী করা উচিত- তাও একটি সংবেদনশীল বিষয়। তিনি নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক আদলে সরকারকে পুনর্গঠন করতে পারেন। অথবা বর্তমান সমষ্টিকে নিয়ে দিন পার করতে পারেন- দুটোই তার জন্য উভয় সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। তবে তার বিবেচনার ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে

আস্থা ও বিশ্বাস যেকোনো কর্মক্ষেত্রের ভিত্তি। ছোট বা বড় যেকোনো কাজে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের আলোকেই জীবন গড়ে ওঠে। সে আস্থা ও বিশ্বাস ব্যক্তিনির্ভর হতে পারে, পারিবারিক হতে পারে এমনকি রাষ্ট্রিক পর্যায়ও এ বিশ্বাস ও আস্থার সঙ্কট দৃশ্যমান হতে পারে। বাংলাদেশের জনমনস্তত্ত্ব সম্পর্কে যারা খোঁজখবর রাখেন, অতীত কিংবা বর্তমানে তারা জানেন, বাংলাদেশের মানুষ নৃতাত্ত্বিকভাবেই কিছুটা অস্থির, অবিশ্বাস্য ও কলহপ্রিয়। অতীতের ইবনে বতুতা কিংবা বর্তমানের আকবর আলি খান-সবার সাক্ষ্যই যেন একই ধারার কথা বলে। বর্তমানকালের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রামাণ্য উদাহরণ হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। ব্রিটিশ উত্তরাধিকারের কারণে আমরা সংসদীয় রাজনীতিতে অভ্যস্ত। পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ আমলে একই ধারায় প্রবাহিত হয়েছে আমাদের রাজনীতি। পৃথিবীর তাবৎ সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাস যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যায়, একটি সরকার যখন পরবর্তী নির্বাচন করে তারা নিজেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই বিবেচনা করে। তারা নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি ও আচরণ দ্বারা প্রমাণ করেন, তারা সবার আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করছেন। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। বিজয়ীরাই সবকিছু গ্রহণ করে- এটি বললেই যথেষ্ট হয় না। আইনসভা, আমলাতন্ত্র ও বিচারসভা- সবই তাদের করকমলে স্থাপিত হতে হবে। পাকিস্তান আমলে যারা গণতন্ত্রের জন্য চিৎকার করেছিলেন বাংলাদেশ অর্জিত হওয়ার পর যখন তারা মালিক-মোক্তার হলেন তখন তারাই গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাকশাল ‘এক নেতার এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ কায়েম করলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, এই দলটিই আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, নীলনকশার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। ২০০৯ সাল থেকে যখন তারা রাজত্ব পরিপূর্ণভাবে দখল করে তখন তারা গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার এই যে, এটি তারা করে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে।

১৯৯১ সালে যখন আওয়ামী লীগ আশা করেছিল, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তারাই নির্বাচনে জয়ী হবে তখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে। তখন আওয়ামী নেতৃত্ব ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয়তাবাদী শক্তি ও ইসলামী শক্তির বিভাজনের সুযোগে নির্বাচনে জয়লাভ করে। ২০০১ সালে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী জোটের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ফিরে আসে। যখন আওয়ামী নেতৃত্ব বুঝতে সক্ষম হয়, তত্ত্বাবধায়ক তথা যেকোনো নিরপেক্ষ নির্বাচনে তারা জয়লাভ করতে সক্ষম হবে না, তখন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেয়। পাশ্চাত্যের সহযোগিতায় ও প্রতিবেশীর ষড়যন্ত্রে তথাকথিত সামরিক বাহিনী-সমর্থিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্টের ভাষায়- বস্তা বস্তা ভারতীয় টাকা এবং রণকৌশলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছিল না। এটি ছিল পাতানো, পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রের নির্বাচন। আওয়ামী লীগ যেহেতু জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি, সে কারণে শিগগিরই তারা শীর্ষ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালে। সে সময় তারা লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বানচাল করার প্রয়াস চালায়। তারা দেখাতে চায়, ইয়াজউদ্দিন প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্কটে ভুগছে। নাটকীয়ভাবে ওই সরকারের বশংবদ লোকদের পদত্যাগ করিয়ে খোদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেয়। কৌশলে আওয়ামী লীগ সেনা হস্তক্ষেপের পরিবেশ তৈরি করে। এর পরের নির্বাচনী ইতিহাস সবারই জানা কথা।

