গোয়েন্দা কাঠামো পুনর্গঠনে উদাসীনতা

বিচার পাওয়ার জন্য সামরিক বাহিনীর বহু কর্মকর্তা এখনো রাস্তায়। এসব চৌকস অফিসারের বিরুদ্ধে অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ এখনো নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কাঠামোকে ভারতীয় আধিপত্যবাদ অক্টোপাসের মতো কতটা শক্ত করে এখনো আটকে রেখেছে এটা তারই প্রমাণ।

জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা-এনএসআইয়ের সদস্যের পরিচয়ে মুসলিম তরুণীকে বিয়ে করেছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী টিটন বিশ্বাস। শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে অর্থকড়ি নিয়েছেন বেশ ভালো পরিমাণে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য হওয়ায় এলাকায় তিনি দাপটও দেখান। চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে এই সুযোগে পাড়াপড়শি বেকার যুবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন নগদ অর্থ। পরে টের পাওয়া যায় তিনি ভুয়া এনএসআই সদস্য। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ইতোমধ্যে একটি পরিবারের সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। জুলাই বিপ্লবের পরও নিরাপত্তা সংস্থার নড়বড়ে অবস্থার খুব একটা বদল না হওয়ায় এমনটা ঘটতে পারার কারণ।

হাসিনার আমলে বিভিন্ন বাহিনীর নামে এমন প্রতারণার অসংখ্য নজির দেখা গেছে। টিটন বিশ্বাসের মতো সারা দেশে শত শত প্রতারক গজিয়ে ওঠে হাসিনার সময়ে। ফলে একটি শ্রেণীর কাছে বাংলাদেশের বাহিনীগুলো আজ স্রেফ অপকর্মের সাইনবোর্ড ছাড়া কিছু নয়। প্রতারকরা জানে, এ ধরনের অপকর্ম করে অর্থকড়ি কামিয়ে নিরাপদে সটকে পড়া যায়। এই প্রবণতার মূল কারণ বাহিনীগুলোর নিজস্ব দুর্বলতা। এসব বাহিনীর ভেতরেও একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্যদের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল জনগণের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অন্যায় করার। এই অপরাধপ্রবণতা ভাইরাসের মতো বাইরেও ছড়িয়ে গেছে। বাহিনীর সদস্য না হয়ে অন্যরাও এই সুযোগ অবাধে নিয়েছে। দেশের নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্নাম রটিয়ে দুর্বল করে ফেলা হাসিনার পরিকল্পনাই ছিল।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি একটি মাফিয়া চক্রের হাতে পড়েছিল। একমাত্র ক্ষমতায় থাকার খায়েশ পূরণে মাফিয়া রানী সবধরনের মূল্য চুকাতে এমনকি পুরো দেশ দিয়ে দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। যার ফল হয়েছে ভয়াবহ, দেশের সব নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের দখলে চলে যায় এবং প্রতিবেশী দেশের ক্রীড়নকে পরিণত হয়। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হয়ে যায় শত্রুদের আখড়া।

গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের মাফিয়া চক্রের দখলে চলে যাওয়া নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে দৈনিক আমার দেশে। একটি প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গোয়েন্দা সংস্থাটিকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে দেয়া হয়। এটি দেশের সবচেয়ে বড় বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। মূল দায়িত্বে থাকে সামরিক বাহিনী থেকে প্রেষণে আসা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। তারাই প্রতিবেশী দেশের হয়ে এর কার্যক্রমকে জনগণের স্বার্থের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে পরিচালিত করে। নিরাপত্তা দেয়ার বদলে হাসিনার হয়ে তারা দেশেবাসীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত বাস্তবায়ন করে।

২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে এনএসআইয়ের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, প্রতিষ্ঠানটি নিজ দেশের মানুষের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হয়েছে। অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে দেশের নিরাপত্তাকাঠামো ধ্বংসে কাজ করেছে। শত্রুরা এর মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছে। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের নিরাপত্তাকাঠামো বিনা পয়সায় ভারতের স্বার্থে পরিচালিত করা এবং মাফিয়া হাসিনার শাসন স্থায়ীভাবে গেড়ে দেয়া।

