দিনাজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ভবেশের মৃত্যুকে সাম্প্রদায়িক হত্যার রঙ লাগিয়ে খবর প্রচার করা হয়। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর ঝড়ের বেগে প্রকাশ করে। বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ কিছু বুঝে ওঠার আগে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এটিকে ইউনূস সরকারের পদ্ধতিগত হিন্দু নিধন বলে বিবৃতি দিয়ে দেয়। যাচাই করে দেখা গেল, ভবেশ স্বাভাবিক মারা গেছেন। হিন্দু নিধনের যে বয়ান ভারত প্রতিষ্ঠা করতে চায় ভুয়া খবর প্রকাশ করে বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম সেই সুযোগ ভারতকে করে দিলো। সাংবাদিকতার আড়াল নিয়ে এই চক্রের অন্য সদস্যরা ভারতের পক্ষ হয়ে বহুবার এমন অপকর্ম করেছে।
ফ্যাক্ট চেক করে দেখা গেল ভবেশকে অপহরণ করে পিটিয়ে হত্যার খবরটি তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে ছিল গুটিকয় সাংবাদিক, যাদের সবার আনুগত্য ও ভালোবাসা এক জায়গায়। এম এ কুদ্দুস নামের এক সাংবাদিক একাই তিনটি সংবাদ রচনা করেন, তিনটি গণমাধ্যমের জন্য। তার খবরে কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য ছিল না।
সংবাদমাধ্যমগুলোও এই স্পর্শকাতর খবর প্রকাশ করতে কোন বিচার বিবেচনার দরকার মনে করেনি- যখন ভারত অব্যাহতভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করছে। এই অজুহাত ব্যবহার করে দেশটি বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। তাদের আচরণেই সেটি স্পষ্ট।
এম এ কুদ্দুস স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। দলটির পক্ষে উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। স্থানীয় আরেক প্রতিনিধি সুবল চন্দ্র রায় একই খবর প্রচার করেন। আজকের কাগজ ও মোহনা টিভির তিনি স্থানীয় প্রতিনিধি। তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে তিনিও ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদেরও সাধারণ সম্পাদক। তাকে উদ্বৃত করে সেই ভুয়া খবর বিবিসিসহ আরো কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রচার করে। সুবল একে নিশ্চিত হত্যাকাণ্ড বলে নিজের সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচার করেন, তিনিও কুদ্দুসের মতো অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের জন্য এ খবরের উৎস হিসেবে কাজ করেন। ডেইলি স্টারের দিনাজপুর প্রতিনিধি কংকন কর্মকার একই খবর তার পত্রিকায় সরবরাহ করেছে। ডেইলি স্টারের খবরটি ভারতীয়দের জন্য ছিল সোনার হরিণ। এমন সার্ভিসই চায় ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার। স্টার গোদি মিডিয়ার বাংলাদেশী সংস্করণ হয়েছে।
যাচাই করে তিনজনের খবরে হুবহু মিল পাওয়া যায়। এটা ছিল একটি সিন্ডিকেটেড রিপোর্ট। বাংলাদেশের মূল ধারার সাংবাদিকতার বড় একটা অংশ দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে। এদের নেতারা গণভবনে দলবেঁধে পতিত হাসিনার কথিত সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিতেন। তেলের ডিব্বা খুলে হাসিনার জন্য ভাসাতেন। তাদের অনুসারীরা সারা দেশে বিশাল এক চক্র গড়ে তুলেছিলেন যারা ফ্যাসিবাদ কায়েম ও রক্ষায় কাজ করে গেছে। এরাই সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে দলবদ্ধ হয়ে আক্রমণ করেছে। হাসিনাকে খুনি বলা যাবে কিনা সেই প্রশ্ন তুলছে।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশা একটি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে তারা পুরো সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বাম-আওয়ামী-ভারতীয়দের এক অশুভ আঁতাত গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে। বাজারে একটি নতুন সংবাদমাধ্যমের আগমন, একজন নতুন সাংবাদিকের অভিষেক এমনকি পদোন্নতিও এরা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের পছন্দের বাইরে কেউ গণমাধ্যম চালাতে পারবে না, সাংবাদিকতা করতে পারবে না। এই একচেটিয়া আধিপত্যের বাইরে যারা আছে তারা অনেকটাই দুর্বল রুগ্ণ।