২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জন-আকাক্সক্ষায় এবং সংবিধানের সমর্থনে যে সরকারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা জনগণের সরকার। সে সময় সব রাষ্ট্র কর্তৃত্বের ইচ্ছায়- সেনাবাহিনী রাজনৈতিক দল এবং অভ্যুত্থানকারী ছাত্রদের সরাসরি হস্তক্ষেপে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশের সব মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক সম্মানীয় ব্যক্তি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সবাই দল-মত স্বার্থ ও সুবিধা উপেক্ষা করে তাকে দেশ পরিচালনার মহান দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারের প্রাথমিক সময়ে ভ্যানগার্ডের ভ‚মিকা পালন করে। অন্তর্বর্তী সরকারও ছাত্রসমাজকে যথোপযুক্ত সম্মান ও ক্ষমতা দেয়ার চেষ্টা করে।

যেহেতু বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী অস্থির প্রকৃতির, শিগগিরই নানা ধরনের স্বার্থবাদী দল ও গ্রুপ অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দাবিদাওয়ার আন্দোলন শুরু করে। অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণের দিন থেকে মনে হয় না এমন একটি দিন এই সরকার পেয়েছে যা আন্দোলন, সংগ্রাম ও বিক্ষোভ দ্বারা প্রতিপালিত হয়নি। প্রেস ক্লাব থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাড়ি পর্যন্ত সে যেন এক মিছিলের প্লাবন। এখনো প্রতিদিন একেকটি গোষ্ঠী একেক দাবি নিয়ে সরকারকে বিব্রত করছে। এসব শ্রেণিপেশার মানুষের আন্দোলন শেষ হতে না হতেই রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিদাওয়া, আন্দোলন ও চাপপ্রয়োগ সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর এ আন্দোলনকে তিন ভাগ করা যায়। প্রথমত, দেশের সবচেয়ে বৃহৎ দল বিএনপি শিগগিরই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানায়। প্রধান উপদেষ্টা প্রথম দিকে বেশ কিছু সময় দায়িত্বে থাকার অনুভূতি প্রকাশ করলেও পরবর্তীকালে রাজনৈতিক দলগুলোর অসহিষ্ণুতা অনুভব করে নিজেকে গুটিয়ে নেন। তিনি অবশেষে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। দ্বিতীয়ত, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে। তারা একই সাথে রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচনী তাগিদ দেয়। তৃতীয় ধারাটি ছাত্র আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে। তারা জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে জাতীয় সংস্কারকে প্রাধান্য দেয়। তারা মনে করে, একটি নির্দিষ্ট গুণগত পরিবর্তনের এবং যথার্থ সংস্কার সাধিত হওয়ার পর নির্বাচন কাম্য হতে পারে।

বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী স্বৈরাচারের আদেশে কিছু সেনাকর্মকর্তা অমানবিক অপরাধে জড়িয়ে পরে। আন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইব্যুনাল বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আভিযোগ আনা হয়। সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তী সরকারের আদেশ-নিষেধ মান্য করে। সব সেনাকর্মকর্তা বিচারালয়ে হাজির হয়ে আইনের আদেশ মাথা পেতে নেয়। বেসামরিক কর্তৃত্বের কাছে সেনাবাহিনীর নিজেদের সমর্পণ জনগণের আস্থার পরিবেশ তৈরি করবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অনেক সংবেদনশীল বিষয় প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্যে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, কুশলতার সাথে সে সঙ্কট একে একে অন্তর্বর্তী সরকার অতিক্রম করতে সক্ষম হচ্ছে।