এনএসআই বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থায় স্বাধীনতার পর থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর সাথে যুক্ত সামরিক বাহিনীর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের পক্ষে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে, ভারতের যা পছন্দ নয়। বিডিআরের মতো এই প্রতিষ্ঠানটিও তাদের দীর্ঘ দিনের নিশানা ছিল। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময়কালে নীরবে এই প্রতিষ্ঠনটিকেও তারা পঙ্গু করে দিতে পেরেছে। প্রথমে দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের পদচ্যুতি বা ছাঁটাই করে দেয়া হয়। তার জায়গায় নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিবেশীদের স্বার্থ রক্ষা করবে এমন লোকদের। এ জন্য প্রথমে এর শীর্ষে বসানো হয় সামরিক বাহিনীর বাছাই করা বিশ্বাসঘাতকদের। বিদেশী রাষ্ট্র, সংস্থা ও ব্যক্তির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় প্রতিবেদন দেয়া ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া এবং নিতে সহযোগিতা করা এনএসআইয়ের কাজ। ২০০৯ সালের পর নতুনভাবে সজ্জিত এনএসআই খুঁজে খুঁজে বের করেছে কোন প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা হাসিনার শাসন ও ভারতের জন্য হুমকি, কোন ব্যক্তির কার্যক্রম হাসিনা ও ভারতের অনুকূলে নয়। বেছে বেছে তারা এই প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নিশানা করেছে। এরপর একে একে গণতন্ত্রের ভিত্তি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধসিয়ে দেয়, দেশপ্রেমিক লোকদের হত্যা, গুম করে অপমানিত লাঞ্ছিত করে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীতে পরিণত করে। হাসিনার শাসনে জনগণের অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ডও সোজা থাকেনি। বিচার বিভাগ ছিল এদের অন্যতম শিকার। প্রধান বিচারপতিকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য এনএসআইয়ের কর্মকর্তারা তার পেছনে বিদেশেও ধাওয়া করে। বিচার বিভাগ শেষ পর্যন্ত হাসিনার এক রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়। তার ইচ্ছাই আদালতের রায় হয়ে জনগণের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় মূল প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি কার্যকারিতা হারায়। এ দিকে এনএসআই প্রধান গড়ে তোলেন চোরাচালান সিন্ডিকেট। এ জন্য তিনি এনএসআইয়ের নেটওয়ার্ক কাজে লাগান। বিমানবন্দরের ভিআইপি সুযোগ ব্যবহার করে তিনি হয়ে যান স্বর্ণ চোরাচালানের হোতা। আমার দেশের প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত এনএসআইকে জাতীয় নিরাপত্তা ধ্বংসে এভাবে ব্যবহার করা হয়।

হাসিনার মাফিয়া চক্রের শীর্ষ সদস্যরা প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের পারিবারিক সদস্যদের পুনর্বাসন কেন্দ্র বানান। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই হাসিনা কাজটি শুরু করেন। এই সময় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়। যোগ্যতা সন্তোষজনক না থাকায় পরবর্তী সরকার তাদের মধ্যে ১৩ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়। উচ্চ আদালতে চাকরি রক্ষার আবেদন করেন তারা। আদালত তাদের আবেদন নাকচ করে দেন। এরপর প্রধান বিচারপতির কাছে রিভিউ পিটিশন করলে তা-ও খারিজ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই হাসিনা এক প্রশাসনিক আদেশে তাদের সবাইকে চাকরি ফেরত দেন। ভূতাপেক্ষ নিয়োগ দেখিয়ে তাদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেন। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে হাসিনার মাফিয়া চক্রের যারা যখন চেয়েছেন ইচ্ছেমতো নিয়োগ দিয়েছে।