বিগত চার দশকের সাংবাদিকতার ধরন দেখলে নিশ্চিত করে বলা যাবে, ‘বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম’ জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে। চারদলীয় জোট সরকারের সময় এর নগ্ন আক্রমণ বড় আকারে দৃশ্যমান হয়। বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো ছিল তাদের নিশানা। ভারতও এদেরই শত্রু গণ্য করে। বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিকে কিভাবে মিডিয়া প্রচারণা চালিয়ে কাবু করে ফেলা হয়েছে তার কিছু নজির আমরা দেখব।
২০০৬ সালের ৭ জুন শিশির ভট্টাচার্যের একটি ব্যঙ্গ কার্টুন প্রথম আলোয় লিড হয়। তাতে দেখা যায়, তারেক রহমান হুডখোলা একটি বিএমডবিøউ চালাচ্ছেন। তার ডান পাশে বেগম খালেদা জিয়া। তার বীভৎস চেহারা। ডান দিকে রয়েছে প্রয়াত সাইফুর রহমান। তবে তিনি গাড়িতে নেই। ছিটকে গাড়ির বাইরে পড়ে গেছেন বা ফেলে দেয়া হয়েছে। তারেকের পেছনে অত্যন্ত নিশ্চিন্তে বসে আছেন ইলিয়াস আলী ও নাসির উদ্দিন পিন্টু। গাড়ির আরো পেছনে ইসলামী লোকদের দেখা যাচ্ছে। তারা বিশাল দাঁত বের করে হাসছেন। আরো পেছনে শুধু দাড়ি টুপি দেখা যাচ্ছে। শিশিরের কার্টুন মানে ইসলামী লোকেরা দৈত্য দানব। তারেকের মাথায়ও চড়িয়ে দেয়া হয়েছে একটি টুপি। তার চেহারাও বিদঘুটে। শিশির খালেদা জিয়া ও তারেকের কার্টুন আঁকলে সেখানে ঘৃণা ঠিকরে পড়ে। এর অল্প কিছু দিন পর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত¡াবধায়ক সরকারকে উৎখাত করে মইন-ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে ভারতীয় মদদপুষ্ট একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ইলিয়াস আলী, পিন্টু ও ইসলামিস্টদের সাথে তারেকের গাঁটছড়া একটি অশুভ মৈত্রী হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এই কার্টুনে। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ইসলামিস্টদের নিয়ে শিশির যখনই কার্টুন এঁকেছেন তাতে চরম ঘৃণা ও শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। রাজনৈতিক নেতা, সরকারের প্রধান ব্যক্তিদের নিয়ে আঁকা কার্টুনে সাধারণত তাদের কৃতকর্মের একটা ছাপ থাকে। অর্থাৎ ইতোমধ্যে তারা যে মন্দকর্ম করেছেন সেটাই তুলির আঁচড়ে প্রকাশ পায়। কিন্তু শিশির যখনই এদের নিয়ে কার্টুন এঁকেছেন তাদের দেখানো হয়েছে ভবিষ্যতের জন্য একটি হুমকি হিসেবে। খালেদা জিয়ার সাথে ইসলামী রাজনীতির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে তিনি আরো কয়েকটি কার্টুন আঁকেন। সব কার্টুনে ঘৃণা বিদ্বেষের তীব্র প্রকাশ ছিল।
তারেক রহমানকে কেন্দ্রে রেখে শিশির যে কার্টুন এঁকেছেন ২০০৬ সালের ৭ জুন সেটাই যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাস্তবায়িত হয়েছে। তারেক রহমানের ওপর মইন-ফখরুদ্দীন সরকার নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিল। পিটিয়ে তার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়েছিল। এরপর তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। তারপর ইলিয়াস আলী ও নাসির উদ্দিন পিন্টুদের জীবন আরো নির্দয়তার মাধ্যমে শেষ করা হয়। ওই সরকারের ধারাবাহিকতায় হাসিনা ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে ইলিয়াস আলী গুম হয়ে যান, পিন্টুর জায়গা হয় কারাগারে। পিন্টুও কারাগারের মধ্যেই প্রাণ হারান। কারাগারে পিন্টুকে হত্যা করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ আনা হয়।