অনেকটা আকস্মিকভাবেই প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি বড় ধরনের চাপে ফেলেছে। ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করে তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন থেকে নিরপেক্ষ ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সেই সাথে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ‘দলঘনিষ্ঠদের’ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছে দলটি। সরকার ও বিএনপি সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এই সাক্ষাতে ওই দুটো বিষয় ছাড়াও বিচার বিভাগ, সচিবালয় এবং প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে রদবদলসহ আরো কিছু বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি নেতাদের বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি তার তত্ত্বাবধানে হবে। জেলা প্রশাসক পদে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেয়া হবে। দায়িত্বে নিরপেক্ষ থেকে সেখানে যিনি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম, সেই ব্যক্তিকেই তিনি বেছে নেবেন। বৈঠক সূত্রে আরো জানা গেছে, বিচার বিভাগ ও সচিবালয়কে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের দোসরমুক্ত করা, এর জন্য প্রয়োজনে বিগত সরকারের সময়ে বঞ্চিত সম্প্রতি পদোন্নতি পাওয়া ১১৯ কর্মকর্তার মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া বিএনপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে নির্বাচনের প্রাক্কালে পুলিশের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখা নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি গঠন বন্ধ রাখারও অনুরোধ জানিয়েছেন।

২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে। তারাও বিএনপির মতো এ ধরনের নানা অভিযোগ উত্থাপন করে। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, যারা উপদেষ্টা তাদের ব্যাপারে বলেছি, সবার ব্যাপারে নয়। আমরা বলেছি, কিছু কিছু লোক আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টাকে) বিভ্রান্ত করে। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে; কিন্তু আপনার কিছু লোক আপনার পাশে আপনাকে বিভ্রান্ত করে এবং ওরা কোনো একটা দলের পক্ষে কাজ করে বলে আমরা মনে করি। তাদেরকে তাদের ব্যাপারে আপনাকে হুঁশিয়ার থাকা দরকার। বৈঠকে কোনো উপদেষ্টার অপসারণের দাবি তুলেছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন দৃষ্টি আকর্ষণ করছি... আমরা প্রথম দিন যেয়েই অপসারণ চাইনি। আমরা বলছি, আমরা এখন দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা সময় দিচ্ছি। আপনাকেও শুনতে দিচ্ছি। যদি না হয় তাহলে আমরা যা যা করার, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা চিন্তা করব।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো দাবি তোলা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে এখনো সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হচ্ছে। তার দল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় আছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোনো ব্যত্যয় না হলে অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভ‚মিকা পালন করবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি।

এ দিকে একই ধরনের অভিযোগ করেন এনসিপি নেতা। বড় রাজনৈতিক দলগুলো জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপারের মতো পদ ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গত বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক শেষে তিনি এ দাবি করেন। নাহিদ বলেন, আমরা জেনেছি বিভিন্ন দল প্রশাসনে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। বড় দলগুলো এসপি-ডিসি পদ ভাগবাটোয়ারা করছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হবে। সরকার যাতে নিরপেক্ষভাবে চলে এবং উপদেষ্টা পরিষদের যাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাদের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি। অন্য দিকে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি; বরং তারা ‘কিছু নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দিয়ে ম্যানেজ করে চলছে’।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিপক্ষে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের এসব বক্তব্য ছোট করে দেখার উপায় নেই। গণ-অভ্যুত্থানের সূচনায় যে সামগ্রিক ঐক্য ও সংহতি অন্তর্বর্তী সরকারকে সমৃদ্ধ করেছিল, আজ তার বিপরীত চিত্র বিদ্যমান। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, সরকার বড় ধরনের আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে। তবে আশার কথা এই যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস এখনো রাজনৈতিক দলের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে আছেন। রাজনৈতিক দলের উত্থিত অনাস্থা ও অবিশ্বাসের প্রতিকারে সরকারপ্রধান কী করতে পারেন অথবা তার পক্ষ থেকে কী করা উচিত- তাও একটি সংবেদনশীল বিষয়। তিনি নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক আদলে সরকারকে পুনর্গঠন করতে পারেন। অথবা বর্তমান সমষ্টিকে নিয়ে দিন পার করতে পারেন- দুটোই তার জন্য উভয় সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। তবে তার বিবেচনার ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে।

লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়