এনএসআইয়ের ডিজি, হাসিনার প্রিয় সামরিক বাহিনীর প্রধান আজিজ ও শফিউর, তার এক নির্বাচন কমিশনার এই ধরনের শীর্ষ মাফিয়া সদস্যরা তাদের নিকটাত্মীয়দের প্রতিষ্ঠানটিতে যখন যাদের ইচ্ছা হরেদরে নিয়োগ দিয়েছে। এই সময় সামান্য নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। বিকেলের পরীক্ষা সকালে দিয়ে কিংবা পরীক্ষা না দিয়েও চাকরি বাগিয়ে নিয়েছে। স্ত্রীকে নিয়োগ দেয়ার পর তার স্বামীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাফিয়া চক্রের এক প্রভাবশালী একাই তার ১০০ আত্মীয়স্বজনকে এতে নিয়োগ দেন। অর্থাৎ জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটিকে তারা অযোগ্য, অমেধাবী, বেকার আত্মীয়স্বজনদের এক ডাম্পিং গ্রাউন্ড বানিয়ে নিয়েছিলেন। আমার দেশের প্রতিবেদনে এ ধরনের শত শত অবৈধ নিয়োগ পাওয়ার তালিকা দিয়েছে। এই অযোগ্যদের পদায়ন করা হয়েছে আবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। যোগ্যতার চেয়ে দলীয় সদস্য এবং ভারতের প্রতি অনুগত কি না সেটি গুরুত্ব পেয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার জন্য যোগ্যতার কার্ড বিতরণ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় এবং অবিশ্বাস্য হলেও ভারতীয় হাইকমিশনে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নয়, চাকরির যোগ্যতা যাচাই করেছে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং ভারতীয় হাইকমিশন। দেশ এবং দেশের নিরাপত্তা এদের কাছে কচুপাতার ওপর টলটলায়মান পানি।

দেশের আরেকটি অন্যতম প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকে হাসিনা ও ভারত মিলে প্রায় খেয়ে হজম করে ফেলেছিল। ভারতের নিশানা হচ্ছে বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিঃশেষ করে দেয়া, হাসিনার লক্ষ্য ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা। দুটো চাওয়া এক মোহনায় মিলিত হয়ে দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। আমার দেশ এর আগে খবর দিয়েছিল গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের কার্যালয়ের ভেতরে একটি ফ্লোর বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জন্য। বাংলাদেশের জনগণের জন্য প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তাকাঠামো একপ্রকার ভারতের দখলে চলে গিয়েছিল। মোটকথা আমাদের নিরাপত্তা টুল তাদের হাতে। হাসিনার শাসনে তাই আমরা নিজেদের ঘরে ছিলাম পরবাসী। আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী নিজেদের নিরাপত্তা ধ্বংস করেছে।

ডিজিএফআইয়ের কাজ দেশের সামরিক নিরাপত্তার জন্য যেকোনো হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা। সীমান্তে থাকা দুটো দেশ ভারত ও মিয়ানমার সরাসরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শত্রুতা প্রদর্শন করছে। সাধারণ কোনো শত্রুতা নয়, তারা চরম বৈরিতা দেখাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভারত সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা করছে, মাদক পাচার করে সয়লাব করে দিচ্ছে, এখন শুরু করেছে পুশইন। এ দিকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ধাপে ধাপে গণহত্যা চালিয়ে দেশটি থেকে নির্মূল করে বাকিদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তারা বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। সমুদ্রসীমায় প্রায়ই অযাচিত শক্তি প্রদর্শন করে। এ দুটো দেশের বিরুদ্ধে বিগত দেড় যুগে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কার্যকর কোনো প্রতিরোধ প্রস্তুতি নেয়নি। দেশ দুটো বাংলাদেশ থেকে কার্যকর বাধা পেলে শত্রুতা চরিতার্থ করার এমন অবাধ সুযোগ পেত না। মোটা আজিজ একবার বলেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলবে। নির্মম নির্যাতনের শিকার বাড়িঘরহারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তার চড়া গলা; কিন্তু অপরাধী শত্রু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার কোনো বক্তব্য নেই। প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাদের নানা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের আলামত এই সময়ে পাওয়া যায়। হাসিনার সময়ে বাংলাদেশের ভেতরে তারা বহু অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব ব্যাপারে শুধু মোটা আজিজ নয় ঊর্ধ্বতন সেনা কর্তৃপক্ষ ছিল নীরব।

সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করবে ডিজিএফআই। হাসিনার পুরো সময়ে গোয়েন্দা ব্যর্থতায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা তছনছ হয়ে যায়। সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্য দানবীয় চরিত্র নিয়ে হাজির হয়। তারা নিজ দেশের মানুষকে পাখির মতো হত্যা করেছে। তাদের দাপটে শুধু দেশের মানুষ নয়, নিজ বাহিনীর লোকেরা তটস্থ থেকেছে। তারা নিজের সহকর্মীদেরও হত্যা, গুম ও বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। এরাই গুপ্ত কারাগার আয়নাঘর সৃষ্টি করেছে। নিজেদের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ দূরে থাক তারা নিজের ভাইদের রক্ষায়ও সামান্য তথ্য সরবরাহ করেনি। বিমানবাহিনীর ভেতর পাশের দেশের চর পাওয়া গেছে।

নিরাপত্তাবাহিনীর সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল পিলখানায় তাদের ৫৭ জন কর্মকর্তা হত্যা। বিশ্বের ইতিহাসে এতবড় গোয়েন্দা ব্যর্থতার কোনো নজির নেই। প্রথমত দেশের ডজনখানেক গোয়েন্দা সংস্থার কেউ সেই সময় এই বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিতে পারেনি। এরপর শুরু হয় এক ভ্রাতৃঘাতী দীর্ঘ রক্তাক্ত ও লাঞ্ছনার ইতিহাস। কিভাবে নিজেদের ভাইদের দিয়ে ভাইদের হত্যা, গুম ও চরম অপমান করতে হয় তার প্রদর্শনী বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে প্রদর্শিত হয়েছে।

দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা চৌকস কর্মকর্তা কর্নেল গুলজারকে করুণভাবে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে ঘাতকরা তার ওপর নির্দয় নির্যাতন চালায়। হত্যা করে তার চেহারাকেও বিকৃত করে দেয়া হয়। হত্যার শিকার বেশির ভাগ অফিসারের বিরুদ্ধে বীভৎসতা চালানো হয়। এরা ছিল সামরিক বাহিনীতে সবচেয়ে যোগ্য, দক্ষ ও কর্মঠ। গুলজার জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা মীর্যা আযমের দুলাভাই জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমানকে তিনি শায়েস্তা করেছিলেন। বাংলাভাইসহ সেই সময়ে অরাজকতা চালানো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কার্যকর অভিযান তিনি চালান। তাদের সফল অভিযানের পর দেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ড স্তিমিত হয়ে যায়।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে আরো কয়েক শত বিডিআর সদস্য হত্যা করা হয়। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্য থেকে যারাই এর প্রতিবাদ করতে চেয়েছে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে চেয়েছে সবাইকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছে। এমনকি যারা ঘটনার নীরব সাক্ষী কিংবা গোপনীয় কোনো বিষয়ের জেনে গেছে তাদেরও নিঃশেষ করে দেয়া হয়েছে। পুরো সামরিক কাঠামোকে একটি হত্যাযজ্ঞ দিয়ে কয়েক দশকের জন্য প্রায় নিস্তেজ করে দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে আমাদের গোয়েন্দা কাঠামোকেও ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দুর্বল হয়ে যাওয়া আমাদের বাহিনীর মধ্যে এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর জোর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বিচার পাওয়ার জন্য সামরিক বাহিনীর বহু কর্মকর্তা এখনো রাস্তায়। এসব চৌকস অফিসারের বিরুদ্ধে অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ এখনো নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কাঠামোকে ভারতীয় আধিপত্যবাদ অক্টোপাসের মতো কতটা শক্ত করে এখনো আটকে রেখেছে এটা তারই প্রমাণ।