শিশিরের কার্টুনে তারেকের সাথে যে ইসলামিস্টদের রাষ্ট্রীয় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল হাসিনা সরকারের আমলে তাদের নিধন করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর পুরো শীর্ষ নেতৃত্বকে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শেষ করে দেয়া হয়। শিশিরের কার্টুনের নিশানা ঠিক ঠিক বাস্তবায়িত হয়েছে। হাসিনা ও পার্শ্ববর্তী দেশের লক্ষ্য উদ্দেশ্য যেখানে একাকার হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে মিডিয়া গভীর অশুভ ভূমিকা রেখেছে। তারা এমন কিছু ঘটিয়েছে যা রাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি ঘটনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। এই ঘৃণ্য হামলায় আওয়ামী লীগের কিছু মানুষ প্রাণ হারালেও এটিকেও ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিপক্ষ নিধন করার জন্য, রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য। চারদলীয় জোট সরকার গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ ঠিকভাবে এগিয়ে নিচ্ছিল। ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগ নিয়ে মিডিয়াকে ব্যবহার করে এর গতিপথ উল্টে দেয়া হলো। এতে নেতৃত্বে দেয় আগের পত্রিকাটি, সাথে ছিল শিশিরের কার্টুন। জনমনস্তত্ত¡কে ঘুরিয়ে দিতে এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। হাসিনার ফ্যাসিবাদ কায়েমে এটিও পাটাতন হিসেবে কাজ করেছে।
এই বিষয়ক শিশিরের কার্টুনে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা একটি মজমা বসিয়েছেন। এদের অনেকটা মাফিয়া চক্রের সদস্যের মতোই দেখাচ্ছে। সেখানে জজ মিয়াকে দেখানো হচ্ছে এক শিশু। সে কোনো কিছুই জানে না। এখনো মায়ের দুধ খায়। তার চেহারা ও চাহনি নিষ্পাপ। কার্টুনের নিচে শিরোনাম করা হয়েছে, ‘জীবনে গ্রেনেড দেখেনি, থানায় কোনো মামলা নেই, সেই জজ মিয়া ‘তারকা সন্ত্রাসী’! প্রধান শিরোনামের পাশে এক কলাম আরেকটি সংবাদ করা হয়েছে, ‘এ গল্পের গাঁথুনি দুর্বল’ স্বীকারোক্তিতে সাত অসঙ্গতি।’
পত্রিকাটির একটি কার্টুন ও সেদিন প্রকাশিত খবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বয়ান ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেয়। এরপর মিডিয়া সিন্ডিকেট গল্প ফাঁদা শুরু করে। সব দায়-দায়িত্ব বিএনপি জামায়াতের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়। অপরাধের কেন্দ্রে থাকা জজ মিয়াকে দেখানো হয় আলাভোলা নির্দোষ মানুষ হিসেবে। সম্প্রতি নির্বাসিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন দীর্ঘ এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে। তিনি দেখিয়েছেন, ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে কিভাবে জজ মিয়াকে নির্দোষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পত্রিকাটির সাজানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জজ মিয়া কোনো দিন গ্রেনেড দেখেনি, তার নামে কোনো মামলা নেই।
ইলিয়াস প্রমাণ তুলে ধরেছেন জজ মিয়া একজন দাগি আসামি। তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধে এর আগে মামলা হয়েছে, সে জেল খেটেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, জজ মিয়াসহ একটি গ্রুপ রয়েছে; তারা বিদেশীদের হয়ে কাজ করে। তাদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদও পৌঁছে দেয়া হয়। সরকারের গোয়েন্দারা বিভিন্ন সময় তাদের শনাক্ত ও আটক করতে সক্ষম হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর জজ মিয়া চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। বাড়তি হিসেবে শিশির কার্টুন এঁকে তাকে নির্দোষ বানিয়ে দিলেন। বাংলাদেশের তাবৎ বাহিনীকে তিনি বানিয়ে দিলেন মাফিয়া। পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা তার কাছে কোনো গুরুত্ব রাখে না।
ইলিয়াসের প্রতিবেদনের পর গ্রেনেড হামলা মামলাটি সম্পূর্ণ এক নতুন পরিস্থিতির মুখে পড়ে। তারেকসহ বিএনপি জামায়াতের লোকেরা খালাস পাওয়ায় প্রথম আলোর প্রতিবেদন ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। তারা যেদিকে মোটিফ ঘুরাতে চেয়েছে সেটা ছিল দুরভিসন্ধিমূলক, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ইলিয়াসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পত্রিকাটির পক্ষ থেকে জজ মিয়াকে ঘুষ দেয়া হয়েছিল। ঘটনার অভিমুখ তাই এখন পুরো পাল্টে গেল। সামনে এসে দাঁড়াল মোড় ঘুরানো ওই প্রতিবেদন কেন পত্রিকাটি রচনা করেছিল সেই প্রশ্ন। বিপুল প্রচারণা চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে যে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছিল তার পুরো সুযোগ তারা নিয়েছে। লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টুসহ একদল লোকের জীবন প্রায় শেষ করে দেয়া হয়েছে এই মামলায়। এখন দেখার বিষয় দলগুলো (বিএনপি, জামায়াত) এই মামলা নিষ্পত্তিতে ভবিষ্যতে কি পদক্ষেপ নেয়। এটাও দেখার বিষয় শত্রুতা পোষণকারী মিডিয়াকে তারা কিভাবে হ্যান্ডেল করে।
বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তারেক রহমান সবচেয়ে বেশি মিডিয়া নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। যেসব অপরাধ তিনি করেননি কিংবা যার সাথে তার দূরতম সম্পর্ক নেই সেসব অপরাধের জন্য মিডিয়া তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। বিদ্যুতের খুঁটি কেলেঙ্কারি, চাঁদাবাজি ও ঘুষের জন্য তার বিরুদ্ধে মিডিয়া নির্জলা মিথ্যাচার করেছে। হাওয়া ভবনকে মিডিয়া বানিয়ে দিয়েছিল দুর্নীতির সূতিকাগার। আওয়ামী লীগ সরকার পনের বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল অথচ তারেকের বিরুদ্ধে একটি অপরাধও প্রমাণ করা যায়নি। তাহলে মিডিয়া তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে তার কী হবে। তারেকের বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়ালেও গ্রেনেড হামলার মোড় ঘুরানো এই পত্রিকাটিই নেতৃত্ব দিয়েছে।
কথাগুলো এ সময় আমরা সামনে রাখছি এজন্য যে, তারেক রহমান মিডিয়ার প্রতি অত্যন্ত উদারনীতি গ্রহণ করেছেন। মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে তিনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। কার্টুনিস্ট মেহেদি হাসান হাসিনা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার দু’দিনের মাথায় তারেক রহমানের একটি কার্টুন আঁকেন। বিদঘুটে ওই কার্টুনে তারেককে একজন মাফিয়া অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। তারেক তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, তিনি মেহেদির ভক্ত এবং শিশিরের কার্টুন উপভোগ করেন।
শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের উদারতা, জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন। কিন্তু সবকিছু উজাড় করে ক্ষমা করে দেয়ার ভয়াবহ বিপদ রয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের দেয়া স্বাধীনতা মিডিয়ার বড় একটি অংশ অপব্যবহার করেছে উদার রাজনৈতিক দল ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে। এদিকে মিডিয়ার দেয়া ভিত্তিহীন যুক্তিতর্ককে হাসিনা কাজে লাগিয়েছেন উদার নেতাদের নিধনে। মেহেদি ও শিশিরের কথাই ধরুন- এরা হাসিনার নিষ্ঠুর শাসনে তুলির একটি আঁচড়ও কাটেনি। শিশির নাকি স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এঁকে খ্যাতি লাভ করেছেন। ধরে নিলাম হাসিনার কার্টুন আকলে তিনি বিপদে পড়তেন কিন্তু তাকে কখনো দেখা গেল না ভারতে সংখ্যালঘু নিধন নিয়ে মোদির একটি কার্টুন আঁকতে। বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ইসলামিস্টদের বিরুদ্ধে মিডিয়া যে অপপ্রচার চালিয়েছে তাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা বলে মাফ করে দিলে বারবার হাসিনাদের ফেরার পথ রচনা করা হবে। অন্যদিকে যারা সব উজাড় করে মিডিয়ার স্বাধীনতা দেবেন তারা নিধন হতে থাকবেন।